Last Updated on September 2, 2021 10:27 PM by Khabar365Din
৩৬৫দিন । অভিজিৎ অধিকারী । নব্বুই দশকের প্রথম দিকের কথা। মানে, গত শতাব্দীর। ২১২, বাঙ্গুর অ্যাভিনিউতে জড়ো হয়েছি সবাই। মাসের বিশ দিনই জড়ো হতাম যদিও, তবে সেদিন ছিল স্পেশাল। অনেকেই এসেছেন। এক উঠতি গায়ক গান গাইবেন। এবাড়িতে এমনটা মাঝেমাঝেই হত। বাংলা সংস্কৃতির বাজারে পদার্পণ করার আগে এই বাড়ির আশীর্বাদ নেওয়াটা সেসময় কেমন একটা রেওয়াজ হয়ে উঠেছিল। গায়ক এলেন। রোগাপটকা ছোকরা। অবিন্যস্ত গোঁফ-দাড়ি। এক মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তার এক সঙ্গীর সঙ্গে রিকশ থেকে হারমোনিয়াম নামালেন বেশ কসরত করে। ওদের সঙ্গে তবলা নিয়ে মিষ্টির মতন একটি বাচ্চা ছেলে। ঘরে ঢুকে উচ্চগ্রামে কথা ও অট্টহাস্যে এক মুহুর্তে গুরুগম্ভীর পরিবেশটা একা হাতে বদলে দিলেন ওই রোগাপটকা ছোকরা। তার একজোড়া ঝকঝকে চোখ আর অনাবিল হাসি গান শুরু হওয়ার আগে মন জয় করে নিল সকলের। নচিকেতা। নচিকেতা চক্রবর্তীকে, বেশ মনে আছে তখন থেকেই আদর করে ডাকতে শুরু করলাম নচি। গান ধরার আগে, ওর্য়াম আপ করার মতো করে হারমোনিয়ামটা একবার বাজিয়ে নিলেন নচিকেতা।
সামনে বসে অত কাছ থেকে কাউকে এমন ভালো হারমোনিয়াম বাজাতে এর আগে আমি দেখিনি। গান ধরলেন নচিকেতা। একের পর এক। সপাং সপাং করে এক একটা চাবুকে ক্ষতবিক্ষত হলো আমার এতদিনের চেনা সমাজ, বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে থাকা পরিবেশ, অহংবোধ, মন, আবেগ। এই দগদগে চাবুকের ঘা নিয়ে নির্বাক হয়ে ছিলাম প্রায় দু’ঘণ্টা। শুধু আমি নই, সকলে। এর আগে মহীনের ঘোড়াগুলির সঙ্গ করেছি দীর্ঘ দশ বছর। নিজে গান লিখেছি, সুর দিয়েছি, এক্কা নামে গানের দল করেছি কিন্তু এমন গান আগে শুনিনি। এমন গানই তো লেখা উচিত, এমন গানই তো গাওয়া উচিত…। এতদিন আমি যে গান শুনেছি, গান লিখেছি, গান গেয়েছি তা এমন ভাবে বিদ্ধ করেছে কি কাউকে? কারুর মনে ধরিয়ে দিতে পেরেছে কি আগুন? জানি, পারিনি। অতি বলিষ্ঠ সমকালীন লিরিকে নচিকেতার সুরেলা গায়কী সেদিন আমায় আবিষ্ট করেছিল। এই রোগাপটকা ছোকরা যে বাংলা আধুনিক গানের দুনিয়া শাসন করতে এসেছে বুঝতে এক মুহুর্ত সময় লাগেনি। আজ এই লেখা লিখতে গিয়ে মনে হলো, যারা আমায় অদূরদর্শী বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন তাদের অনায়াসে মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া যায়।