Last Updated on November 15, 2020 10:42 PM by Khabar365Din

৪০ দিনের লড়াইতে হেরে গেলেন ফেলুদা
৩৬৫ দিন। দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াইতে হেরে গেলেন ফেলুদা। লড়াইতে যে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল গতকাল সন্ধে। সাড়ে সাতটা নাগাদ বেলভিউ নার্সিংহােম থেকে কাঁদতে কাঁদতে মেয়ে পৌলােমীকে বেরােতে দেখেই। পৌলােমী বেরােনাের সময় শুধু বলেন বাবা ভালাে নেই। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু।ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। এরপরে আজ দুপুর বারােটা নাগাদ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং রাজ্যের মন্ত্রী। ইন্দ্রনীল সেন পৌঁছান বেলভিউ হাসপাতালে। দুপুর ১২.১৫ মিনিটে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘােষণা করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর প্রয়াণের সংবাদ জেনে হাসপাতালে দৌড়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। আসেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। চলে আসেন মেয়ে পৌলােমীও। পৌলােমীকে সান্তনা দিয়ে পাশে দাঁড়ান মমতা। পৌলমী বলেন, দিদি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এত যত্ন করে, ভালবেসে, সম্মানের সঙ্গে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন সকলে। বাবা চিরকাল আমাদের মনে রয়ে যাবেন।করােনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তিনি সম্পূর্ণ করােনা মুক্ত হয়েছেন। বলে ডাক্তাররা জানানাের পরে মুখ্যমন্ত্রী যাবতীয় সামাজিক দুরত্ব বিধি মেনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুটে তাঁর শেষকৃত্যের কথা ঘােষণা করেন।
কবি থেকে অভিনেতা সত্যজিতের সঙ্গেই ১৪ ছবি
একাধিক জাতীয় পুরস্কার, দাদা সাহেব। ফালকে, লিজিওন অফ অনার, বঙ্গবিভূষণ ৩৬৫ দিন। জন্ম জানুয়ারি ১৯, ১৯৩৫ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর ছেলেবেলা কাটে কাটে কৃষ্ণনগরে। এরপর কলকাতায় এসে হাওড়া জেলা স্কুল ও তারপর সিটি কলেজ। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে এমএ। আমেচার থিয়েটার করতে করতে পেশাদার থিয়েটারে আত্মপ্রকাশ অহীন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে। তারপর শিশির কুমার ভাদুরীর সাহচর্যে অভিনয়কে জীবনের লক্ষ্য করে তােলা। ১৯৫৯ সালেসত্যজিৎ রায়ের চোখে পড়া এবং অপুর সংসার ছবিতে অভিনয়ের সুযােগ দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সাফল্যের পরেই রেডিও ঘােষকের চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি সিনেমায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সত্যজিতের সঙ্গে ১৪ টি ছবিতে অভিনয় তাঁর বিস্তৃত অভিনয় জীবনকে আরও বর্ণময় ও অলংকৃত করে তােলে। আসে জাতীয় পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পরিচয়। অপুর সংসার দিয়ে সেই যাত্রা শুরু হয়ে, দেবী, তিনকন্যা, অভিযান, চারুলতা, কাপুরুষ, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনিসংকেত, সােনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, চারুলতা, শাখা প্রশাখা ছবিতে ১৯৯০ সালে সত্যজিতের সঙ্গে দীর্ঘ যাত্রার শেষ।
সত্যজিৎ ছাড়াও তপন সিনহা’র খুদিত পাষাণ, ঝিন্দের বন্দি, মৃনাল সেনের পুনশ্চ, আকাশ কুসুম, অজয় করের অতল জলের আহ্বান,সাত পাকে বাঁধা, পরিণীতা, মাল্যদান, তরুণ মজুমদারের সংসার সীমান্তে, গণদেবতার মত প্রবল প্রশংসিত ছবি ছাড়াও প্রায় ৩০০ র ওপর বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মত। তিন ভুবনের পাড়ে, প্রথম কদম ফুল,স্ত্রী, বসন্ত বিলাপ, নৌকাডুবি, কোনি,দেবদাস, হুইল চেয়ার, মহা পৃথিবী, তাহাদের কথা, নিশিজাপন ইত্যাদি ছবি। গৌতম ঘােষ থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সন্দীপ রায় থেকে ঋতুপর্ণ ঘােষ বিস্তৃত তাঁর অভিনয় জীবন। সিনেমা ছাড়াও কবিতা, গল্প, নাটকের জগতে স্বমহিমায় বিচরণ করেছেন সৌমিত্র। রাজকুমার, নীলকন্ঠ, ঘটক বিদায়, টিকটিকিনাটকে তাঁর অভিনয় মনে রাখার মত। কিং লিয়র তাঁর অভিনীত শেষ নাটক, যেটি ২০১৮ সালে মঞ্চস্থ হয়।অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ,২০১২তে দাদাসাহেব ফালকে ও ২০১৭ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান লিজিওন অফ অনারে ভূষিত হন। রাজ্য সরকার সেই বছরই তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণে তাঁকে সম্মানিত করে।