Last Updated on August 1, 2023 6:39 PM by Khabar365Din
রিভিউ- সৌগত সরকার
ক্রিস্টোফার নোলানের নির্মিত এই বায়োপিকে একই সঙ্গে দুটো চেইন রিয়াকশন চলেছে। একটি পরমাণুর কেন্দ্রে অন্যটি তার ছবির নায়ক ওপেনহাইমারের মননে। দুটোই দুর্দান্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত। একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ এবং গোপনীয় প্রজেক্ট ম্যানহাটনে আণবিক বোমা তৈরি হচ্ছে ,অন্যদিকে অপমানে,অনুতাপের আগুনে জ্বলতে থাকা এক মহান বিজ্ঞানীর চরম যন্ত্রণার রুসায়ন। সমান্তরালভাবে চলেছে ছবি জুড়ে।
অনেকেই এই ছবি নিয়ে প্রবল হইচই হচ্ছে শুনে দেখতে গিয়েছেন,বা যাবেন। ওপেনহাইমার নিয়ে নাকি প্রবল গুগল সার্চ হচ্ছে। সকলেই বোঝার এবং জানার চেষ্টা করছেন,কে এই ওপেনহাইমার? গুগলে আছে,তবে তা পড়লে অনেকেই বিভ্রান্ত হবেন। ভাসা ভাসা গুগল পড়ে এই মাপের একজন নিউক্লিয়ার ফিজিজিস্টকে জানা,বোঝা সম্ভব নয়। তাই একটু বলে নিই,কে এই ওপেনহাইমার।

জন্মসূত্রে ইহুদি এই বিজ্ঞানীর পরিবার নাৎসি জার্মানি থেকে বিতাড়িত হয়ে আমেরিকায় এসেছিল। আইনস্টাইনের প্রিয় ছাত্র,হার্ভার্ড ও কেমব্রিজ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড মেডেলিস্ট ওপেনহাইমারের হাতেই বিশ্বের প্রথম আণবিক বোমা তৈরির দায়িত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান জাপানে পরমাণু বোমা ফেলার পরে, ওপেন হাইমার বলেছিলেন, আমার দু হাতে রক্ত লেগে আছে। পরে তিনি হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরুদ্ধে দাড়ান। ততদিনে রিপাবলিকান আইসেনহাওয়ার ক্ষমতায়। এদিকে ফুক্সের হাত দিয়ে স্টালিন পেয়ে গিয়েছেন আণবিক বোমার ফর্মুলা। মার্কিন কংগ্রেস দাবি তোলে ওপেনহাইমার কমিউনিস্ট। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। বলা হয় তিনি সোভিয়েত চর। তার বিচার শুরু হয়। সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স কেড়ে নেওয়া হয়। পাসপোর্ট আটকে অন্য দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। পণ্ডিত নেহরু তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন। ৫৫ সালে তিনি অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। তাঁকে যোগ্য সন্মান দিয়ে রাষ্ট্র নিজেদের পাপস্খলন করে,
ইনিই ওপেনহাইমার।

ক্রিস্টোফার নোলান তাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি হিসাবে কাই বার্ড এবং মার্টিন জে শেরউইনের লেখা পুলিৎজার পাওয়া গবেষণাধর্মী বই দ্যা ট্র্যায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি অফ জে রবার্ট ওপেনহাইমার থেকে ২০১০ সালে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করেন। হ্যাঁ ডানকার্ক ছবির আগে থেকেই। ফলে গবেষণা অংশটা তিনি অনেক বিস্তারিত করতে পেরেছেন। তাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ট্রিলজির প্রথম ছবি ডানকর্ক তুলনামূলক অনেক সহজ বিষয় ছিল। নাৎসি দখলকৃত ফ্রান্সের ডানকর্ক সৈকতে পরিকল্পনার অভাবে আটকে পরা তিন লক্ষ ব্রিটিশ ও মিত্রশক্তির সৈন্যদের উদ্ধার করে আনা নিয়েই ছিল সেই ছবি।

এই ছবির নির্মাণ অত্যন্ত নিপুণভাবে হয়েছে। এসেছে বিশ্বযুদ্ধের ধবংসলীলার ঝলক,ম্যানহাটন প্রজেক্ট এর ডিটেল নির্মাণ ও অগ্রগতি, আণবিক বোমার সফল পরীক্ষা,কোর্টরুম ড্রামা সব। শুধু আসেনি হিরোশিমা,নাগাসাকি। কারণ নোলান সেটা দেখাতে চাননি। আরও বড় কারণ,ওপেনহাইমারও চাননি। সন্দেহ আর অবিশ্বাসের ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত ফাদার অফ অ্যাটম বম্ব। তার যন্ত্রণা, মানসিক ক্লান্তি, হতাশা,দাম্পত্য এই ছবির বেশিরভাগটা জুড়ে। ওপেনহাইমারের ভূমিকায় আইরিশ অভিনেতা ইন্টারমিশন,দ্যা উইন্ড দ্যাট শেকস দ্যা বার্লি খ্যাত কিলিয়ান মার্ফি অসম্ভব আকর্ষণীয় অভিনয় করেছেন। ম্যানহাটন প্রজেক্টের অমানুষিক পরিশ্রমে ৪০ কেজি ওজন ঝরানো ওপেনহাইমারকে জীবন্ত করে তুলেছেন। সামরিক প্রধান লেসলি রিচার্ড গ্রোভসের চরিত্রে ম্যাট ডেমন অসাধারণ।
ফ্লোরেন্স পিউ আছেন পদার্থবিদ ও মার্কিন কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী জন ফ্রান্স ট্যাটলকের চরিত্রে। মার্কিন অ্যাটমিক কমিশনের প্রধান লুইস ট্রসের চরিত্রে রবার্ট ডাউনিং জুনিয়র জমিয়ে দিয়েছেন। আর জনপ্রিয় অভিনেত্রী এমিলি ব্রান্ট ওপেনহাইমারের স্ত্রী ক্যাথরিনের ভূমিকায়। ওপেনহাইমার নিয়ে নোলান অনেক তথ্য,সংবাদ দিয়েছেন এই ছবিতে। কিন্তু এমন কিছু পেলাম না যেটা এই বিজ্ঞানীর অজানা কথা। ঠিক তেমনই আসেনি অনেক গুরুত্বপূর্ন তথ্য যেটা ছাড়া ফাদার অফ অ্যাটম বম্ব খানিক অসম্পূর্ণ। যেমন আসেনি সাইক্লোট্রন আবিষ্কারক ওনার্ড লরেন্সের প্রসঙ্গ। যেটা ছাড়া এই প্রজেক্ট হত না। আসেনি দুই নোবেলজয়ী ও পারমাণবিক বিভাজনের কারিগর
অটো হান আর হাইজেনবার্গ অধ্যায়। আসেনি নিলস বোর আর আর্চিবল্ড এর দ্যা মেকানিজম অফ নিউক্লিয়ার ফিশনের কথা,আসেনি আইনস্টাইন এর শুভ্রামন্যম চন্দ্রশেখরের কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অধ্যায়। কেমন করে সূত্রহীন হয়ে ম্যানহাটন প্রজেক্ট হতে পারে? অন্তত ভয়েস ওভার কিংবা স্ক্রিন শটে উল্লেখ থাকলে ওপেনহাইমার আরও টেকনিক্যালি জান্তব হয়ে উঠত।