Rahul Dev Burman: মুম্বইয়ের বাঙালি বিরোধী চক্রের চক্রান্তে ৭৭ ছবির কাজ হারান রাহুল

0

Last Updated on June 28, 2023 8:30 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। সাড়ে চার দশকের সাম্রাজ্য। বিভিন্ন ভাষায় সাড়ে চারশো ছায়া ছবির গান,যার মধ্যে ৩৫৬ টি সুপারহিট। দেড়শোর বেশি ফেস্টিভ সিঙ্গলস, যার প্রায় সবই হিট। ১৯৫৫ থেকে ১৯৮০ ভারতীয় আধুনিক ও চলচিত্রের সংগীতের ফরম্যাট বদলে দেওয়া সম্রাট, বড্ড একা হয়ে পড়লেন। ১৯৮৭ সালে প্রিয় বন্ধু কিশোরের মৃত্যুতে আরও একা হয়ে যান রাহুল। তখন আশির দশকের শুরু। মুম্বাইতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের শুরু। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে বিপুল পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট হচ্ছে অন্ধকার জগৎ থেকে। এদিকে নতুন ও তরুণ সুরকারদের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাপ্পি লাহিড়ী,লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল, আনন্দ মিলিন্দ, নাদিম শ্রাবণ,যতীন ললিত,কল্যানজি আনন্দজি, হিট গান দিচ্ছেন।পাল্টাচ্ছে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সমীকরণ,সম্পর্কের থিওরি।

ষাটের দশকে যেখানে মোহাম্মদ রফি,তাঁর গলায় এই গান মানাবে না বলে,তরুণ কিশোরকে গান তুলে দিচ্ছেন,আশির দশকে হিসেবটা সম্পুর্ন আলাদা। তখন প্রিয় বন্ধু নাসির হুসেন কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবিতে সই করিয়েও নিলেন না রাহুলকে। অন্তত ১৬ টি ছবির ক্ষেত্রে এমনই হল রাহুলের সঙ্গে। নাসির হুসেনের মতোই একই কাজ করলেন ছোট ভাইয়ের মত সুভাষ ঘাই। রাম লক্ষণ ছবিতে সই করিয়েও শেষ দিনে তাঁর কন্ট্রাক্ট ক্যানসেল করেন সুভাষ। একই ভাবে জশ চোপড়া,মনমোহন দেশাইও রাহুলকে ব্রাত্য রাখলেন কোনও অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে। সিলসিলা ছবির মিউজিকের দায়িত্ব পেলেন শিবকুমার শর্মা ও হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। অন্যদিকে মনমোহন দেশাই অমিতাভের তিন সুপারহিট ছবি নসিব, মর্দ, কুলি তিন ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন যথাক্রমে লক্ষীকান্ত পেয়ারেলাল ও তরুণ অন্নু মালিককে।

রাহুলের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করল একটা চক্র। খুব প্রভাবশালী চক্র। কোনও ভাবেই যেন রাহুল ছবি না পান তার ব্যবস্থা তৈরি হল। একের পর এক সিনেমার কন্ট্রাক্ট রাহুলের হাত থেকে নিঃশব্দে সরিয়ে নেওয়া হল। রাহুল দেব বর্মনকে কোনও কাজ দেওয়া হত না! বলা হত, উনি সুর করলে ছবির গান হিট হবে না!
তবুও রাহল যা ছুঁয়েছেন তা সোনা ফলিয়েছে। গুলজার তাঁকে ইজাজত এবং মাসুম ছবির সুর করতে দিলেন। কালজয়ী হয়ে গেল দুটো ছবির সংগীত। সঞ্জয় দত্তের ডেবিউ ছবি রকি, কুমার গৌরবের লাভ স্টোরি ,সনম তেরি কসম, এবং সানি দেওলের বেতাব হিট দিলেন রাহুল। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পঞ্চম। রাহুলের অন্ধ ভক্ত বিধু বিনোদ চোপড়া তাঁর প্রথম ছবির জন্য রাহুলের কাছে গেলেন। অভিমানী রাহুল প্রথমে রাজি হননি। খুবই অসুস্থ ছিলেন সেই সময়।

একই সঙ্গে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। মাঝে মাঝে বন্ধু রাজেশের(খান্না) সঙ্গে কথা হত। রাজেশও তখন ডিপ্রেশনে,প্রবল আর্থিক কষ্টে ভুগছেন,পরিচিতরা আর আসে না। তবুও বন্ধু রাহুলকে সান্তনা দিতেন। বলতেন,মিডিয়া লোগ ইনকে সাথ মিলি হুই হ্যায়। একটু সবুর করো। দিন আসবে। আবার রংবাজি করব আমরা। কিশোর আজ হোতা তো দেখ লেতা সবকো।কিন্তু সে দিন আর আসেনি। হিন্দি চলচিত্রের দুই সিংহাসনচ্যুত সম্রাট পুরানো দিনের নিস্টালজিয়ায় ডুবে ছিলেন।

নাছোড় বিধু বিনোদ জোর করে তাঁর পরিন্দা ছবিতে সুর করালেন রাহুলকে দিয়ে। তুমসে মিল কর এইসা লাগা, পেয়ার কি মোড় পে সুপারহিট হল। এর পরে নাইন্টিন ফরটি টু আ লভ স্টোরি’। আর ডি-র হাতে কোনও কাজ ছিল না। ১৯৮৮ সালে তাঁর হার্ট অ্যাট্যাক হয়। লন্ডনের হাসপাতালে তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তিনি কতগুলি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন তবে তাঁর বেঁচে থাকাকালীন এই ছবিগুলি মুক্তি পায় নি। পঞ্চমের সুর দেওয়া শেষ ছবি ‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’।১৯৮৮ সালে তাঁর হার্ট অ্যাট্যাক হয়। লন্ডনের হাসপাতালে তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়।অত্যন্ত অভিমান নিয়েই ভারতীয় আধুনিক ও চলচিত্রের মিউজিক জিনিয়াস রাহুল চলে গেলেন।

তথ্য ও সূত্র। পঞ্চম অ্যান্ড পঞ্চম আনলিমিটেড। ভূপিন্দর সিং