Last Updated on January 10, 2021 11:36 AM by Khabar365Din
সৌগত মন্ডল। ৩৬৫ দিন।
২৩ জুন, ১৭৫৭। বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন এটাই। প্রায় আড়াইশো বছর আগের এই দিনে পলাশীর প্রান্তরে শুধুমাত্র বাংলার মসনদে বসে পুতুল নবাব সাজার লোভে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরজাফর সিরাজের পিঠে ছুরি মেরে লর্ড ক্লাইভের ব্রিটিশ সেনাকে জয়ী করেছিলেন।

৮ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখটাও বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসে লেখা থাকবে একই ধরনের আরেক বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন হিসেবে। এই দিনেই আধুনিক ভারতের কৃষকদের অধিকার রক্ষার লড়াইতে জয়ী কৃষক আন্দোলনের ধাত্রী ভূমি হিসেবে স্বীকৃত নন্দীগ্রামে ভারতের কৃষকদের অধিকার ছিনিয়ে সদা প্রস্তুত বিজেপি নেতাদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকদিন আগে পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। সেই বিজেপিকে, যে বিজেপি সরকার গোটা দেশের কৃষকদের হাত থেকে তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য একতরফাভাবে কৃষি বিল পাস করেছে। সেই বিজেপি যাদের চালানো গুলিতে বছর দুয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশে কৃষি ঋণ মুকুবের দাবিতে আন্দোলনরত ৬ কৃষক নিহত হয়েছিলেন।
হিস্টরি রিপিটস ইটসেলফ। আড়াইশো বছর পরেও কী অদ্ভুত সামঞ্জস্য!
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মরিয়া লড়াই করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বানিয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে। আড়াইশো বছর পরেও একইভাবে গুজরাতি বানিয়াদের হাত থেকে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মমতা যখন মরিয়া লড়াই করে চলেছেন, বাংলার সবথেকে বেশি জেলায় দলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নজরদারি পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভেন্দু অধিকারী সেই ২০১৪ সাল থেকে অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে চলেছেন, কিভাবে ধীরে ধীরে বাংলাকে গুজরাতি বানিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া যায়।
ইতিহাস বলে পলাশীর প্রান্তরে অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে সিরাজউদ্দৌলা তাঁর প্রায় ৫০০০০ সেনার নেতৃত্ব মীরজাফরের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন বড়জোর ৩০০০ বৃটিশ সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে। কিন্তু শিবিরে সিরাজকে মিথ্যে অভয় দিয়ে রবার্ট ক্লাইভের সেনাকে এগিয়ে এসে যুদ্ধ জয় করতে দেন মীরজাফর। নবাবের বাহিনীর অন্য সেনানায়ক রাবার বোর্ড যুদ্ধ শুরু করার অনুমতি চাইলেও কামান অথবা গুলি না চালিয়ে ক্লাইভের সেনাকে অগ্রসর হতে দেন মীরজাফর।
একইভাবে গত লোকসভা নির্বাচনেও আধুনিক বাংলার মীরজাফর বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত করে তাদের হাতে তুলে দেন মালদা, পশ্চিম মেদিনীপুর, দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের লোকসভা আসন গুলি।