Last Updated on July 27, 2021 12:04 AM by Khabar365Din
বিকিনির দুই আবিস্কারক
ফিরাসি ফ্যাশন গুরু জ্যাকুইস হেইম যদি সেবার গ্রীষ্মে সিসিলি দ্বীপে ঘুরতে না যেতেন, তাহলেও বিবর্তন অবসম্ভাবি ছিল। তবুও বিকিনির মত আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় পোশাকের আবিষ্কারে, এই ঘটনাকে অস্বীকার করা যায় না।ভিলা রোমানা দেল ক্যাসেলা প্রত্নতাত্ত্বিক গুহায় ভ্রমণের সময় খ্রিস্ট জন্মেরও ৩০০ বছর আগেকার দেওয়াল জোড়া গুহাচিত্রে রোমান নারীদের টু পিস পোশাক দেখে চমৎকৃত হন। তারপর প্যারিসে ফিরেই বসে গেলেন নারী পোশাকের নতুন বিবর্তন নিয়ে। ১৯৪৬ সালের ২৫ জুলাই মাত্র ১২৫ টি বিশেষ ডিজাইনের পোশাক নিয়ে প্যারিসে নিজের দোকানে বসে গেলেন। বিশেষ এই টু পিস সুইম সুটের নাম দিলেন এটম।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে মার্কিন সেনাদলের জন্য পোশাকের নকশা বানানোর ডাক পেয়েছিলেন ফরাসি ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ লুই জেরার্ড। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার জেরার্ড যদিও মহিলাদের পোশাক নিয়ে তেমন উৎসাহিত ছিলেন না, তবুও বছরে এক দু বার বড় গাউন এবং সুইম স্যুট নিয়ে কাজ করেন।১৯৪৫ এর এপ্রিলে মার্শাল দ্বীপকুঞ্জের ওপর দিয়ে মার্কিন বি ২৯ বিমানে যাওয়ার সময়, অর্ধেক সমুদ্রে ডুবে থাকা ও অর্ধেক জেগে থাকা প্রবাল দ্বীপ দেখে অবাক হয়ে ছবি তোলেন জেরার্ড। নারী আকৃতির বিকিনি অটোল নামের ওই প্রবাল প্রাচীরে মুগ্ধ জেরার্ড এক মাসের মধ্যে নারীদের জন্য টু পিস বিশেষ পোশাক তৈরি করে ফেললেন। নাম দিলেন বিকিনি।

মেরিলিন মনরো
বেঁচে থাকলে আজ বয়স হতো ৯৫ বছর। তবে তাঁর চলে যাওয়ার এত বছর পরেও তো থামেনি মেরিলিন মনরো আখ্যান। আজও আমেরিকার পাম স্প্রিংস আর্ট মিউজিয়ামের সামনে তাঁর উড়ন্ত স্কার্টের ২৬ ফুট উঁচু মূর্তি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। শুধু তাই ওই সময়তেও বিকিনিতে নজর কেড়েছিল। অসংখ্য ছবিতে হট লুকে মাতিয়ে রেখেছিলেন দর্শকদের। এক কথায় লাস্যময়ী সুন্দরী ছিলেন তিনি। আজ হয়তো মনরো থাকলে তাঁকে নিয়ে কাহিনি সেজে উঠত অন্যভাবে। কে বলতে পারে তখন কেবলমাত্র সেক্স সিম্বল, ব্লন্ড বম্বশেল-এর তকমায় আটকে থাকতে হত না বছর ৩৬-এর সবথেকে আকর্ষণীয় যুবতীকে। আত্মশক্তি, বডি পজিটিভ, নারীবাদী, ফরওয়ার্ড থিঙ্কার- এই বিশেষণগুলো তাঁর সঙ্গে পরিপূরক। ডেঞ্জারাস ইয়ার্স,অ্যাজ ইয়ং অ্যাজ ইউ ফিল,লেটস্ মেক ইট লিগাল,দ্য প্রিন্স অ্যান্ড দ্য শোগার্ল মাঙ্কি বিজনেস, দ্য সেভেন ইয়ার ইচ প্রায় প্রত্যেক ছবিতেই বিকিনি পড়ে ছবি তুলেছিলেন মেরিলিন মনরো। নর্মা জিন মর্টেনসন, পরবর্তীতে মেরিলিন মনরো। এই নামেই বিখ্যাত হয়েছিলেন মার্কিন মডেল, অভিনেত্রী। খুব কম সময়েই জায়গা করেছিলেন হলিউডের প্রথম সারিতে। সম্ভবত আজও পৃথিবীর সবথেকে গ্ল্যামারাস নারী তিনিই।

সোফিয়া লরেন
সোফিয়া লরেন নামটাই যথেষ্ট। তাঁকে স্ক্রিনে দেখেই আটকে যেত দর্শকের চোখ। তারই সঙ্গে বিকিনি লুক একইভাবে ঝড় তুলেছে। সোফিয়ার তখন ১৪ বছর বয়স। সে সময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের তালিকায়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মজার বিষয়, ওই প্রতিযোগিতায়ই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে সেই পন্টিকেই বিয়ে করেন সোফিয়া।চলচ্চিত্রে অভিষেকের পরই সোফিয়া সাইক্লোন থেকে সোফিয়া লরেন হয়ে যান। ১৯৫২ সালে লা ফ্যাভোরিটা এবং ১৯৫৩ সালে এইডা নামের ছবিতে অভিনয়ের পরপরই সোফিয়ার সামনে হলিউডের দরজা খুলে যায়। সোফিয়া লরেনের ক্যারিয়ার শুরু বাজার চলতি যৌন পত্রিকার মডেল হিসেবে। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ১৯৫০ সালে। এখানেও তার শুরুটা সম্মানজনক ছিল না। এভাবে শুরু করে এতটা অসাধারণ জনপ্রিয়তা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন চলচ্চিত্র ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি ১০০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন। তাছাড়াও তাঁর অভিনয় জীবন ছাড়াও মডেল হিসেবেও খ্যাতি হয়।

উরসুলা এন্ড্রেস
জল থেকে উঠে আসছে লাস্যময়ী সুন্দরী। তাও আবার বিকিনিতে। ছবি ড.নো। স্ক্রিনে একেবারে ঝড় তুলেছিলেন লাস্যময়ী সুন্দরী উরসুলা এন্ড্রেস। সালটা ১৯৬২। এই সিনেমাতেই উষ্ণতা ছড়িয়েছিলেন তিনি। নতুন ফ্যাশান তৈরি করেছেন অন্যদের জন্যও। এমনকি নিজেকে বোল্ড এন্ড হট দুভাবেই ধরা দিয়েছেন দর্শকের সামনে।

অড্রে হেপবার্ন
বিশ্বে সুন্দরীর তালিকায় নাম আছে অনেকেরই। তবে সেই লিস্টে শীর্ষে অবশ্যই একজনের নাম থাকবেই। তিনি নিঃসন্দেহে অড্রে হেপবার্ন। শুধু সুন্দরী নয় তিনি ছিলেন লাস্যময়ী। গ্ল্যামারাস গাউন এবং বিকিনি দুটোতেই একই রকম তাক লাগিয়েছিলেন। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের একটি তালিকা করেছিল। তাতে তৃতীয় স্থান দখল করে আছেন অড্রে হেপবার্ন। প্রথম ক্যাথরিন হেপবার্ন, দ্বিতীয় বেটি ডেভিস। অড্রের পরে আছেন ইনগ্রিড বার্গম্যান, গ্রেটা গার্বো, মেরিলিন মনরো, এলিজাবেথ টেলরেরা।জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন তিনি।তাঁর নামে তিন ফুল ও এক রাস্তা করা হয়েছে। তিন রকম টিউলিপ, লিলি ও গোলাপের নামকরণ হয় অড্রে হেপবার্নের নামে। তাঁর নামে ১৯৫৯ সালে হলিউডের খুব কাছে লাস ভেগাসে একটি রাস্তার নাম রাখা হয়। তখন পর্যন্ত কোনো অভিনেত্রীর নামে রাস্তার নামকরণ এই প্রথম। তবে রিল লাইফের মতই রিয়াল লাইফ নিয়েও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন তিনি। তিনি যেখানে, স্পটলাইটও সেখানে। ভক্ত ও পারিষদ দিয়ে ঘেরা। কিন্তু অড্রে হেপবার্ন ছিলেন ব্যতিক্রম। একা থাকতে ভালোবাসতেন। অন্তর্মুখী হওয়ার দুর্নামও লাগিয়েছেন গায়ে। মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকবছর লাইম লাইট থেকে চিরবিদায় নিয়েছিলেন।

ডেমি রোজ
বিকিনি পরে সাইকেল, উষ্ণতার পারদ ছড়িয়েছেন লাস্যময়ী মডেল। তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ও প্রখ্যাত মডেল হলেন ডেমি রোজ। নানান নামজাদা ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভার গার্ল হিসাবে প্রায়ই চোখে পড়ে তাঁর মুখ। অসাধারন ফিগার ও লাস্য দিয়ে প্রচুর মানুষের মনে দাগ কেটেছেন ডেমি। আর তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। নামজাদা মডেল সোশ্যাল মিডিয়াতেও যে যথেষ্ট সক্রিয় থাকবেন সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু সিনেমাতেই নয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর ফ্যানের সংখ্যা অগুনতি।