মমতার পুরস্কারে গা জ্বলছে? সাহিত্যের জাল বেওসায় কত কামিয়েছিল সিপিএম? ৩৪ বছরের বাংলা সাহিত্যে সিপিএমের ডবল ইনকাম করে হাজার কোটি টাকা মুনাফা

0

Last Updated on May 15, 2022 6:33 PM by Khabar365Din

রাজনৈতিক প্রতিবেদন। খবর ৩৬৫ দিন।

ক্ষমতায় থাকার ৩৪ বছরে সরকারি অর্থে কম বেশি প্রায় হাজার কোটি টাকার বইয়ের ব্যবসা করেছে সিপিএম। এই বইয়ের মধ্যে মুজফফর আহমেদ (‌কাকাবাবু)‌, প্রমোদ দাশগুপ্ত, সরোজ মুখার্জি, জ্যোতি বসুদের লেখা বই রয়েছে। সরকারি অর্থে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়ার লাইব্রেরিকে এই সব বই কিনতে বাধ্য করা হত। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকেও কাকাবাবু, প্রমোদাশগুপ্তর জীবনী পাঠানো হত সরকারের খরচে। অর্থাৎ ক্লাস থ্রি, ফোরের পড়ুয়াদের জন্যও কাকাবাবুর জীবনী কিনতেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকারা। তারা মূলত পার্টির লোকাল কমিটির চিরকুটে চাকরি পেতেন, ফলে মুখ বুঁজে বিলে সইও করে দিতেন। এই গোটা কাজটা সিপিএম করেছে ‘‌ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ নামে এক বই কোম্পানির মাধ্যমে। আজও সেই কোম্পানি রয়েছে। সিপিএমের এই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মালিকানায় এখন যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে যেমন বিমান বসু রয়েছেন, তেমন একসময়ের রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতিমন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ বেরাও রয়েছেন।


সিপিএমের এই বই কেলেঙ্কারি এবার তদন্ত হবার সময় এসেছে।


বাংলার মানুষের কোটি কোটি টাকা বইযের মাধ্যেমে ঘুরপথে পার্টি ফান্ডে ঢোকানোর মূল রূপকার ছিলেন জ্যোতি বসু এবং অনিল বিশ্বাস। পরে শ্যামল চক্রবর্তীকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। একসময়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারনে অনিলবাবু শ্যামল চর্ক্রবর্তীকে এই ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেন। শোনা যায়, শ্যামলবাবু নাকি এই ভাবে সরকারি টাকা পার্টিতে ‘‌সাইফোন’ করায় আপত্তি করেছিলেন। অনিলবাবু তখন অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী নামে এক বশংবদ পার্টি কর্মীকে বই ব্যবসায় নিয়ে আসেন।


‘‌ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ একটি প্রাচীন বই প্রকাশনার কোম্পানি। প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৩ সালের ১৬ নভেম্বর। বামপন্থীরা এটি দখল নেয়। সিপিআই পন্থীরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসবার পর সিপিএম ধাপে ধাপে সিপিআই পন্থীদের এখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এক সময়ে নিজেরা পুরোটা দখল করে। ক্ষমতায় থাকবার কয়েক বছর পর থেকেই সিপিএম বইয়ের ব্যবসায় মন দেয়। সরোজ মুখার্জি তখন পার্টির সম্পাদক। বলেছিলেন, গণশক্তি প্রকাশনা থেকে বই ছাপা হোক। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু জানান, তাহলে সরকারি টাকা দেওয়া যাবে না। সরাসরি পার্টিকে সরকারি টাকা দেওয়া মুশকিল। অনিলবাবুই তখন বলেন, তাহলে ‘‌ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’কে বড় করে তার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করা হোক। তৎকালীন সম্পাদক মন্ডলী এতে সায় দিলেও, বামফ্রন্টের অন্য শরিকরা আপত্তি করে। লাইব্রেরি দপ্তর থেকে শরিক মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএম নিজের দলের মন্ত্রীকে বসিয়ে বইয়ের নামে সরকারি টাকা ঘোরানোর ব্যবসা শুরু করে।


ক্ষমতায় থাকবার শেষ পঁচিশ ছাব্বিশ বছর এই ব্যবসাকে রমরমা করে তুলেছিল সিপিএম। স্কুলে কলেজে লাইব্রেরিতে যে ধরনের বই কোটি কোটি টাকার বিক্রি করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কাকাবাবুর লেখা ‘‌আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’‌, প্রমোদ দাশগুপ্তর ‘‌নির্বাচিত রচনা’‌, সরোজ মুখার্জির ‘‌ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা’‌, হরেকৃষ্ণ কোঙারের ‘‌প্রবন্ধ সঙ্কলন’‌ । জ্যোতি বসুর আত্মজীবনী এবং প্রবন্ধ সংকলন কেনবার জন্য সরকারের সব থেকে বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে।


সিপিএম এই বই কেনাবেচার কেলঙ্কারি থেকে কোম্পানিকে বাঁচানোর জন্য এক পদ্ধতি নিয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় দুর্গা পুজোর মন্ডপে লাল পতাকায় টাঙিয়ে বই স্টল দিত। ‘‌ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ র বই সেখানে নিয়ে আসা হত। ভুয়ো বিল করে দেখানো হত, অনেক বই বিক্র হয়েছে। যাতে সরকারি টাকার কথা বোঝা যায় না। কৌটো নেড়ে কোটি টাকা চঁাদা তোলবার কায়দা।


কলেজস্ট্রিটের একটি খুপরি ঘর থেকে বিশাল ঝা চকচকে শো রুম নিল ‘‌ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ । স্টললেকে বিশাল বাড়ি। শোরুম, অফিস, রেস্টরুম সব রয়েছে। অনিল বিশ্বাস মশাই তার গোপন থেকে গোপনতম বৈঠক সারতে সেখানে প্রায়ই যেতেন। তবে সে অন্য কথা।
ক্লাস থ্রিস, ফোরের ছেলেমেয়েদের জন্য জ্যোতি বসু, কাকাবাবু, প্রমোদ দাশগুপ্তর আত্মজীবনী কিনতে সরকার কোষাগার থেকে কত কোটি টাকা খরচ করেছে তার হিসেব নিশ্চয় এখনও কোনও কোনও ফাইলে রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here