Last Updated on October 13, 2021 3:34 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। ষড়রিপু কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ মাৎসর্য- মানুষের সব অপরাধের পিছনে ষড়রিপু ভূমিকা রয়েছে, অপরাধ বিজ্ঞানের এই সূত্র গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত এই ছবির শুরুতেই ব্যাখ্যা দেন। ক্যামেলিয়া প্রযোজনার পুজোর উপহার ষড়রিপু ২ জতুগৃহ সেই সূত্রের বাইরে গিয়ে চলচিত্রের একটি বহু সনাতন সূত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে, ভালো গল্প হলে, দর্শক দেখবেই। ষষ্ঠীর ভর বিকালে প্রচুর চলচিত্রপ্রেমী দর্শককে দেখলাম ছবিটি দেখার জন্য আইনক্সে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বাংলা চলচিত্রের জন্য ভালো ক্যাম্পেন এটা। দীর্ঘ মহামারীর পরে যখন মাত্র ৫০ শতাংশ অকুপেন্সি নিয়ে সিনেমাহলে লড়ছে বাংলা ছবি, তখন ছবি দেখার জন্য এই ভিড় চলচিত্রপ্রেমী হিসাবে আমাকেও অনুপ্রাণিত করে,সাহস যোগায়। একটা ভালো রহস্য বা ক্রাইম থ্রিলার হয়ে ওঠার জন্য যে যে এলিমেন্ট একটা ছবির প্রয়োজন তা ক্যামেলিয়া প্রযোজিত এই ছবিতে ১০০ শতাংশ রেখেছেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী।
টানটান চিত্রনাট্য, ঘনীভূত হওয়া কৌতূহল, একদিকে গোয়েন্দা অন্যদিকে নেগেটিভ চরিত্রের দুর্দান্ত ব্যালেন্স এবং সমাধান, এই সবকটি ক্ষেত্রে অয়ন দশে দশ। গল্পের গতি বা আরও বিশদে বললে অপরাধের গতিপ্রকৃতি প্রথম দিকে হু ডান ইট ফর্মুলায় এগোলেও,ছবির শেষদিকে ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল অপরাধের মোটিভ, অপরাধের মাত্রা এবং কে অপরাধী হতে পারে। রহস্য ছবির একনিষ্ঠ দর্শক হিসাবে চিন্তা হচ্ছিল, ছবি শেষে এসে ঝুলে যাবে নাতো? অয়ন খেলাটা ঘুরিয়ে দিলেন। হু ডান ইট ফর্মুলা থেকে খুব সন্তর্পনে ছবি শিফট করল, হাউ ডান ইট ফর্মুলায়। অর্থাৎ যখন ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে আসছে কে অপরাধী, তখন ছবিটা গোয়েন্দা চন্দ্রকান্তকে ধরেই এগোতে লাগল, কেমন ভাবে অপরাধটা হয়েছে, সেই রাস্তায়। এটা যদিও আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ, এর সঙ্গে পরিচালক একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু এই ভাবনা আমার কাছে ইউনিক লেগেছে। যার এই ছবিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি। এই জার্নিতে একটাই সমস্যার সামনে ছবি পড়তে পারত।

সমস্যাটা হল এত হাতে অপরাধ বিজ্ঞান ও মনস্তাত্ত্বিক আর একটি এলিমেন্ট তখনও বাকি ছিল। বলা যায় ব্রহ্মাস্ত্র, হিম্যানেটেরিয়ান অবজারভেশন। সত্যজিতের ফেলুদার গল্পে কিংবা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ব্যোমকেশ বক্সীও একাধিকবার এই থিওরিতে গল্প শেষ করেছেন। গোয়েন্দা সত্য উদ্ঘাটন করে ফেললেও,মানবিক কারণে অপরাধীকে ছেড়ে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রেও তাই ঘটে। গল্প বলে এই ছবির টানটান মাধুর্য নষ্ট করাটা অপরাধ। তবে গল্পের ধরণের সঙ্গে আলফ্রেড হিচককের দা ট্র্যাপ গল্পের বুনোটের মিল পেলাম ছবির মূল দুটো পিলার। অর্থাৎ ছবির ভরকেন্দ্র ধরে রেখেছেন গোয়েন্দা চন্দ্রকান্তর ভূমিকায় চিরঞ্জিত এবং সংগীত পরিচালক ও নেগেটিভ চরিত্রে দেবরাজ সেনের চরিত্রে শাশ্বত চট্টপাধ্যায়। দুর্দান্ত দুই অভিনেতা যদিও চিত্রনাট্যের জন্য কোনও দৃশ্যে মুখোমুখি হয়নি কিন্তু এই ছবির সম্পদ এই দুই অভিনেতা। শাশ্বত এই ছবিতে যে অভিনয়টা করেছেন, তা বাংলা ছবিতে অবশ্যই চর্চিত হবে বহু দিন। একটা উদাহরণ ও বেঞ্চমার্ক তৈরি করে গেলেন তিনি। ম্যানারিজম, ডায়ালগ থ্রোয়িং, অভিব্যক্তি সব কিছুতে ব্যতিক্রম।

অন্যদিকে নিজের উচ্চতা,কন্ঠস্বর আর পর্দায় দুর্দান্ত উপস্থিতি দিয়ে অন্য লেভেলে গোয়েন্দা চরিত্রটা নিয়ে গেলেন চিরঞ্জিত। এই দুই অভিনেতার ভারসাম্যটা খুব প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে মেঘার চরিত্রে অরুনিমা দুর্দান্ত। ওর অসহায়তা,যন্ত্রনা,প্রেম, না বলতে পারা কথা সব ছুঁয়ে গিয়েছে দর্শকদের। অন্য একটি চরিত্রে ছোট্ট সুযোগে ভালো অভিনয় করে গেলেন বরুণ চন্দ। এই ছবির অন্যতম সম্পদ সংগীত। রুপম ইসলাম এই ছবির সংগীত পরিচালকের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি এই ছবিতে যা কাজ করেছেন, তা পুরস্কার পাওয়ার জন্য। অনাবশ্যক মিউজিক পুরে দেননি, ছবির চিত্রনাট্য ওর সামনে পরিষ্কার ছিল। তাঁর সুরে নচিকেতার গাওয়া এখানে জলের দাগ অসাধারণ কম্পোজিশন। নীল নারী ও ছবির একদম শেষে এভাবেই তুমি বড় হোযো দুর্দান্ত লিরিক ও শ্রুতিমধুর। ছবির শেষ দৃশ্যে এই গান, ছবির বৃত্ত সমূর্ন করে। ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের এক সাহসী সিদ্ধান্ত, এবং উদ্যোগে এই ছবি দর্শক