Last Updated on November 20, 2023 6:37 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নরেন্দ্রমোদী স্টেডিয়ামে ভারতের লজ্জার পরাজয়। ভারতের মাটি থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের জৌলুসকে কার্যত দুমড়ে দিয়ে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ নিয়ে দাপিয়ে চলে গেল। একে কার্যত আত্মসমর্পন বললেও কম বলা হয়। গত ৭২ ঘন্টায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আগাম সাফল্যর প্রচার চলছিল নির্লজ্জভাবে। দেশাত্ববোধের চূড়ান্ত পারদ চড়িয়ে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর প্রত্যাশার পাহাড় প্রমাণ চাপ রোহিতদের ঘাড়ে চাপিয়ে কত বড় ভুল জয় শাহর ক্রিকেট বোর্ড করে ফেলেছে, তা খেলা শুরুর প্রথম ২০ মিনিটেই পরিষ্কার হয়ে গেল।
মাথার ওপর রাফায়েলের সামারসল্ট, মার্কিন লেজার শো, শাহরুখ,রণবীরের গালা ইভেন্ট, স্টেডিয়ামে প্রায় অর্ধেক ক্যাবিনেট নিয়ে অমিত শাহ, নরেন্দ্রমোদী স্টেডিয়াম জুড়ে নীল জার্সির মেক্সিকান ওয়েভ, কাপ জিতলেই মোদী স্টেডিয়ামে ঢুকবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আসবেন আগে থেকে তৈরি করা জয়গাঁথা পাঠ করবেন, পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবে জয়েন্ট স্ক্রিন, যজ্ঞ, সকালে পাঁঠার মাংসের দোকানে লাইন, সবই চিত্রনাট্য মেনে তৈরি ছিল। ছিল না শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্ল্যান বি। সারা বছর সবকটি ক্লাস টেস্টে অঙ্কে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে আসা ছেলেটা মাধ্যমিকে ৪৪ এ আটকে গেল। প্রশ্নপত্র কমন আসেনি!
কুলদীপের বলে ডাবলস নিয়ে ট্রভিস হেড শতরান পূর্ণ করতেই দর্শক নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম ছাড়তে শুরু করল। দ্রুত ওয়ার্নার, মার্শ আর স্মিথের উইকেট হারানোর পরেই অস্ট্রেলিয়ার মিস্টার ডিপেন্ডেবল হেড খেলাটা ধরলেন,ঠিক যেখান থেকে ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলা শুরু করেছিলেন, যেন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন লাবুসেনকে সঙ্গে নিয়ে। ৪৩ বল বাকি থাকতেই ১৩৭ রানে যখন হেড ফিরলেন,তখন জয়ের জন্য বাকি ১ রান। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের ষষ্ঠবারের বারের মত জয়, আসলে দুমড়ে দিয়ে গেল ভারতের ক্রিকেট গর্বকে।
অজিদের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সংগ্রহ মোটে ২৪০ রান! বিশ্বকাপ ফাইনালের পাহাড়প্রমাণ চাপ। কোটি কোটি দর্শকের প্রত্যাশা আর অস্ট্রেলীয়দের নিয়মানুবর্তী বোলিং এবং অনবদ্য ফিল্ডিং যেন নতজানু করে দিল ভারতের বিশ্বখ্যাত ব্যাটিং বিভাগকে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলরা খেললেন বটে, কিন্তু কেউই সেভাবে নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারলেন না।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে টিকে থাকার অন্যতম শর্ত ছিল, দ্রুত ভারতের টপ অর্ডারের উইকেট নেওয়া।
রোহিত তো বটেই, রোহিতের ওপেনিং সঙ্গী শুবমান গিল কিংবা বিরাট কোহলি, এঁদের কেউ একজন টিকে গেলেই যে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রান বন্যা বইবে! অস্ট্রেলিয়ার নতুন বলে উইকেট নেওয়ার বিশেষজ্ঞ মিচেল স্টার্ক সেটি হতে দিলেন না। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ৭ বলে ৪ রান করা গিলকে মিড অনে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন। উইকেট পতনের পরও অবশ্য রানের গতি কমেনি। রোহিত চার-ছক্কায় এগিয়ে নিচ্ছিলেন ভারতকে। উপায় না দেখে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বোলিংয়ে আনার জুয়া খেলেন প্যাট কামিন্স। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের উড়তে থাকা রোহিতের সামনে ম্যাক্সওয়েলের অফ স্পিন নিয়ে আসা জুয়া নয়তো কী! রোহিত সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে মারেন চার। চতুর্থ বলেও ছক্কা মারার চেষ্টা ছিল। কিন্তু টাইমিং গড়বড় হওয়ায় বল চলে যায় কাভারে। সেখানে ট্রাভিস হেড উল্টো দিকে দৌড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন।
৩১ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ রানে থামে ভারতীয় অধিনায়কের ইনিংস।পরের ওভারেই কামিন্সের বলে কট বিহাইন্ড শ্রেয়াস আইয়ার। গত দুই ম্যাচে ১২৮ ও ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা শ্রেয়াস আউট হন ৩ বলে ৪ রান করে। এমন বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তখনও ক্রিজে ছিলেন বিরাট কোহলি। পাঁচে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য লোকেশ রাহুলও ছিলেন। দুজন মিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লিগ পর্বে ভারতকে ২ রানে ৩ উইকেটের ধস থেকে উদ্ধার করেন ১৬৫ রানের জুটি গড়ে। আজও দুজনের জুটি ভারতকে বিপদ মুক্ত করেছে। তবে দুজনকে ৬৭ রানের বেশি যোগ করতে দেননি অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক।৬৩ বল খেলে ৫৪ রানে থামে কোহলির ইনিংস। ৩৬তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজাকে (২২ বলে ৯ রান) রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে সিম মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে কট বিহাইন্ড করেন আরেক পেসার জশ হ্যাজলউড। ৪২তম ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে রাহুলকে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন স্টার্ক। ১০৭ বলে ১টি চারে ৬৬ রানে থামে রাহুলের লড়াকু ইনিংস। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানটাকে নিয়ে যান ২৪০-এ
ফলস্বরূপ, ভারত এমন একটা স্কোরে আটকে গেল, যেখান থেকে জিততে হলে বোলারদের অনবদ্য, অবিশ্বাস্য কোনও কাণ্ড ঘটাতে হত।