Last Updated on July 31, 2022 5:44 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রের পরে এবার বিরোধী জোট শাসিত ঝাড়খন্ডে অপারেশন লোটাস চালিয়ে সরকার ভাঙতে উদ্যোগী হওয়ার অভিযোগ উঠল ভাজপার বিরুদ্ধে। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে গোটা দেশে যে ক’টি রাজ্যে ভাজপা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ভাজপাকে ঠেকানোর জন্য একজোট হয়ে সরকার গঠন করেছিল একে একে সেই সমস্ত রাজ্যের সরকার ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রথমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে পাঠিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়া এবং তারপরেই বিপুল অংকের টাকা খরচ করে বিরোধী দলের বিধায়কদের কিনে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের ভাজপা সরকারের বিরুদ্ধে। প্রায় কোটি টাকা নিয়ে ৩ বিধায়ক আটক হতেই অপারেশন লোটাসের তত্ত্ব খাড়া করল কংগ্রেস।
হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভাজপা
মহারাষ্ট্রে শিবসেনা কংগ্রেস এবং এনসিপি জোটের সরকার ফেলে দেওয়ার পরেই প্রথমে ভাজপা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং তারপরে প্রকাশ্যে বাংলার নব্য ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী, ভাজপা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ একের পর এক ভাজপা নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন মহারাষ্ট্রের পরে সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য ভাজপার টার্গেট রয়েছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা এবং কংগ্রেস জোট শাসিত ঝাড়খন্ড, কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান এবং তৃণমূল শাসিত বাংলা। কেন্দ্রের শাসকদল বাজপা যে সেই ব্লুপ্রিন্ট মেনেই এগিয়ে চলেছে তার প্রমাণ ইতিমধ্যে মিলতে শুরু করেছে তাদের টার্গেট লিস্টে থাকা রাজ্যগুলিতে।
কি ঘটেছে?
গাড়িতে করে পাচার হচ্ছিল প্রায় কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সেই গাড়ি। শনিবার হাওড়ার পাঁচলা থেকে একটি গাড়ি আটক করা হয়, যার ভিতর থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। আটক করা হয় ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ককে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাপান-উতোর শুরু হতেই এবার ভাজপার দিকে অভিযোগ ঠেলে দিল কংগ্রেস। ঝাড়খন্ড সরকারের জোট সঙ্গী কংগ্রেসের অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের সরকার ভাঙতেই ওই তিন কংগ্রেস বিধায়ককে টাকা দিয়েছিল ভাজপা।
State পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঝাড়খন্ডে বড় কোন অপারেশনের জন্য কলকাতার একটি জায়গা থেকে এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমনির গাছের একটি ঘাঁটি থেকে গোটা অপারেশন কন্ট্রোল করছে বলে আগেই গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই শনিবার বিকেল থেকে মুম্বই রোডে কড়া পুলিশি নজরদারি চালানো হচ্ছিল। হাওড়ার পাঁচলার কাথে রানিহাটি মোড় থেকে আটক করা হয় একটি কালো রঙের ফরচুনার গাড়ি। তার ভিতর থেকেই প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি আটক করার পাশাপাশি তিন কংগ্রেস নেতাকেও আটক করা হয়েছে। রাতভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি, ইনকাম ট্যাক্স, পুলিশের ইরফান আনসারি, রাজেশ কচ্ছপ, নমন বিক্সল নামের ঝাড়খণ্ডের ৩ কংগ্রেসের বিধায়ককে।
জানা গিয়েছে, ধৃত কংগ্রেস বিধায়করা হলেন জামতাড়ার বিধায়ক ইরফান আনসারি, খিজরির বিধায়ক রাজেশ কচ্চপ ও কোলেবিরার নমন বিক্সাল কোনগারি। পুলিশের কাছে বিধায়করা জানিয়েছে বড়বাজার থেকে শাড়ি কেনার জন্যে টাকা নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই শাড়ি আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ঝাড়খণ্ডের গ্রামীণ অঞ্চলে বিলি করার কথা ছিল। তবে বড়বাজারের বদলে শনিবার তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণির উদ্দেশ্যে কেন যাচ্ছিলেন? সেই নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
কংগ্রেসের মুখে অপারেশন লোটাস
তিন কংগ্রেস নেতা আটকের পরই ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বন্ধু তিরকে বলেন, এটা ভাজপার অভ্যাস যে সরকার তাদের না হলেই, তার পতনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। একই কাজ হেমন্ত সোরেনের সরকারের সঙ্গেও করা হচ্ছে। ওই বিধায়কদের একমাত্র সরকার ফেলার জন্যই টাকা দেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশও টুইট করে লেখেন, ঝাড়খণ্ডে ভাজপার অপারেশন লোটাসের পর্দাফাস আজ হয়ে গিয়েছে হাওড়ায়। দিল্লির হাম দো পরিকল্পনায় ঝাড়খণ্ডেও একই কাজ করার চেষ্টা চলছিল যেভাবে মহারাষ্ট্রে ই-ডি(একনাথ শিন্ডে-দেবেন্দ্র ফড়ণবীস)কে ব্যবহার করে সরকারের পতন হয়েছে এবং ভাজপার জোট সরকার গঠন হয়েছে।
বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের
ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের গাড়ি থেকে বিপুল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল৷ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রথমে ট্যুইট করে জানায়, ঝাড়খণ্ডে ঘোড়া কেনাবেচার গুঞ্জন এবং সরকার ফেলে দেওয়ার সম্ভাব্য পরিস্থিতির মধ্যে তিন জন কংগ্রেস বিধায়কের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধার হয়েছে৷ এই টাকার উৎস কী? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কি কোনও পদক্ষেপ করবে? নাকি বাছাই করা কয়েকটি ক্ষেত্রেই নিয়ম প্রয়োগ করা হয়?