RRR: রাজামৌলির ছবি ‘আরআরআর’ দক্ষিণী আজগুবি গাঁজাখুরি

0

Last Updated on March 27, 2022 12:05 AM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। সৌগত সরকার। রাজামৌলির (SS Rajamouli)পরিচালনা, কে সেন্থিল কুমারের ক্যামেরা, অস্কারজয়ী তিন হলিউড স্টান্ট ডিরেক্টরের একশন,৯০ জনের একটা টিমের ভিজুয়াল এফেক্ট,আর দুই দক্ষিণী তারকা (South Indian Actor) জুনিয়ার এনটিআর (Junior NTR) এবং রামচরণ (Ram Charan), এটাই আর আর আর (RRR) ছবির ফর্মুলা, তাতেই হৈচৈ মাতামাতি। ২৪ ঘন্টায় বিশ্বজুড়ে হল কালেকশন ২৫০ কোটি টাকা। দক্ষিণী ছবি নিয়ে হটাৎ বাঙালি উঠতি সিনেমাপ্রেমীদের আদিখ্যেতা, সংবাদপত্রের পাতায় দক্ষিণী ছবির পদলেহন, সব মিলিয়ে এক দক্ষিণী ঝড় তোলার চেষ্টা চলছে। তাতে লাভ কিছুই হচ্ছে না, ক্ষতি হচ্ছে সর্বভারতীয় হিন্দি ছবির, আঞ্চলিক বাংলা ছবির। গল্পহীন, উদ্দেশ্যহীন, সামাজিক বার্তাহীন এই দক্ষিণী ছবিগুলো গত ৭/৮ বছর ধরে প্রমোট করা হচ্ছে মূলত হিন্দি ছবিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য। কুৎসিত মানের এই একশন সর্বস্ব ছবিগুলো দূরপাল্লার বাস থেকে মাঝারি ও কমদামি হোটেল , গেস্টহাউসে চালিয়ে দেওয়া হয় সারা দিন ধরে। অস্বীকার করার উপায় নেই , ইতিমধ্যেই প্রচুর দর্শক তারা ধরতে পেরেছে। প্রচুর বাঙালি বাড়িতেও হিন্দি ছবির চল কমে এই দক্ষিণী ছবির ডাবিং রমরমিয়ে চলে। 


প্রথমেই বলে রাখি এই ছবিকে নম্বর দেওয়ার কোনও মানে নেই। নায়কের উপস্থিতিতে বাঘের গর্জন, এক চাপড়ে এক ডজন ভিলেন মাটিতে রাবারের বলের মত ড্রপ খেয়ে উড়ে যাওয়া, এসব নিয়ে আলোচনার কোনও মানে হয় না। গল্পের গরু এখানে গাছে নয়, চাঁদে পৌঁছেছে। প্রথমেই বলে রাখি রাজামৌলির এটা মিথলজি ফ্যান্টাসি সিরিজের তৃতীয় ছবি। প্রথম দুটি বাহুবলী ১/২, এটিও পুরো ফ্যান্টাসি না বানিয়ে কিছুটা দেশপ্রেমের ছোঁয়া আছে।কমারাস ভীমা ও আলুরি সীতারামা রাজু নামের দুই বীর যোদ্ধার কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ট্রিপল আর’ সিনেমাটি। জল, বায়ু ও মাটি এই তিন সত্তা দিয়ে রাজামৌলি একটি গাঁজাখুরি গল্পের জাল বুনেছেন। পরিচালক হিসেবে ১০০ ভাগ সফল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। দক্ষিণের প্রাচীন জনজাতি, লালা লাজপত রাই, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম দুই অজেয় যোদ্ধা এই হল ছবির মশলা। তারপর ছবি জুড়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই, বারুদের স্তুপে ঝাঁপ, ৫০০ জনের সঙ্গে একা মহড়া, হিংসা, প্রেম, পারবারিক সম্পর্ক, সব মিলিয়ে বিশাল ক্যানভাসে এক মার্ভেল মুভির মত। ছবিতে অজয় দেবগন (Ajay Devgn), আলিয়া ভাট (Alia Bhatt) রয়েছেন।  এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন দক্ষিণী সুপারস্টার জুনিয়র এনটিআর ও রাম চরণ। এ ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট, অজয় দেবগনসহ আরও অনেকে। ছবিটাকে দাড় করিয়ে রেখেছে দুর্দান্ত গ্রাফিক্স, সাউন্ড, ক্যামেরা আর একশন। বাকিটা শূন্য। 

একমাস আগেই আল্লু অর্জুনের পুস্পা এমনই ঝড় তুলেছিল বড় পর্দায়। থামল গিয়ে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। একই থিওরি, একই ফর্মুলা। দক্ষিণী ছবির এই অন্তঃসারশূন্য গল্প ও আজগুবি একশন ছবিকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত দক্ষিণের বাইরে কোথাও পাস মার্কও দেওয়া হত না। কারন তখন মুম্বাই চলচিত্রে রাজত্ব করছেন তিন খান, অক্ষয়, সঞ্জয়, অজয়রা। তার আগে অনিল, জ্যাকি, আর অমিতাভতো আছেনই। পাশে নানা, অনুপম, ওম, নাসির। অতএব স্বয়ং রজনীকান্ত,কমল হাসান, চিরঞ্জীবি কিংবা নাগার্জুনের মত দক্ষিণের মহা তারকাদের মুম্বাইতে ছবিতে অভিনয় করে সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠা পেতে হত। তাই সাদমার মত ছবি হয়েছে, পুস্পক হয়েছে, এক দুজে কে লিয়ে কিংবা সাগর এর মত দুর্দান্ত রোমান্টিক ছবি হয়েছে।এখন হিসেবটা উল্টো। ভালো দক্ষিণী ছবির গল্পের কপিরাইট কেনা শুরু হওয়া থেকেই এই পতনের শুরু। ভুলভুলাইয়া,অন্ধাধুন, বেবি, দৃশ্যম এর মত দক্ষিণী ছবির রিমেক হিন্দিতে সাড়া ফেলে দেওয়ার পরেই টনক নড়ে দক্ষিণী প্রযোজকদের। তারা বুঝে যায়, হিন্দিতে ভালো গল্পের অভাব। রাজামৌলি ব্রেকটা দিলেন। বাহুবলী সব ভাষায় রিলিজ করল। ১২০০ কোটির ব্যবসা করল। ব্যাস তারপরেই কেজিএফ, পুস্পা, এবার আর আর আর।

আগামী এক বছরে ২৩ টি এমন বিগ বাজেট ও হৈচৈ ফেলে দেওয়া দক্ষিণের ছবি হিন্দি ডাবিং এ রিলিজ হতে চলেছে।  তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন অনুপম খের। তিনি হিন্দি ছবির ডিস্ট্রিবিউটির ও প্রযোজকদের খোলা চিঠি দিয়ে দক্ষিণের ছবির হিন্দি ডাবিং করে রিলিজের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।  মূল্যহীন,অবাস্তব, আজব গল্প নিয়ে এই দক্ষিণী মশলা ছবি আজ শুধু বাজার কাপাচ্ছে তা নয়, বিরাট প্রশংসাও পাচ্ছে, এটাই আশ্চর্যের। এমন বিরাট গ্র্যাঞ্জারের ছবি হিন্দিতে অন্তত পঞ্চাশ বছর আগেই হয়ে গেছে। এমন একশনের ছবি অন্তত ৪০ বছর আগেই এসে গিয়েছে। হ্যা তখন গ্রাফিক্স ছিল না। কিন্তু তাতে শান, শালিমার,শোলে কিংবা মুঘল ই আজমের মত ছবি তৈরিতে কোনও কমতি হয়নি। সমস্যা ছবি তৈরিতে নয়, দর্শক রুচিতে। অমিতাভের সত্তরের দশকের ছবিতে বাঘের সঙ্গে লড়াই দেখে যারা আজগুবি, গাঁজাখুরি বলত,সেই দর্শকই আজ জ্যান্ত বাঘের ছাল ছাড়িয়ে নেওয়া দেখে হাততালি দিচ্ছে,সংবাদপত্রে বাহবা দিচ্ছে। দর্শক রুচির এত অবনতি হয়ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মুম্বাই চলচ্চিত্রও ভাবতে পারিনি। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here