Last Updated on September 13, 2022 10:27 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। সামনেই একটি গ্রামোফোন। তবে, ভগ্ন। তারপরই, একটি বৃহদাকার রেডিও। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর ক্যাসেট, টেপ রেকর্ডার। বাজছে স্বর্ণদিনের গান। পাশেই, একটি কাল্পনিক থিয়েটারের স্টেজ। আর, সেখানেই নানা চরিত্রের মাঝে অধিষ্ঠান করছেন দেবী। হারিয়ে যাওয়া সেই সময় এবং গানের সরঞ্জাম দিয়ে অস্তিত্বের দলিলকে মনে করাতে চলেছে আহেরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এবারের থিম আকাশ-বাণী। সমগ্র থিমের ভাবনায় রয়েছেন শিল্পী দেবজ্যোতি জানা।

তিনি জানান, কিছু কাল আগে পর্যন্ত, পুজো মানে নতুন জামা কাপড়ের সঙ্গে ছিল পুজোর গান। পুজোর অ্যালবাম। পঞ্চাশ থেকে আশির দশকে বাঙালি পুজোর গানে মজে থাকত। পুজোর গানের রেকর্ড কেনার জন্য দোকানে দোকানে লাইন পড়ে যেত। রেকর্ড প্লেয়ারে সেই গান বাজত ঘরে ঘরে। বাজত পাড়ায় পাড়ায় নানান অনুষ্ঠানে। এখন সেই উন্মাদনা আর নেই। প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। এছাড়াও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে থিম সং।

ফলে, থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মণ্ডপে মণ্ডপে বাজছে থিমের গান। নতুন গানের অমোঘ আকর্ষণ এখন ম্লান হয়েছে। এই নিয়ে শিল্পী আরও জানিয়ে বলেন, এখন মানুষের স্বাদ বদলেছে। বদলেছে সমাজের ভাবধারা, চিন্তাভাবনা। তৈরী হচ্ছে সুর। আসছে কথার আড়ম্বর। আজও তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু ভালো গান। তবে, তা বড় ক্ষণস্থায়ী। মহালয়া এখন চাইলেই যখন খুশি শুনে নেওয়া যায়। কিন্তু, ভোর ৪ টের আকাশবাণীর সেই মহালয়া শোনার আবেগটা হারিয়ে গিয়েছে কোথাও। কিন্তু, কিভাবে দেখানো হবে গোটা মণ্ডপ? শিল্পী বলেন, শুরুতেই থাকছে ৩০ ফুটের একটা গ্রামোফোন।

সঙ্গীতের সাতটি সুরকে এখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মণ্ডপের আশেপাশের বাড়িগুলোতে প্যান্ডেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যেগুলোকে সাতটা সুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। প্রতিমা গড়ছেন পিন্টু সিকদার। পুজো প্রসঙ্গে পুজো কমিটির এক সদস্য জানান, রেল লাইনের ধারে কাশ ফুলের দোলা, বাগানে শিউলির কুঁড়ি মানেই পুজো আর বেশি দূরে নেই৷ শরতের আলোর বাঁশি বেজে উঠলেই আশির দশক অব্দি একেবারে নতুন পুজোর গানের অপেক্ষায় থাকতাম সকলে। অনুরোধের আসর এর মাধ্যমে শ্রোতার কাছে পৌঁছে যেত কালজয়ী সব গান৷ যা সহজেই জনপ্রিয় হয়ে উঠত৷ তিনি যোগ করে বলেন, পুজোর গানের বই কেনার জন্য হুড়োহুড়ি কম কিছু ছিল না। শারদ-অর্ঘ্যের ভিতরে প্রতি পাতায় থাকত দুটি করে গান, সঙ্গে শিল্পীর ছবি।
সে সময় শারদ-অর্ঘ্যের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এখনও পুজোর গান বেরোয়। তবে পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত পুজোর গানের যে উন্মাদনা ছিল, তা এখন আর নেই। সকলের গ্রামোফোন কেনার ক্ষমতা ছিল না। তবে, কান থাকত আকাশবাণী আর পুজো প্যান্ডেলের মাইকে। এহেন টান অনুভব করা হয়তো এ যুগের ছেলেমেয়েদের সম্ভব না। পুজো প্যান্ডেলে পুজোর গান বাজছে এখন সেসব ধূসর স্মৃতি। কারণ, উমা আরাধনা এখন বিশ্বজনীন। সেই সঙ্গে থিমের ছোঁয়া। অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও মাস্ক, স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক থাকছে মণ্ডপে। করোনা বিধি মেনেই করা হবে পুজো।