Durga Puja : বাংলার দুর্গা পুজোয় এবারের বিনিয়োগ ৫০,০০০ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ৩ লক্ষ

0

Last Updated on October 4, 2022 6:55 PM by Khabar365Din

সৌগত মন্ডল। খবর ৩৬৫ দিন।

দুর্গাপুজো। বাংলা তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তবে দুর্গা পুজো মানে শুধুমাত্র উৎসবে মেতে ওঠা নয়, বাংলার একটা বড় অংশের মানুষের সারা বছরের সবথেকে বেশি উপার্জন হয় এই দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করেই। তার মধ্যে এবারের দুর্গাপূজো বাঙালির কাছে ভীষণ রকম স্পেশাল। ইউনেস্কো বাংলার দুর্গা পূজাকে আন্তর্জাতিক হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছে।


মমতা একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বাংলার দুর্গা পূজাকে আন্তর্জাতিক হেরিটেজের স্বীকৃতির জন্য লড়াই করে গিয়েছেন ঠিক তেমনভাবেই বাংলার দুর্গা পূজাকে নতুন ছাঁচে ঢেলে তার বাণিজ্যিকীকরণ করার জন্য একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই এবারের দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে বাংলা তথা বাঙালির তো বটেই দেশের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন শুধুমাত্র কলকাতার দুর্গা পুজো দেখতে। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার দুর্গোৎসবকে তুলে ধরার জন্য এবং পাশাপাশি নিজেদের ব্রান্ডের বিজ্ঞাপন করার জন্য অন্যান্য বাড়ির তুলনায় অনেক বেশি করে এগিয়ে এসেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। যার অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি হিসেবে বাংলা তথা ভারতের যেকোনো পুজো বা উৎসবকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগের পরিমাণ তৈরি করেছে নয়া রেকর্ড। শুধুমাত্র এবারের দুর্গা পুজোয় বাংলায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। প্রায় দু বছর করোনা মহামারীর জন্য গোটা বিশ্বের মতই ভারতেও বিপুল সংখ্যক চাকরি ছাঁটাই এবং বেকারত্ব বৃদ্ধির মধ্যে শুধুমাত্র বাংলার দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে এবারে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৩ লক্ষ মানুষের।

অন্যদিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিভিন্ন পুজো কমিটিকে যে স্পনসরশিপের টাকা দেয় এবং বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করে সেই অংকটা করোনা মহামারী আসার আগে বাংলার ক্ষেত্রে যেখানে গড়ে ১৫০ থেকে 200 কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করতো, এ বারে শুধুমাত্র বাংলাতেই কর্পোরেকম সংস্থাগুলি দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

কলকাতা এবং শহরতলীর প্রায় 410 টি পুজো কমিটির যৌথ মঞ্চ ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের চেয়ারম্যান পার্থ ঘোষ জানালেন, দুর্গা পুজো তো ঠিক পাঁচদিনের উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পুজো শুরুর প্রায় 3-4 মাস আগে থেকেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় জোরকদমে। প্রতিমা শিল্পী থেকে শুরু করে থিম মেকার, বিজ্ঞাপনে পোস্টার ব্যানার হোর্ডিং, প্যান্ডেল বাঁধার কারিগর – সকলেই বেশ কয়েক মাস আগে থেকে প্রতিটি পুজো কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।


ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের চেয়ারম্যান হবার পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম নামকরা পূজো শিব মন্দির পূজা কমিটির সঙ্গে প্রায় অর্ধশতাব্দীর বেশি জড়িয়ে রয়েছেন পার্থ বাবু। তিনি বলেন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকটি পুজো উদ্যোক্তা পুজো কমিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মন্ডপ তৈরির কারিগর থেকে শুরু করে প্রতিমা শিল্পী, পুরোহিত, ঢাকি, গাড়িচালক, ইলেকট্রিশিয়ান, প্যান্ডেলের বাঁশ বাঁধার শ্রমিক, মন্ডপ পাহারা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তারক্ষী – বিভিন্ন দিকে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে কর্মসংস্থান যোগাতে সাহায্য করে এক একটি দুর্গাপুজো।

তবে এ তো গেল প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানের বিষয় দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে। ফোরামপুর দুর্গোৎসবের সভাপতি কাজল সরকার আবার অন্য একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। কাজল বাবুর মতে, দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক মাস আগে থেকে যেভাবে পোষাক পরিচ্ছদ জুতো সোনার গয়না থেকে শুরু করে জাঙ্ক জুয়েলারি, শারদীয়া সাহিত্য থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত কাজের লোক নেওয়া, জামা কাপড় গয়না গাটি জুতোর দোকানে অতিরিক্ত লোক নেওয়া সবকিছুই শুধুমাত্র দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থানের জন্ম দেয়।

করোনা মহামারী আসার আগে ২০১৯ সালে কলকাতায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে বাংলার দুর্গোৎসবে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে একটি সার্বিক সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী তিন বছর আগে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা বাংলার বার্ষিক জিডিপি-র প্রায় আড়াই শতাংশ। ব্রিটিশ কাউন্সিল সূত্রে জানা গিয়েছে গত দুবছর পূজো নিয়ে সেই ভাবে মাতামাতি না হওয়ায় এবারে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বেড়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের পরিমাণ। ‌ যাতে অনেকটাই সাহায্য করেছে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক হেরিটেজ তকমা এবং অবশ্যই বাংলার সরকারের একের পর এক উৎসাহ ব্যঞ্জক প্রকল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here