Last Updated on June 16, 2023 12:52 PM by Khabar365Din
জন্ম : ১৬ জুন ১৯২০
মৃত্যু : ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯
উত্তমকুমার যদি বাংলার মহানায়ক হন তবে হেমন্ত মহাগায়ক। তবে গায়ক-সংগীত পরিচালক তিনি শুধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই নন, সর্বভারতীয় হেমন্তকুমার। শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই যশস্বী শিল্পীর আগামীকাল জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তিনি পা দিতেন ১০৪এ। এদেশে সঙ্গীত ক্ষেত্রে যে কয়েকজন শিল্পী কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাদের অন্যতম। বাংলা, হিন্দি গান গেয়ে ভুবন মাতানো ছাড়াও তিনি বহু বাংলা ও হিন্দি ছবিতে সুরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি গান গেয়েছেন একাধিক আঞ্চলিক ভাষায়। অথচ আজ এসব তথ্য মাত্র।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে নিয়মমাফিক একটা করে জলসা হয়। ছবি, মূর্তিতে গন্ধরাজ মালা পরান। যারা হেমন্তকণ্ঠী বা সংগীতশিল্পী তাই না না করে ফুল বেলপাতা দিয়ে চারটি গান গেয়ে শ্রদ্ধা সারেন। কেউ হেমন্তকে গভীরভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করে না। অ্যাকাডেমিক স্তরে আজও শিল্পীরা এমনকি কিংবদন্তি শিল্পীরাও ব্রাত্য। অথচ ৪০এর দশকের মাঝামাঝি সময় এই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন বা আইপিটিএর সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন এবং গীতিকার-সুরকার সলিল চৌধুরীর সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক জোট বেঁধেছিলেন। ১৯৪৩ সালে বাংলার মন্বন্তর এবং ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী বাঙালির প্রতিবাদে সামিল হন তিনি। সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে একাধিক গান দেশবাসীকে বিশেষ করে বাঙ্গালীদের উজ্জীবিত করেন। গাঁয়ের বধু, রানার প্রকৃতি গান বাঙালির মুখে মুখে ঘোরে।
গানগুলি বিক্ষিপ্তভাবে এবং কিছুটা ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহীত হলেও সেই সময়কার ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বাঙালির শিল্প বিপ্লব এই প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে একটি সাবজেক্ট। কিন্তু সেখানেও এই ইতিহাস সেভাবে মূল্য পায়নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে এই কোর্স আরো বিস্তৃত করার সমস্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন যে, বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে আধুনিক বাংলা গান নিয়ে পড়াশোনা করানোর ব্যবস্থা করা হোক। সংগীত শিক্ষা করছেন এমন প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান বা সলিল চৌধুরীর কম্পোজিশন বিষয় লেখাপড়া করা দরকার।
তা না হলে বাংলা গানের উৎস মুখে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এদের জানা দরকার, রবীন্দ্র সংগীতকে জনপ্রিয় করার পেছনে থাকা মানুষগুলো কারা। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা যতটা শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে, একটা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলে, রবীন্দ্র সংগীতও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গান শুনে এর মর্মধার করা সম্ভব নয়, শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্র সংগীতের অন্যতম শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস, যাকে বাঙালি হেমন্তের চিরশত্রু বানিয়ে দিয়েছিল, একবার এক অনুষ্ঠানে অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে, বাঙালির ঘরে ঘরে রবীন্দ্র সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছিলেন পঙ্কজ মল্লিকের পর হেমন্তই। কিন্তু শতবর্ষ পর তার সম্পর্কে অবলা ভালো তার সংগীত বিষয়ে জানার কোন উপায় নেই। নেই।
সংগীত শিক্ষা নিচ্ছেন যারা তাদের কাছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গায়কী, ঢং থেকে শুরু করে তার তালিম নেওয়ার পদ্ধতি পর্যন্ত জানা খুবই প্রয়োজন। পারফরম্যান্স নিয়ে যেখানে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে সেখানেই এই কিংবদন্তি শিল্পীদের কোর্সের আওতায় নিয়ে এলে ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে। যারা ফুল বেলপাতা দিয়ে দায়সারা ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁকে ভাঙিয়ে খাচ্ছেন, জানি তাদের বলে লাভ নেই। আমরা তাই মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি বিষয়টি নিয়ে একটু ভেবে দেখার জন্য। এই রাজ্যে শিক্ষার ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের। যে কারণে, দেশের প্রথম পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় নাম সর্বদাই উঠে আসে। এখান থেকেই পথ দেখানো শুরু হতে পারে। দেশের কোথাও শিল্পীদের কদর নেই, অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে।