৩৬৫ দিন। একটা বড় থান! সেখানেই থরে থরে সাজানো নৈবেদ্য। চারিদিকে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। চলছে দেবী আরাধনা, চলছে মাতৃত্বের উদযাপন। প্রতিমাতেই প্রতি-মা। অর্থাৎ, প্রতি-মা এর মধ্যেই রয়েছে প্রতিমা। এই ধারণাকেই এবার ফুটিয়ে তুলছে কেষ্টপুর প্রফুল্ল কানন অধিবাসীবৃন্দ। এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির সম্পাদক রঞ্জিতবাবু জানান, কুমারী পুজোর ধারণা থেকে, একজন নারীর মা হওয়ার পর্ব। এই বিষয়টির বিভিন্ন পর্যায়কে তুলে ধরা হবে এবার।
২০ তম বর্ষ পদার্পণ করল এই পুজো। আরও বিশদে বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে শিল্পী দীপাঞ্জন দে জানান, দেবী আরাধনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ন অংশগ্রহণকারী হলেন মায়েরা। দুর্গাপুজোর মধ্যে কুমারী পুজোর একটি অধ্যায় রয়েছে। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, যেখানে কোন কন্যাকে দেবী রূপে পূজিত করা হয়ে থাকে। শিশুর মধ্যে দেবীর উপস্থাপনা করে দেবী জ্ঞানে পুজো করা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে বয়স এবং বয়স সন্ধি নিয়ে রয়েছে দ্বিচারিতা, রয়েছে নানা কুসংস্কার। মা ছাড়া সমাজ অচল। সেই মা কুমারী অবস্থায় পূজিত হচ্ছে।

আর, সমাজের সেই অংশকেই নিয়েই আমাদের মধ্যে এখনও রয়ে গিয়েছে সংকীর্ণতা। যে প্রতিমাকে পুজো করা হচ্ছে সেই প্রতিমা রয়েছে প্রতিটি মায়ের মধ্যেই। সেখান থেকেই প্রতিমাতেই প্রতি-মা। মূলত পরিবেশ বান্ধব এবং পুজোর উপচারে লাগা উপকরণ ব্যবহার করেই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী নবকুমার পাল। সাবেকি ধাঁচে কিন্তু সামঞ্জস্য রেখেই হচ্ছে মূর্তি। আবহ সৃষ্টি করেছেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত এবং দীপাবলি রুদ্র দত্ত।
তবে, বিশ্ব থেকে এখনো বিদায় নেয়নি করোনা। তাই, সেই বিষয়টিকেও মাথায় রাখা হচ্ছে। পুজো কমিটির সম্পাদক জানান, এবারও খোলামেলা মণ্ডপ। এছাড়াও, মাস্ক, স্যানিটাইজার থাকছে। আপদকালীন পরিস্থিতির জন্যে থাকবে অক্সিজেন ব্যাক আপ, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি। সরকারের দেওয়া সমস্ত গাইডলাইন মেনেই করা হবে পুজো।

প্রসঙ্গত, গত বছর সর্বহারাদের কাহিনী, ধ্বংসলীলা দেখানো হয় পুজোয়।ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সুন্দরবন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সর্বশ্রান্ত হয় একশ্রেণী। সেই ভয়াল চিত্র এবং মানুষের দুর্দশার পরিস্থিতিকেই দেখানো হয় কেষ্টপুর প্রফুল্ল কানন অধিবাসীবৃন্দ। দেখানো হবে মৎস্যজীবীদের ঘর, পরিবার এবং জীবনযাপন। মানবিক উদারহন হিসেবে ছিল সনু সুদের মূর্তি।
এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির সম্পাদক রঞ্জিতবাবু জানান, ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবনের এলাকা থেকে মৎস্যজীবী এবং তাঁদের কঠিন জীবনযাপনের টুকরো অংশকে তুলে ধরা হবে মণ্ডপে। ঝড়ের ভয়ঙ্কর রূপের একখন্ড ছবি থাকছে। তিনি যোগ করে বলেন, করোনার শুরু থেকে মানুষের জীবনের উপর দিয়ে একটা ঝড় বইছে। গত বছর করোনা। তারপর ইয়াস। এরপর অতিবৃষ্টি। সেই সমস্ত বিষয়গুলোকে নিয়েই এবারের চিন্তা ভাবনা। তবে, এইসবের মাঝে শান্তির বার্তা দেবেন স্বয়ং মা দুর্গা।