Last Updated on October 13, 2020 12:00 AM by Khabar365Din

সদাশিব রানা। মুম্বই। এককাট্টা হয়ে ঘুরে দাঁড়ালাে বলিউড। গত জুন মাসে সুশান্ত সিং রাজপুত্রের আত্মহত্যার পর থেকেই যেভাবে দেশের কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং বিজেপি সরাসরি জোট বেঁধে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তিকে নেশাখাের, খুনি, ড্রাগ মাফিয়া, এমনকি জঙ্গিদের সঙ্গে যােগসাজস থাকার অভিযােগে অপরাধী সাব্যস্ত করে ভাঙন ধরানাের চেষ্টা করেছিল, তা চূড়ান্ত ব্যর্থ হল।গত মাসে সংসদের বাদল অধিবেশনে রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চন যেভাবে সরাসরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণােদিতভাবে বলিউডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে বলিউডের বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযােগ করেছিলেন, সেই একই দাবি তুলে আজ শাহরুখ খান থেকে শুরু করে অক্ষয় কুমার, সালমান খান, অজয় দেবগন, অনিল কাপুর, করণ জোহর, যশরাজ ফিল্মসের তরফে আদিত্য চোপড়ার মতাে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা এবং সমস্ত প্রযােজনা সংস্থার তরফে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হলাে বলিউডের বদনাম করার জন্য যে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে তার বিরুদ্ধে। দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় সরাসরি অভিযােগ করা হয়েছে। রিপাবলিক টিভি, রিপাবলিক টিভির অন্যতম কর্ণধার অর্ণব গােস্বামী, সাংবাদিক প্রদীপ ভান্ডারী, টাইমস নাউ চ্যানেল, রাহুল শিবশংকর এবং নাভিকা কুমারের বিরুদ্ধে। বলিউডের মােট ৩৮ প্রযােজনা সংস্থার তরফে দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায়
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রিপাবলিক টিভি এবং টাইমস নাউ চ্যানেল গত কয়েক মাস ধরে যেভাবে উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে বলিউড এবং বলিউডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে লাগাতার উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে ন্যক্কারজনক ভাষায় মিডিয়ার ট্রায়ালের নামে চরিত্রহননের চেষ্টা চালিয়েছে, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রসঙ্গত, একাধিক বিজেপি সাংসদ এর সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত একের পর এক বলিউডের অভিনেতা এবং অভিনেত্রী দের মাদকাসক্ত এবং ড্রাগ মাফিয়া বলে এই দুই চ্যানেলের কাছে নিজের বক্তব্য রেখেছেন বারে। ইতিমধ্যেই ভাগ মাফিয়াদের সঙ্গে রিয়া চক্রবর্তী কোন সম্পর্কের প্রমাণ দিতে না পারায় এনসিবির হাতে গ্রেফতারের তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন বােম্বে হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, রিয়া চক্রবর্তীকে গাঁজা খাওয়া এবং গাঁজা বিক্রির আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের পান্ডা বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনসিবি বােম্বে হাইকোর্টের কাছে তাঁর নামে যে সমস্ত অভিযােগ দায়ের করেছিল, তার প্রায় প্রতিটি অভিযােগ খারিজ করে দিয়েছে। হাইকোর্ট। এমনকি রিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন গুরুতর ধারার মামলাগুলি ধােপে না র্টেকার পরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছিল যেহেতু রিয়া চক্রবর্তী একজন সেলিব্রিটি, তাই গাঁজা খাওয়ার অপরাধে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে দেশে এই ধরনের অপরাধ আর কেউ করার সাহস পাবে ভবিষ্যতে। কিন্তু এনসিবির সেই দাবি কার্যত নস্যাৎ করে বােম্বে হাইকোর্টের মতে, যুবপ্রজন্মের কাছে উদাহরণ তৈরির জন্য সেলিব্রিটি বা রােল মডেলদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়। বিচারপতি কোটওয়াল বলেন, আমি একমত নই। প্রত্যেকেই আইনের চোখে সমান। কোনও সেলিব্রিটি বা রােল মডেল আদালতের সামনে বিশেষ সুবিধা ভােগ করতে পারেন না।
মােদি সমর্থক বা বিরােধী

বলিউডের জন্য
সবাই হাতে হাত
৩৬৫ দিন। মুম্বই। বলিউড আবার প্রমান করলাে যে চলচ্চিত্রজগত সন্তস্ত্র, একত্রিত এবং নিজস্বতা বজায় রাখতে জানে। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর যেভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আড়াআড়ি ভাবে মুম্বাই চলচ্চিত্র জগৎকে ভাঙার চেষ্টা হচ্ছিল, সােশ্যাল মিডিয়া থেকে পেইড নিউজ, সর্বত্র মুম্বাই সিনে জগতের ফাটল স্পষ্ট হয়ে হয়ে উঠছিল।একাধিক শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়া তারকা, প্রযােজক কিংবা ইনড্রাস্টির ভাঙ্গনে ইন্ধন দিচ্ছিল রাজনৈতিক কারবারীরা। কিন্তু মুম্বাইকররা এই ইনড্রাস্টিকে ভাঙতে দিলেন না। তীব্র ভাষায় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে জয়া বচ্চন যেদিন বলেছিলেন, কয়েকটি মানুষের জন্য দয়া করে এই শতাব্দীপ্রাচীন চলচ্চিত্র জগৎকে কালিমালিপ্ত করবেন। ফেক নিউজ ছড়িয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে এই ইনড্রাস্টিকে ভাঙবেন না। সেদিন বিরােধী পক্ষ হয়েও হেমা মালিনী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ মােদি ভক্ত হিসাবে পরিচিত অক্ষয়কুমার, অনুপম খের,পরেশ রাওয়াল, শেখর কাপুর, করণ যােহররাও সােচ্চার হলেন এর বিরুদ্ধে। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে ভিন্ন মত, ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন, ভিন্ন শিবিরের দাদাগিরি সবই ছিল, আছে এবং থাকবে, কিন্তু ইনড্রাস্টির বিপদের দিনে একই মঞ্চে একই ভাষায় মুম্বাইকররা রুখে দাঁড়ান। এটাও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ১৯৭৬ সালে রজনিশ কাণ্ডের সময় পারভীন ববি, বিনােদ খান্নাদের পাশে এবাবেই দাঁড়িয়েছিল ইনড্রাস্টি। ৯৩ সালে দাউদ কাণ্ডের পরেও মুম্বাই ইনড্রাস্টিকে ভাঙা যায়নি। মােদি অমিত শাহরাও পারলেন । একটা আধটা কঙ্গনা দিয়ে মুম্বাইয়ে টলানাে যায় না।