Last Updated on March 17, 2022 11:35 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। অবাক সিপিএম, অবাক করলো আবার! একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কমিউনিজমের ইতিহাসে প্রথমবার সিপিএম (CPIM) নেতারা ফুরফুরা শরীফের ছুটে গিয়েছিলেন ভাইজানের হাত ধরে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে স্রেফ নেই হয়ে গিয়েছে সিপিএম তথা সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার হতবাক করে দিলেন আলিমুদ্দিনের দেবতারা। যে কমিউনিস্টরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেন, তারাই ফুরফুরা শরীফের ভাইজানের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লেজুড় হয়ে ভোটের ময়দানে নামায় বাংলার এখনো পর্যন্ত অবশিষ্ট গুটিকয়েক সিপিএম সমর্থকরাও ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন নিজেদের প্রার্থীদের। ফুরফুরার পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দল আইএসএফ-এর সঙ্গে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের জোট বাঁধার ব্যাপারেও সামনের সারিতে ছিলেন সেলিম। আর এই বাম ভাইজান জোটের প্রবক্তা তথা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের শোচনীয় পরাজয়ের মহানায়ক মোহাম্মদ সেলিম (Md Salim) আজ দায়িত্ব পেলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে। যিনি বিগত ২০১৯ লোকসভা এবং ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে গো-হারা হেরে গিয়ে ভোটের রাজনীতিতে পরাজয়ের হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিজেই।
ছাঁটাই তৃণমূল স্তরের সিপিএম নেতারা
দেহ ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত কমিউনিস্টরা পদত্যাগ করেন না বলে যে প্রবচন চালু রয়েছে, তা মিথ্যে প্রমাণ করার তাগিদে আজ সিপিএমের নয়া যে রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ছেঁটে ফেলা হয়েছে দলের তৃণমূল স্তরের নেতাদের। আলিমুদ্দিনের বৃদ্ধাবাস থেকে বিমান বসু এবং সূর্যকান্ত মিশ্র ছেঁটে ফেলা নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলেও দীর্ঘকাল ধরে দলের নাড়ি নক্ষত্র চেনা রবীন দেব এবং বাংলায় কৃষক আন্দোলন করে সিপিএমকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া মদন ঘোষের মতো নেতাদের ছেঁটে ফেলায় আলিমুদ্দিনের দেবতারা কতটা নিশ্চিন্ত হলেন তা জানা না থাকলেও, শাসক দল তৃণমূল অথবা সিপিএমের ট্রান্সফার করা ভোটে বাংলার প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়া ভাজপা যে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যেতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ের লেশমাত্র রইল না।
বাম রাম তত্ত্বে সীলমোহর আলিমুদ্দিনের
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে যে রমা বিশ্বাস বাংলায় ভাজপা সঙ্গে গোপন আঁতাত করে সিপিএমের ভোট ভাজপা ভোটব্যাংকে ট্রানস্ফার করেছিলেন, বহাল তবিয়তে নয়া রাজ্য কমিটিতে রয়ে গিয়েছেন সেই রমা বিশ্বাস। রমা বিশ্বাসের পথে হেঁটেই যে জীবের সরকার উত্তরবঙ্গে সিপিএমের লাল দুর্গ ভেঙে সিপিএমের ভোট ভাজপাকে গিফট করেছিলেন, তাঁর জায়গাও অবিচল নয়া রাজ্য কমিটিতে। অর্থাৎ সীতারাম ইয়েচুরি অথবা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ড্রাফ্ট রিপোর্টে যাই বলা হোক না কেন, বাংলার সিপিএম যে ভাজপার সঙ্গে গোপন আঁতাত করেই নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখবে, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাও।
রাজ্য কমিটিতে টুম্পা সোনাদের দাপট
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ব্রিগেড সমাবেশ করার সময় একদিকে যেমন জামাই আদর করে ফুরফুরা শরীফের ভাইজানকে মঞ্চে তুলেছিলেন সেলিম, থেকে তেমনভাবে বাংলার বাম রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবার ব্রিগেডের লোক টানার জন্য সিপিএম থিম সং বানিয়েছিল টুম্পা সোনা। টুম্পা সোনা যে শুধুমাত্র লোক টানার জন্য নয়, বরং কমিউনিজমের নীতি-আদর্শ ভুলে টুম্পা সোনাকে আলিমুদ্দিনের দেবতারা বাংলায় বাম রাজনীতির নবজাগরণের সূচক বলে মনে করছেন, তার প্রমাণ মিলেছে আজ নয়া রাজ্য কমিটিতে একের পর এক নির্বাচনে হেরে ফেসবুক আর টুইটারে টুম্পা সোনার জল করা শতরূপ ও মীনাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তি।
নতুন রাজ্য কমিটিতে আনা হয়েছে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কান্ডের কলঙ্কিত নায়ক সুশান্ত ঘোষ, শতরূপ ঘোষ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মধুজা সেন রায়, গার্গী চট্টোপাধ্যায়, অনাদি সাউ, দেবলীনা হেমব্রম, কনীনিকা ঘোষকে ।একটি আসন ফাঁকা রেখে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে ৭৯ সদস্য সামিল করা হয়েছে।