কেন্দ্রীয় ভাজপার সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গের দাবি নয়, বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে ভোটে হিন্দু ব্যাকলাশের আশঙ্কায় ভাজপা ব্যাকফুটে

0

Last Updated on July 19, 2022 7:05 PM by Khabar365Din

সৌগত মন্ডল। খবর ৩৬৫ দিন।

বঙ্গভঙ্গের দাবি তোলা যাবে না। বাংলা ভেঙে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের যে দাবি ভাজপা নেতারা বাংলায় তুলতে শুরু করেছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস মরিয়া ভাবে যে বঙ্গভঙ্গের জন্য ঝাঁপাতে নির্দেশিকা তৈরি করেছিল তা খারিজ করে দিল ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

বাংলার সমস্ত ভাজপা নেতাকে স্পষ্ট নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে কোন নেতা অথবা নেত্রী যেন ভুল করেও বঙ্গভঙ্গ করে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি প্রকাশ্যে না তোলেন। তাহলে গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যে শোচনীয় ফলাফল হয়েছে, তা আরো কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়ে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটাররা ছুঁড়ে ফেলে দেবে ভাজপাকে।
ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই কড়া নির্দেশিকার পরেই বিগত দুটি আর্টিকেলে বঙ্গভঙ্গ করে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা আরএসএস পরিচালিত স্বরাজ্য পত্রিকায় আজ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলা ভাগ করে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে পৃথক করে দিলে তা আদতে এশীয় উপমহাদেশের মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলির কাছে মাথা নত করে বাংলাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

কেন পিছিয়ে আসছে ভাজপা

ভাজপা রাজ্য কমিটির সদস্য মোহিত রায় আজ আরএসএস পরিচালিত স্বরাজ্য পত্রিকায় যে প্রতিবেদন লিখেছেন, সেখানে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন বাংলা ভাগ করে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের যে দাবি আরএসএস তুলেছে তা অর্থহীন এবং আদতে বাংলা থেকে ভাজপাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট।
প্রথমত, বঙ্গভঙ্গ কথাটা শুনলেই প্রথমেই মনে আসে ১৯০৫ সালে ইংরেজদের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনার কথা। যে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণার পরেই হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে এককাট্টা হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার মানুষ। ভাজপা নেতারা যেভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গভঙ্গের দাবি তুলতে শুরু করেছেন তার প্রতিবাদে সেভাবেই একজোট হতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। বিশেষ করে গত কিছুদিনের মধ্যে যেভাবে মমতা এবং অভিষেক পরপর উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন তা থেকে ভরসা পেতে শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ।

দ্বিতীয়ত, বাংলার ভাজপা নেতারা শ্যামা প্রসাদকে পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠার জনক বলে প্রচার করতে যে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই শ্যামাপ্রসাদ কিন্তু কোনদিন বঙ্গভঙ্গ চাননি। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সময় হিন্দু এবং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসেবে যখন ভারত এবং পাকিস্তান ভাগ হয় সেই সময় কোটি কোটি হিন্দুকে বিশেষ করে কোটি কোটি হিন্দু বাঙ্গালীদের বেঁচে থাকার জন্য মাথার উপরে ছাদ দিয়েছিল আজকের বাংলা বা পশ্চিমবঙ্গ। সেই পশ্চিমবঙ্গকে যদি ভাগ করা হয় তাহলে তা হবে শ্যামাপ্রসাদের সবথেকে বড় অপমান।

তৃতীয়ত, বিভিন্ন সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে অথবা কোন জনজাতির বসবাসের ভিত্তিতে পৃথক কামতাপুরী রাজ্য তৈরির জন্য কামতাপুরী আন্দোলনের মতো কিছু বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হলেও সরাসরি দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ কে আলাদা করার যে দাবি বর্তমানে ভাজপা নেতারা বা আরএসএস নেতারা তুলতে শুরু করেছেন তার কোন অর্থনৈতিক অথবা সামাজিক ভিত্তি নেই।

চতুর্থত, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য তৈরি করে তাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির জন্য আরএসএস যে ফর্মুলা তৈরি করেছে যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত হওয়ার জন্য এটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল হওয়া উচিত, সেই যুক্তিতে গুজরাত, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলি আন্তর্জাতিক সীমানায় অবস্থিত। যেখানে গুজরাত সরাসরি পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত। এই যুক্তি মেনে নিতে গেলে তো এই রাজ্যগুলিও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা উচিত।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দক্ষিণ বঙ্গের হিন্দুরা গত লোকসভা নির্বাচন এবং এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভাজপাকে বেশি আসনে যেতান নেই বলে আরএসএস দক্ষিণবঙ্গের হিন্দু তথা বাসিন্দাদের বুর্জোয়া বলে যে প্রচার করতে শুরু করেছে তা বাস্তব ভিত্তিহীন। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে কেটে ফেলে পৃথক রাজ্য তৈরি করলে তা একদিকে যেমন গুটিকয় হিন্দু বাঙালির বুকের ওপরে ছুরি চালানো হবে ঠিক তেমনভাবে অন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে বাংলা দখল করার জন্য সহায়ক হয়েও যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here