Last Updated on August 1, 2022 4:43 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসছে কেউটে। দিল্লিতে বসে ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতারা ভাজপা শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মাধ্যমে ঝাড়খন্ডে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা এবং কংগ্রেসের জোট শাসিত সরকার ভেঙে দিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিরোধী দলের বিধায়কদের কেনার ব্লু প্রিন্ট বানিয়েছিলেন বলে ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দিল্লি ও অসম থেকে ঝাড়খণ্ডের ভাজপা বিরোধী সরকার ফেলার চক্রান্তে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলা তথা কলকাতার নাম। তার ফলে রীতিমতো বেকায়দায় ভাজপা।
হাওড়া রানিহাটিতে একটি গাড়ি থেকে ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক এবং তাদের কাছে থাকা প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা রাজ্য পুলিশ বাজেয়াপ্ত করার পরেই একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশে আসতে শুরু করেছে। একদিকে যেমন ঝাড়খণ্ডের আরেক কংগ্রেস বিধায়ক রাচি থানায় এফআইআর দায়ের করে অভিযোগ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লিতে বসে থাকা ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতারা ঝাড়খণ্ডের প্রত্যেক বিধায়ক কিছু ১০ কোটি টাকা অফার দিচ্ছেন সরকার ফেলে দেওয়ার পরে নতুন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার জন্য, সেই সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গোটা ঘটনার লিংকমেন ঝাড়খণ্ডের এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ।
বাংলায় ব্ল্যাকমেলিং ঝাড়খণ্ডে ঘোড়া কেনাবেচা
কলকাতা তথা বাংলার একাধিক শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করে ভাজপা নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআইকে দিয়ে গ্রেফতার এবং বাড়িতে তল্লাশি চালানোর হুমকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্ল্যাকমেলিং করে আদায়ের অভিযোগে কলকাতায় গ্রেপ্তার হল ঝাড়খণ্ডের এক আইনজীবী। কলকাতার এক ব্যবসাই এর বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডে জনস্বার্থ মামলা করে সেই মামলা তুলে নেওয়ার বিনিময় 10 কোটি টাকা দাবি করেছিলেন রাজীব কুমার নামে এই আইনজীবী। কিন্তু গোপন সূত্রে গোটা ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই ব্যবসায়ী প্রথম কিস্তির জন্য ৫০ লক্ষ টাকা গতকাল ঝাড়খণ্ডের এই ভাজপা ঘনিষ্ঠ আইনজীবীকে দেওয়ার পরেই হেয়ার স্ট্রেট থানা এলাকার একটি শপিং মলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি-অফিস এবং বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির হুমকি দিয়ে দশ কোটি টাকায় রফা করতে বলেন রাঁচিরই এক আইনজীবী।
যদিও শেষ পর্যন্ত ১ কোটিতে রাজি হন তিনি। টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ওই আইনজীবীকে পাকড়াও করে কলকাতা পুলিশের হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। রবিবার রাতে প্রথম কিস্তির ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। ওই টাকা কলকাতার ওই ব্যবসায়ী দিয়েও দেন। কিন্তু পাশাপাশি ওই ব্যবসায়ী পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়ে দেন। সেখানেই ৫০ লক্ষ টাকা সহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ব্যবসায়ীকেও এই বলে ধমকেছিলেন যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে, টাকা না দিলে তার বাড়িতে ও অফিসে অভিযান চালানো হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০০ জনের বেশি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা করেছেন রাজীব কুমার। লালবাজার সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধেও খুন, দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন ওই আইনজীবী। ধৃত আইনজীবীর কাছ থেকে একাধিক নথিপত্র উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। এমনকি তার মোবাইলে এবং সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে বেশ কয়েকটি ভাজপা শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি ভাজপাশাসিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং ভাজপা নেতাদের সঙ্গে সেলফি এবং ঘনিষ্ঠ ছবি রয়েছে।
আদালত কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে ভাজপার লিংক ম্যান রাজীব
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত আইনজীবী ৬০০-র বেশি জনস্বার্থ মামলা করেছেন। তার কাজই জনস্বার্থ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অর্থ আদায় করা। মূলত ভাজ পা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং ভাজপার কাছে আত্মসমর্পণ না করা কোটিপতি ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের ব্ল্যাকমেইল করার জন্য বিচারপতিদের একাংশের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা এবং তাতেও কাজ না হলে সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত করে সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্তাদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে টাকা তুলতেন বলে জানা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তের পরে।
বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকজন শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা টাকা কামিয়ে সেই টাকায় অসমের মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে ঝাড়খণ্ডের বিরোধী বিধায়কদের কিনে সরকার ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।