Last Updated on December 28, 2021 3:25 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। সৌগত সরকার। টনিক’… শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা টনিক-ই ভরসা… সিনেমার এই সংলাপ মুখে মুখে ঘুরছে। দেবের এই ছবিটি শুধু কোমায় চলে যাওয়া সম্পর্ককে বাঁচিয়ে তোলার টনিক নয়, একই সঙ্গে বাংলা চলচিত্রের টনিকের কাজ করছে। ২৫ তারিখ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে টিকিট পাওয়াটা কেবল দুস্কর হয়ে ওঠেনি, একই সঙ্গে টিকিটের জন্য হাহাকার দেখলাম দক্ষিণ কলকাতার একাধিক প্রেক্ষাগৃহে।
বসুশ্রী, নবীনা কিংবা প্রিয়া সিনেমা হলে আগাম বুকিংয়ের জন্য দেখলাম লম্বা লাইন। বুক মাই শো বার বার কোলাপ্স করে যাওয়ায় অনেকেই হলে টিকিট কাটতে এসেছেন। ভাগ্যক্রমে একটি ইভিনিং শো এর টিকিট হাতে পেয়েছিলাম। বুক আরও চওড়া হয়ে গেল যখন দেখলাম হলিউড মার্ভেল হিরো স্পাইডারম্যানকে ছুটি করে দিয়েছে দেব ,পরাণ জুটি। যেমন বসুশ্রী হলে স্পাইডারম্যান আর টনিক যুদ্ধে স্পাইডারম্যানকে গত ৪ দিনে গুনে গুনে ১০ গোল দিয়েছে টনিক। বড়দিনের এই বাজারে একমাত্র বাংলা ছবির প্রতিনিধি হয়ে টনিক একা লড়ছে বুক চিতিয়ে।

আমাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় টনিকের হিসেব।এই ছবির গল্পের মূল চরিত্র মানে টনিক, অর্থাৎ দেব গোটা ছবিতে ইনসুলিনের কাজ করে গেলেন । মৃতপ্রায় সম্পর্ককে চাঙ্গা করতে, চিত্রনাট্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে, তিনি পারফর্ম করে গেলেন। অন্যদিকে পরাণ তাঁর অভিনয়ের ক্যারিশমা দেখিয়ে গেলেন গোটা ছবি জুড়ে। অসম বয়সী দুই অভিনেতার এই দুর্দান্ত যুগলবন্দী এই ছবির মূল ইউএসপি।আবেগ, রোমাঞ্চ, ড্রামা-মেলোড্রামা কি নেই? সব মসলায় ছবির চিত্রণাটিকে ম্যারিনেট করেছেন পরিচালক। আমাদের প্রত্যেকের সংসারের বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন পরিচালক অভিজিৎ সেন।

বাড়িতে বউয়ের ছ্যাঁকা, ছেলের বকা, পেটের অম্বল আর রাতের কম্বলে”- আটকে না থেকে ৭০ বছরের জলধর সেন পাখা লাগিয়ে উড়ে বেড়ালেন গোটা ছবি জুড়ে। বয়সটা একটা সংখ্যা মাত্র, টনিকের এই সংলাপ আসলে এই নতুন ডায়ামেনশন নিয়ে আসে।রিভার ব়্যাফ্টিং কিংবা রক ক্লাইম্বিং, প্যারাগ্লাইডিংয়ের মত এডভেঞ্চার স্পোর্টস অবলীলায় উপভোগ করতে পারেন ৭০ বছরের জলধর সেন। কখনও চড়ছেন পাহাড়ে। কখনও সাবানের বুদ্বুদে শরীর ডুবিয়ে মদের নেশায়, জীবনকে উপভোগ। এটাই তো সাড়ে আট কোটি বাঙালির কাছে মেসেজ পৌঁছল।

ছেলে পার্থ(নীল), বউমা (কনীনিকা) ফুটফুটে নাতনিকে নিয়ে জলধর (পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) ও তাঁর স্ত্রীর (শকুন্তলা বড়ুয়া) ছবির মতো সাজানো সংসার। মা-বাবার প্রতি ছেলের অতি সাবধানী দৃষ্টিতে তাঁদের নিজের ইচ্ছেগুলো গত ৪৬ বছর চাপা ছিল। জলধরের কথায় অবসরের পর, বিশেষ করে তাঁর জীবন ছিল ‘বাড়িতে বউয়ের ছ্যাঁকা, ছেলের বকা, পেটের অম্বল আর রাতের কম্বলে’ সীমাবদ্ধ। বাবা মায়ের ৪৬তম বিবাহবার্ষিকী বাড়ির ছাদে করার ইচ্ছে ছেলের। তা প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়।

অথচ ছেলে-বউ নিজেদের বিবাহবার্ষিকী করেছে ব্যাংককে।অভিমানে জলধর সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও এবার বিদেশ যাবেন নিজের বিবাহবার্ষিকী পালন করতে। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে উসকে দেয় ট্রাভেল কোম্পানির এক তরুণ গাইড ‘টনিক'(দেব)। বুদ্ধিমান, চটপটে, সর্বদা হাসিখুশি টনিকই অবশ্য শেষ পর্যন্ত মাসিমার(শকুন্তলা) পাসপোর্ট না করতে পারায়, প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে দেখা হয় হয় না জলধরদের। কিন্তু টনিকই আবার বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে তাঁদের নিয়ে চলে যায় পাহাড়ের দেশ দার্জিলিং। তারপর কি হল, তা বলে দর্শকদের মন ভাঙব না।

খুব ঘরোয়া, পারিবারিক একটি গল্প। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে দেখার মতো। যা আমাদের বাংলা ছবির ঘরানা। এই ছবির বাকি শিল্পীরা অর্থাৎ, শকুন্তলা বড়ুয়া, সুজন মুখোপাধ্যায়, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, তুলিকা বসু, রজতাভ দত্ত, কাঞ্চন মল্লিক, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তনুশ্রী চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু সকলেই নিজের অংশে দুর্দান্ত। পরিচালনা এবং ক্যামেরা খুব ভালো। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি ভালো ভাবে এক্সপ্লোর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেব আবার বাংলা ছবিকে নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে এনে দিলেন। প্রযোজক হিসাবে, অভিনেতা হিসেবে তাঁর সাহসকে কুর্নিশ জানাতে হলে সিনেমাটা দেখতেই হবে।