Last Updated on May 25, 2022 11:42 PM by Khabar365Din
সন্দীপের কাস্টিং হুবহু যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে এল
সৌগত সরকার
৩৬৫ দিন। হত্যাপুরীর (Hatyapuri) গুরুত্বপূর্ণ সব কাস্টিং সামনে এলো। ফেলুদা (Feluda) ত্রয়ী ছাড়াও এই গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চরিত্র, যেগুলোকে সত্যজিৎ (Satyajit Ray) সাজিয়েছিলেন অনেক রহস্যের পরতে। যাদের মধ্যে গনৎকার লক্ষণ ভট্টাচার্য, বিলাস মজুমদার ও পুঁথি সংগ্রাহক ডি জি সেন বা দুর্গগতি সেন। লক্ষণ ভট্টাচার্যের চরিত্রে ওয়ান এন্ড অনলি বাছাই শুভাশিস মুখোপাধ্যায় (Subhasish Mukherjee)। পরনে সিল্কের লুঙ্গি আর চিকনের কাজ করা পাঞ্জাবি, মাঝারি হাইট, বিশেষত্ব হল সরু গোঁফ। ঠোঁটের দুপাশে আধ ইঞ্চি নেমে এসেছে। এটাই ছিল জ্যোতিষীর বর্ণনা। দুর্দান্ত এই চরিত্রের ভ্যারিয়েশন, অভিনয়ের জন্য শুভাশিসই সেরা বাছাই এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিলাসের বর্ণনায় সত্যজিৎ লিখছেন, প্রায় ফেলুদার মত হাইট, কালো চাপ দাড়ি, সুপুরুষ, কালো ট্রাউজারের ওপর চিজ ক্লথের শার্ট। বয়েস পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ। এই চরিত্রে থাকছেন সাহেব চট্টপাধ্যায় (Shaheb Chatterjee)। অন্যদিকে গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি চরিত্রে ডিজি সেনের চরিত্রে নির্বাচিত পরান বন্ধ্যপাধ্যায় (Paran Bandopadhyay)। ডিজি সেনের বর্ণনায় সত্যজিৎ লিখছেন, টকটকে রং ভাষাভাষা চোখ। কাঁচাপাকা মেশানো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। চওড়া কাঁধ।বেশ অভিজাত। মুল কাস্টিং যেন হুবহু সত্যজিতের ইলাস্ট্রেশন থেকে উঠে এসেছে। এবারের প্রেক্ষাপট পুরী। ছুটি কাটাতে গিয়ে পুরীর সমুদ্র সৈকতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। এবং সেই লাশকে কেন্দ্র করেই নয়া রহস্যের খোঁজ পায় খফেলু মিত্তিরখ। জড়িয়ে পড়েন তদন্তে। উন্মোচন হতে থাকে একের পর এক রোম খাড়া করা সত্য ঘটনা। তত্ব তালাশ চলাকালীন খুন হয় আরও এক ব্যক্তি। সত্যসন্ধান যত এগোতে থাকে মামলা তত রহস্যময় মোড় নেওয়া শুরু করে। আক্রান্ত হয় খফেলুদাখ নিজেও। শেষপর্যন্ত মিথ্যে, রহস্যের কুয়াশা সরিয়ে ফেলুদা অপরাধীকে হাতেনাতে ধরে ফেলতে কি না, তাই নিয়েই এগোবে ছবির গল্প।হত্যপুরী উপন্যাস ১৯৭৯ সালে প্রথমবার সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সে দিক থেকে দেখলে হত্যাপুরী কেবল একটি রহস্য উপন্যাস নয়। এই উপন্যাসের আনাচে কানাচে প্রচুর এলিমেন্ট লুকিয়ে আছে যা ফেলু মিত্তির এন্ড টিমকে আরও জারিত করে। যেমন এই উপন্যাসে আমরা প্রথমবার ফেলুদার পামেস্ট্রি বা হস্ত রেখা বিচার সম্পর্কিত জ্ঞানের ও পড়াশুনোর কথা জানতে পারি। শুধু তাই নয় পুরীতে হেমাঙ্গিনী স্টোরের মালিক শ্রীনিবাস সোমের উৎসাহে ফেলুদারা গণৎকার লক্ষণ ভট্টাচার্যর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। যার ক্ষমতা দেখে লালমোহন বিস্মিত হয়েছিলেন। বলেছিল, অবিশ্বাস্য, অলৌকিক, অসামান্য। গণৎকার নাকি লালমোহনবাবুর সাড়ে সাত বছরের হুপিং ক্যাফে ভোগা থেকে আঠারো বছর বয়সে মালাইচাকি ডিসলোকেশন হুবহু বলে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, জটায়ুর বন্ধু মেধাবী, কর্মঠ, অনুসন্ধান প্রিয় তাও বলেছিলেন।
সত্যজিতের গল্প যাদের পড়া তারা সকলেই জানেন ভিলেন কে? কতজন?
গণৎকার লক্ষ্মণ ভট্টাচার্য
শুভাশিস মুখোপাধ্যায়

শুভাশিস অসাধারণ অভিনেতা এর আগে সন্দীপের দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘গোরস্থানে সাবধান’ ছবিতে প্রধান ভিলেনের চরিত্রে আর ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ ছবিতে নকুড়বাবুর চরিত্রে। দুটিই অতি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এবারে ‘হত্যাপুরী’তে শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, চোখ টেনে রাখার মতো চরিত্র। সন্দীপের ভাষায়, ‘ওয়ান অ্যান্ড ওনলি চয়েস।’
কপালের লিখন
এক আশ্চর্য গণক। বাঙালি, পুরীতে থাকেন। যে ভদ্রলোককে নিয়ে যাবতীয় গন্ডগোল সেই ডি জি সেন’এর বাড়ি ‘সাগরিকা’তেই বসবাস ওনার। লালমোহনবাবু ও অন্যান্যদের মতে, কপালের লিখন পড়তে পারেন। বলাই বাহুল্য ফেলুদার এই সব গাঁজাখুরিতে কোনও বিশ্বাস নেই। প্রথম থেকেই ভদ্রলোক যত ইমপ্রেস করছেন, তত ফেলুদার সন্দেহ বাড়ছে।
দুর্গাগতি সেন (ডি জি সেন)
পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

সন্দীপ রায়ের সঙ্গে ছবি করেন বোম্বাইয়ের বোম্বেটে। ফিল্ম ডিরেক্টর পুলক গোস্বামীর চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন পরান। এর পরে টিনটরেটো যীশুতে পূর্ণেন্দু পাল। তারপর রয়েল বেঙ্গল রহস্যে দেবতোষ সিংহ রায়ের চরিত্রে, পরের বছরেই সন্দীপ রায়ের (Sandip Ray) যেখানে ভুতের ভয় এ গল্পবলিয়ে তারিনী খুড়ো আর বাদশাহী আংটির ভিলেন বনবিহারি সরকার।
পুঁথি সংগ্রাহক
‘এস.এন.সেন’স সেনসেশন্যাল এসেনসেজ’। বাবা এস.এন.সেন’এর ছিল সেন পারফিউমের জোর ব্যবসা। ছেলে দুর্গাগতি সেন পারফিউমের ব্যবসা ছেড়ে আর্টের ব্যবসায়ে। সে আবার যে সে আর্ট নয়, দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন পুঁথি গবেষক ও সংগ্রাহক। সারা দেশ ঘুরে পুঁথি জোগাড় করেন। একবার সিধু জ্যাঠার কাছেও গেছিলেন বাংলার প্রাচীন পুঁথি দেখতে। ১২০০ শতাব্দীর এক প্রাচীন পুঁথি অষ্ঠাদশসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা কিনেছিলেন। একপুত্র মহীম সেন তার সঙ্গে থাকেন না, সেক্রেটারি নিশীথ সেনকে নিয়ে পুরীতেই বাস। পায়ে ব্যান্ডেজ আছে। জিজ্ঞাসা করলে সেক্রেটারি বলেন, গাউটের সমস্যা। সম্প্রতি সিকিম ও ভুটান গিয়েছিলেন দুষ্প্রাপ্য পুঁথির খোঁজে। কেউ দেখতে চাইলে পুঁথি দেখান। কিন্তু সাহেবরা বেশি দাম অফার করলেও পুঁথি বিক্রিতে রাজি নন।
বিলাস মজুমদার
সাহেব চট্টোপাধ্যায়

বিলাস মজুমদারের চরিত্রে সাহেব চট্টপাধ্যায়। সাহেব দীর্ঘদিন বাদে সন্দীপ রায়ের ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন। এর আগে সাহেব সন্দীপ রায়ের গুগাবাবা ফিরে এলো ছবিতে গুপী বাঘা ছাড়া এই ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিক্রম এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তখন তিনি শিশু শিল্পী।
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার পরিচয়টা সত্যি?
বরফের মতো ঠান্ডা গলায় বলল ফেলুদা।—‘আপনার মতো ধূর্ত লোকের পাসপোর্টের কী মূল্য? কী আছে পাসপোর্টে? বিলাস মজুমদার নাম আছে তো? আর চেহারার বিশেষত্বর মধ্যে পালের আঁচিলের কথা বলেছে?— ‘ডিসটিংগুইশিং মার্ক— মোল অন ফোরহেড’—এই তো?… ‘স্নো লেপার্ডের ছবি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া, কোন হাসপাতাল, কী কী হাড় ভেঙেছিল—এ সবই আপনি জানতেন।