৩৬৫ দিন। স্থানীয় মানুষকে জমির পাট্টা দেওয়া থেকে শুরু করে ঝাড়গ্রাম জেলার সার্বিক উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এদিন ঝাড়গ্রামে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কালিপদ সোরেনকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মঞ্চ থেকে আড়াই লক্ষের বেশি মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় শাসকদলের ভাগাভাগির চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন,
১. আজকে প্রায় 900 জনকে জমির পাট্টা দেওয়া হল এই জেলায়। ডিসেম্বর জানুয়ারি মিলিয়ে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর মিলিয়ে আমরা ২ লক্ষ ৩ হাজার জমির পাট্টা দিয়েছি। জমির পাট্টা নিয়ে খড়্গপুরে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমস্যার সমাধান আমরা করে দিয়েছি। খাস মহলে জমির পাট্টা পেয়ে নিজস্ব অধিকার ফিরে পেয়েছে সবাই।
2. এই জেলায় আড়াই লক্ষ মানুষের বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছি। আর এক বছরের মধ্যে এই জেলায় প্রত্যেকের বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে। এই জেলায় ইতিমধ্যেই এক লক্ষ চার হাজার মানুষের বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
3. তিনটে মাল্টি সুপার হাসপাতাল হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে ঝাড়গ্রামে। নতুন কলেজ, পলিটেকনিক, কৃষাণ মান্ডি হয়েছে। ঝাড়গ্রামে আরচারী একাডেমী হয়েছে।
4. ঝাড়গ্রাম কালিম্পং এ আরও দুটি আদিবাসী ভবন হবে। জায়গা চিহ্নিতকরণ করা হবে। কলকাতা ইতিমধ্যেই দুটি আদিবাসী ভবন হয়েছে।
5. রাজ্যজুড়ে মোট কাস্ট সার্টিফিকেট ১ কোটি ৬২ লক্ষের ওপর দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বিএলআরও কিছু দুষ্টুমি করে গেছে, অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান, নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিন লক্ষের ওপর মানুষকে এক হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়া হয় এই জেলায়। ১০৯৬ কোটি টাকার ওপর ব্যয় হয়। বিডিওরা এলাকায় এলাকায় যান। ল্যাম্পের কাজগুলো ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেগুলো খতিয়ে দেখুন। আমি পরে কমিটি করে দেব।
6. আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২৪১ টি আশ্রম হোস্টেল তৈরি করেছি। আগে হোস্টেলের খাবার খরচ ১০০০ টাকা দেওয়া হত। এখন থেকে এটা বাড়িয়ে ১৮০০ টাকা করা হলো। প্রতিবছর জি পরীক্ষায় এবং নিট পরীক্ষায় ২০০০ ছাত্র-ছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
7. সারি ও সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা দিল্লিকে বারবার বলছি। যদি না দেয় তাহলে বড় আন্দোলন করা হবে। এই আন্দোলনে আমি আদিবাসীদের সকলকে পাশে চাই।
8. নির্বাচন এলে দিল্লির বাবুরা কিছু গরিব লোককে লুকিয়ে লুকিয়ে উজালা দিচ্ছে। এবারে যদি ওরা জিতে যায় তাহলে ১৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা পর্যন্ত করে দিতে পারে। না পাওয়া যাবে কেরোসিন, না পাওয়া যাবে গ্যাস, আবার সেই ঘুটে, গুল দিতে হবে। আমাদের বাংলাকে ওরা ভালোবাসে না। আদিবাসীদের ভালবাসে না। আধার কার্ড কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল? সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফোস করলাম। আধার কার্ড কেড়ে নিলে আমি পালটা করে দেব। মনে রাখবেন এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একটা লোকের অধিকারও কাড়তে দেব না। নির্বাচন আসবে ওরা ক্যা ক্যা করবে, পাঁচ বছর তাকে বিদেশি হয়ে যেতে হবে। নাগরিক না হলে রেশন পাচ্ছে কোত্থেকে? নাগরিক না থাকলে সে স্কুলের অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে কোত্থেকে? এনআরসির নাম করে মানুষকে বাতিল করে দাও। ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাও, মানুষকে তাড়িয়ে দাও। একটা মানুষকে আমরা তাড়াতে দেব না, এটা মাথায় রাখবেন। সব ধর্ম আমার কাছে প্রিয়, সবাই এক থাকবে এটাই আমরা চাই।
9. আজকেও ঝাড়গ্রামে আড়াই লক্ষ মানুষের কাছে কোনো না কোনো পরিষেবা পৌঁছে গেল। আমরা ১০০ দিনের কাজের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের একাউন্টে পৌঁছে দিয়েছি। খুব বড় কাজ। অনেকে বলে দিদি আমার তো বাড়িটা হলো না! এপ্রিল মাসের মধ্যে আপনাকে কাজটা করতে হবে। যদি না করে মে মাস থেকে আমরা বুঝে নেব। আমরাও ফেস বাই ফেস দেখে নেব, কী করা হয়, যাতে গরিব মানুষ বঞ্চিত না হয়।
10. আজকেও ২৮৬ টি উদ্বাস্তু কলোনিকে, আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। ১২৪টি পরিবারকে কলকাতায় পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে উপকৃত হয়েছে 58 হাজার পরিবার যারা ফ্রি হোল্ড পেয়েছেন। আমরা আদিবাসী স্কুল গুলোতে আরো ৯২ জন প্যারা টিচার নিয়োগ করছি। ঝাড়গ্রাম জেলায় বিদ্যুৎ দপ্তরের কোন রিজিওনাল অফিস ছিল না, আমরা অফিস স্থাপন করছি। কৃষক স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ২৫ হাজার টাকা করে রিভলভিং ফান্ড দিচ্ছি। বার্ধক্য ভাতা পেতেন কেন্দ্রীয় সরকার সেটা বন্ধ করে দিয়েছে আমরা আগের মাসে আরো ১১ লক্ষ বার্ধক্য ভাতা দিয়েছি।
11. ইন্দ্রনীল এখানে আছে, আমি পর্যটন সার্কিট করতে বলেছি। এই পর্যটন সার্কিট ঝাড়গ্রাম হয়ে একেবারে চলে যাবে অযোধ্যা পাহাড় পর্যন্ত। আমি জানি মাঝেমধ্যেই হাতি বেরিয়ে পড়ে। খুব সমস্যা হয় মানুষের। হাতিকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু হাতি মানুষ মারলে, মানুষের কান্না ওদের কানে যায় না। মানুষ যদি ভুল করে একটা হাতির গায়ে হাত দিয়ে ফেলে শোরগোল তৈরি হয়ে যায়। হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বনের ফেন্সিং ভালো করেই যেন করা হয়। আমাদের সমস্যা হচ্ছে ঝাড়খন্ড থেকে হাতি চলে আসে। নেপালে অনেক সময় বন্যপ্রাণ হত্যা করে ফেলা হয়, আমরা এটা করিনা। অনেক রক্ত ঝরেছে ঝাড়গ্রামে। এখন উন্নয়নের পালা।