Last Updated on September 4, 2020 8:43 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন: করোনা এবং তার জেরে পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘতম লকডাউনে বদলে গিয়েছে গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা। স্বাভাবিকভাবে তার বড়োসড়ো প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপরেও। শুধু লকডাউন নয় সুন্দরবনের ক্ষেত্রে আরও বড় একটা ভূমিকা নিয়েছে গত মে মাসের ভয়ানক আম্ফান ঘূর্ণিঝড়। তাই বিগত যাবতীয় রেকর্ড তছনছ করে দিয়ে আম্ফান ঘূর্ণিঝড় এর মতই দুরন্ত গতিতে সুন্দরবনের বেড়েছে বাঘের হানায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যুর ঘটনা।
এমনিতেই জলে কুমির ডাঙায় বাঘ এই নিয়ে সুন্দরবনের মানুষের জীবনযাত্রা। পরিসংখ্যান বলছে গত এপ্রিল মাস থেকে আজ পর্যন্ত সুন্দরবন বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত 27 জন। এদের মধ্যে যেমন মৎস্যজীবী রয়েছেন, রয়েছেন জঙ্গলে মধু কাটতে যাওয়া মউলে, এমনকি বনকর্মীদের চোখ এড়িয়ে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাওয়া গরিব মানুষ রয়েছেন।
বনদপ্তর এর আধিকারিকদের সঙ্গে এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যজীবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে ৩ টি কারণ উঠে আসছে।
প্রথমত, করো না এবং তার মোকাবিলায় গোটা দেশে লকডাউন এর জেরে বহু মানুষ কর্মহীন হয়েছে। বাধ্য হয়েই সুন্দরবনের বহু মৎস্যজীবী এবং কৃষিজীবীরা জঙ্গলে যাচ্ছেন মাছ, কাঁকড়া অথবা মধুর খোঁজে। এদের মধ্যে অধিকাংশই বনদপ্তর এর কোনো অনুমতি ছাড়াই লুকিয়ে-চুরিয়ে বাঘেদের জন্য সংরক্ষিত গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়ছেন। বহু ক্ষেত্রেই জঙ্গলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং কোন কোন জঙ্গলে কোন এলাকায় বাঘের আনাগোনা বেশি সেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
দ্বিতীয়ত, আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের সময় কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করতে গিয়ে ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং তার স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র। মারা পড়ে হাজার হাজার হরিণ, বুনো শুয়োর এবং অন্যান্য বহু ছোটখাটো প্রাণী। এখানেই টান পড়তে শুরু করে বাঘের খাবারে। বনদপ্তর এর অভিজ্ঞ আধিকারিকদের মতে সাধারণত বনের মধ্যে হরিণ অন্যান্য সহজ শিকার পেয়ে গেলে মানুষ খাওয়ার দিকে উৎসাহী হয় না বাঘ। কিন্তু হরিণ অথবা শুয়োরের মতো প্রাণীর অভাবে বাঘ তাই এতে থাকছে জঙ্গলে যাওয়া মৎস্যজীবীদের জন্য।
তৃতীয়তঃ, সজনেখালি এবং সুধন্যখালির জঙ্গলে বেশ কয়েকটি ডিয়ার পার্ক তৈরি করে এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য বেশ কয়েকটি ডিয়ার পার্কে জন্ম নেওয়া প্রায় 2 হাজার হরিণ সুন্দরবনের জঙ্গলের বিভিন্ন রেঞ্জে ছাড়া হলেও, তার সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পেট ভরানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। কারণ আম্ফান পরবর্তী সময় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেখানে হরিণের খাওয়ার কম পড়ছে।