Last Updated on May 17, 2023 7:43 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। জনি ডেপ পরিচালক। আল পাচিনো অভিনেতা। তৈরি হচ্ছে মোদির বায়োপিক। ভাজপার মিডিয়া সেল শুধু এই শিরোনামটুকু পড়ে তুর্কি নাচন লাগিয়ে দিল। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে একটাই কথা, জয় বজরংবলী। কর্ণাটক গিয়েছে তো কি হয়েছে! আরে বাবা, মোদিজি এখন ইন্টারন্যাশনাল। মোদিজির ভূমিকায় আর কেউ নয় আল পাচিনো। কিন্তু এ পাগলদের বোঝায় কে যে, এ মোদি সে মোদি নয়। ইনি অসীম প্রতিভাবান ইতালির ক্ষণজন্মা চিত্রকর, ভাস্কর আমেদিও মোদিগ্লিয়ানি, নরেন্দ্র দামোদর মোদি নন। জনি ডেপ, আল পাচিনোর কোনও দায় পড়েনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বায়োপিক বানানোর। জনি ডেপ দীর্ঘ ২৫ বছর পর আবার পরিচালনায় ফিরছেন। আল পাচিনো এখন আর কোনও আবোল তাবোল চরিত্রে অভিনয় করেন না। দুজনেই মোদিগ্লিয়ানির অন্ধ ভক্ত।

শিল্পীর সংক্ষিপ্ত ৩৫ বছরের জীবনের রোমাঞ্চকর ও রোমান্টিক যাত্রা পথের ইতিবৃত্ত তাই রূপালী পর্দায় ধরে রাখতে চান। ভাজপার মিডিয়া সেল আমদিও মোদিগ্লিয়ানির নাম কোনদিন শোনেনি, গুটকাখোর বজরং ভক্তদের শোনার কথাও নয়।
১৮৮৪ থেকে ১৯২০, মাত্র ৩৫ বছর বেঁচে ছিলেন শিল্পী। যদিও তিনি এখনো জীবন্ত তার অতি আধুনিক কিউবিক প্যাটার্নে আঁকা পরাবাস্তব ন্যুড স্টাডিগুলির মধ্যে। যা তার জীবদ্দশায় তাকে সমাদর দেয়নি এখন বিক্রি হয় রেকর্ড অর্থ মূল্যে। অতএব ভাজপাড় মিডিয়া সেল নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এই বায়োপিক মোটেই তাদের গুরুজিকে নিয়ে তৈরি হচ্ছেনা। জানলে তিনি কানে আঙ্গুল দেবেন!
ছবির প্রযোজক ব্যারি নাভিডি এ প্রসঙ্গে জানান, একদিকে শিল্পীর ছেদহীন সৃষ্টির তাগিদ অন্যদিকে সমাদর না পাওয়ার যন্ত্রনা, এই জীবন সংগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা ছবি তৈরির বাসনা তার এবং আল পাচিনোর ছিল। এরপর এই প্রজেক্টে যুক্ত হন জনি ডেপ। এই বিখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক নিজে একজন আর্টিস্ট তিনিও এই রোমান্টিক শিল্পীর গুণমুগ্ধ ভক্ত।

এখনো শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় কে করবেন তা সুনিশ্চিত হয়নি। হতে পারে, জনি ডেপ নিজে এই চরিত্রে অভিনয় করবেন। এখনো পর্যন্ত স্থির হয়েছে জনভিক চ্যাপ্টার টু ছবির নায়ক রিকার্ডো স্কিমরিকো থাকবেন, সঙ্গে পেরি নিনি। ইতালিতে জন্মেছিলেন মোদিগ্লিয়ানি। ছোট থেকেই তিনি রুগ্ন। অতি শিক্ষিত তার মা জিনি তাকে বাড়িতেই পড়াশোনা এবং ছেলের আগ্রহ দেখে ১১ বছর বয়সে ভর্তি করে দেন লিভর্ণতে গুলেমিও মিখেইলির আর্ট স্কুলে দু’বছর টানা ওখানে আঁকা শেখেন আমেদিও।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে প্যারিসে গিয়ে সরাসরি আঁকাআঁকির জগতে প্রবেশ করেন। পাবলো পিকাসো সহ সেই সময়কার সমস্ত প্রথম সারির শিল্পীদের কাছে সমাদর আদায় করেন। বিরামহীন ভাবে একে যেতেন মোদিগ্লিয়ানি। কিন্তু সমাদর পাননি কোথাও। মদ ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন ক্রমশ।

টিউবারকিউলিসিস ধরা পড়ে শরীরে। প্রথম জীবনের আঁকা প্রায় সমস্ত ছবি নিজের হাতে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন শিল্পী। ওসব বালখিল্যের কাজ বলে নতুন করে শুরু করেছিলেন ছবি আঁকতে। সে সময় তিনি পাশে পান বন্ধু লিওপোল্ড জবরস্কিকে। তিনিই হয়ে ওঠেন শিল্পীর ছবির একমাত্র ডিলার। ঘর, ছবি আঁকার যাবতীয় সরঞ্জাম, মডেল, এমনকি প্রতিদিনের হাত খরচ সরবরাহ করতেন বন্ধু লিওপোল্ড। তার উদ্যোগে ১৯১৭ সালে প্যারিসে শিল্পীর ন্যুড স্টাডি নিয়ে তার একমাত্র একক ছবির এক্সিবিশন হয়। ন্যুড সিটিং ওন আ ডিভান সিরিজটি পুলিশ প্রথমে অশ্লীলতার দায় বন্ধ করে দেয়, শেষ পর্যন্ত রাস্তামুখী জালনয় ছবি টাঙ্গানো হবে না এই শর্তে প্রদর্শনী চলে।
সামান্য কয়েকটি ছবি বিক্রি হয়েছিল সেসময় তবে আজকের তুলনায় তা নগণ ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের ক্রিষ্টিতে তার সেই এক্সিবিশনের ছবি বিক্রি হয় রেকর্ড অর্থ মূল্যে। যদিও সে সময় শিল্পীর সঙ্গে তার ডিলারও এই ভবোধাম ত্যাগ করেছেন। আমদিও মোদিগ্লিয়ানির মৃত্যুর ঠিক দুদিন পরে তার একুশ বছরের অন্তঃসত্তা স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। এক হিসেবে ভবঘুরে অসীম প্রতিভাবানের জীবনাবসান হয়। সেই সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে এক অতি সংক্ষিপ্ত রোমান্টিক দাম্পত্য জীবনের।

পেইন্টিং তাঁর কাছে অভিনয়ের থেকেও প্রিয়
৩৬৫ দিন। টেক্সাস থেকে ১৭ বছর বয়সী জনি ডেপ ক্যালিফোর্নিয়া এসে পৌঁছলেন। কোনও চাকরি বা পড়াশুনোর জন্য নয়,নিজের রক ব্যান্ড রক সিটি এঞ্জেলস কে প্রতিষ্ঠা করতে। তিন বছরের মধ্যেই ভেঙ্গে গেল দল। আবার নতুন দল খুললেন জনি। এবার তার ব্যান্ড মাইনর থ্রেট হইচই ফেলল। আইরিশ ও জার্মান বংশভুত ডেপ ততদিনে চুটিয়ে ছবিও আঁকছেন। বিখ্যাত চিত্রকর জ মাইকেল ব্যাসকুয়েট এবং কেথ হেরিং এর অনুপ্রেরণায় চলতে থাকে আধুনিক আর্ট এর তালিম।একই সঙ্গে তাঁর নতুন বান্ধবীর উৎসাহে চিত্রশিল্পের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন জনি। কোনও প্রথাগত ছিল না সেই চিত্রশিল্পের অধ্যয়ন। ইতিহাসের ছাত্রী সেই বান্ধবীর আইডি কার্ড নকল করে নিজের ছবি লাগিয়ে লাইব্রেরীতে দিনের পর দিন পড়াশুনো করতেন। এদিকে কোনও চাকরি নেই,উপার্জন নেই।

গানের শো থেকে যেটুকু উপার্জন। দরকার ছিল একটু উপার্জনের। এমনই এক সময় তিনি নজরে পরে যান বিখ্যাত হলিউড অ্যাকশন হিরো ব্রুস উইলসের। ব্রুস একটি অনুষ্ঠানে ওর সঙ্গীত এবং পেইন্টিং এর দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হন। এবং যেভাবেই হোক জনিকে সাহায্য করার কথা ভাবেন। জনি হাত পেতে সাহায্য নেবে না জেনে, ক্যালিফোর্নিয়া থিয়েটার গ্রুপে তার কাজের ব্যবস্থা করে দেন। প্রতিদিন সেখানে অতিরিক্ত অভিনেতার প্রয়োজন পড়ত, যার সংলাপ নেই। বদলে মিলত পয়সা। জনি এক এক দিনে পাঁচটি থিয়েটার দলের অন্তত সাতটি শোয়ে ১১ জনের প্রক্সি দিতো। অচিরেই পাকা হল চাকরি। আর ইতিমধ্যেই ততক্ষনে অভিনয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন জনি। হঠাৎই একটি নাটকে সুযোগ। প্রধান পার্শ্ব অভিনেতা অনুপস্থিত পরিচালক দেখলেন ওর সংলাপ ও মুখস্ত। কিন্তু বড় চুল কাটতে রাজি নয় ছেলেটি।
রিস্ক নিয়েই নামিয়ে দিলেন মঞ্চে। এই প্রথমবার রাজা প্রথম হেনরিকে কেউ দেখল ঘাড় অবধি লম্বা চুল, আর ঘাড়ে ট্যাটু করা অবস্থায়। লম্বা চুলের রাজা হেনরি ওরফে জনি ততক্ষনে হিট। টানা ৭০ শো হাউজফুল। এর পর সেই ব্রুস উইলস এর হাত ধরেই বলিউডে পা। নাইটমেয়ার ইনইএলএম স্ট্রিট ছবিতে। তারপরেই অভিনেতা হিসেবে অলিভার স্টোনের নজরে আসেন। প্লাটুন ছবিতে এলো প্রথম গোল্ডেন গ্লোব। দীর্ঘ সাফল্যর মধ্যেও ছবি আঁকার নেশা ছাড়েননি জনি ডেপ। আজও এটাই তার কাছে সবচেয়ে আপন। বিশ্বের অন্যতম দামী এই অভিনেতার সংগ্রহে আছে বিশ্বের নানা অজানা শিল্পীর পেইন্টিং। যাদের সম্পর্কে পড়াশুনো করে,গোটা ইউরোপ ঘুরে এগুলো সংগ্রহ করেছেন ডেপ। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় অনেক সম্পত্তি ভাগ হলেও, এই চিত্রশিল্প হাতছাড়া করেননি ডেপ। তিনি বলেছিলেন, এটা আমার সম্পত্তি নয়, এটা আমিই, এটার ভাগ হবে না।