সরাসরি সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিৎ, হাজার হাজার খেটে খাওয়া মানুষকে রিপ্রেজেন্ট করেছি এই ছবিতে

0

Last Updated on June 18, 2022 1:46 PM by Khabar365Din

সাক্ষাৎকার অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি অভীক দাস

৩৬৫ দিন। ১৭ জুন সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে প্রসেনজিং চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) অভিনীত ‘আয় খুকু আয়’ (Aay Khuku Aay)। পরিচালক সৌভিক কুন্ডু (Sauvik Kundu) পরিচালিত এই ছবিতে প্রসেনজিৎ ছাড়াও অভিনয় করেছেন দিতিপ্রিয়া রায় (Ditipriya Roy)। যাকে আমরা ছোটপর্দার জনপ্রিয় সিরিয়ালের চরিত্র রানী রাসমণি হিসেবে চিনি। ছবিতে রয়েছেন, রাহুল দেব রয় (Rahul Dev Bose), সোহিনী সেনগুপ্ত (Sohini Sengupta), যিনি এখানে একটি রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে রয়েছেন। ছবিতে যেহেতু বিগস্টার বলতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় শুধু মাত্র রয়েছেন, তাই ছবি প্রমোশনে দুমাস ধরে তিনি প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলেন। কলকাতা তো আছেই, সারা বাংলা জুড়ে কখনো আসানসোল কখনো দুর্গাপুরে ছবির প্রচারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। আয় খুকু আয় ছবির ট্রেলারেই আমরা দেখেছি, গল্পের কেন্দ্রে গ্রামের এক নির্মল বাবু ও তার মেয়ে। অর্থাৎ বাবা মেয়ের গল্প। তবে শুধু বাবা মেয়ের গল্প নয়, সঙ্গে রয়েছে থ্রিলার, রয়েছে ইমোশন। এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময়ে দিতে ভোলেননি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি মুক্তির আগেই আমাদের মুখোমুখি তিনি।

ছবিতে আপনাকে দেখা গেছে নন গ্ল্যামারাস চরিত্রে।

আমার মনে হয়েছিল নির্মল মণ্ডলকে দেখতে এমনই হওয়া উচিত। স্ক্রিপ্টে ছিল কেলো প্রসেনজিৎ। লুক আ লাইক গ্রামের একটি মানুষ যার প্রসেনজিতের সঙ্গে কিছুটা মুখের মিল ছিল। যেহেতু নিৰ্মল মণ্ডল কেপ্রসেনজিতের মতন অনেকটা দেখতে ছিল, তাই তার প্রসেনজিতের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। লোকটি ছিল কেলো। কিন্তু আমি স্ক্রিপ্ট পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে মানুষগুলো অভাব-অনটন, প্রতিদিন ট্রেনে ডেলিভারি করে, হাজার হাজার মানুষ দিন আনে দিন খায়, এরা প্রসেনজিতের থেকে ছোট হলেও গেলো নির্মলের চরিত্র থেকে টেকের নির্মাণের চরিত্রটি বেশি অথেন্টিক রিয়েলস্টিক মনে হবে। আর্টিফিশিয়াল বিষয়টা আমার ভালো লাগেনা।

মনের মানুষ, জাতিস্মর বাইশে শ্রাবণ থেকে শুরু করে বহু লুক আপনি চেঞ্জ করেছেন।

ঠিক আমি বিগত ১২ বছরে জাতিস্মর, মনের মানুষ, কাকাবাবু, বাইশে শ্রাবণ থেকে শুরু করে বহু ছবিতে এমনকি নেতাজিতেও আমি আমার অভিনয়ের জন্য নিজের লুককে চেঞ্জ করেছি। আমি তো আমার চেহারা পরিবর্তন করেই যাই। এই কয়েক বছরে হাতে গুনে হয়তো কয়েকটা ছবি হবে যেখানে আমি আগের প্রসেনজিতের চেহারায় অভিনয় করেছি।আমি নির্মল মণ্ডল কে এই ভাবেই দেখতে চাই, যার শরীরে পাক ধরে গেছে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে, এইজন্যই ডিগ্ল্যামারাস লুক করা। এর পরেও তার মধ্যে একটা নায়ক ও সরলতা দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমবার আমি মনের মানুষ এ নিজেকে চেঞ্জ করি, সেখানে আমাকে বৃদ্ধ লালন ফকিরের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়।

আপনার কি এখানে দুটো চরিত্র।

আমার দুটো না একটা চরিত্র, সেটা তোমরা হলে গিয়ে দেখবে। আমি বলব না। একটা মানুষের দুটো ক্যারেক্টার অভিনয় করবে, নাকি দুটো আলাদা মানুষ। কিন্তু অবশ্যই গ্ল্যামারাস প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের থাকবে।

সৌভিক কুণ্ডু পরিচালিত ‘আয় খুকু আয়’ ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে ট্রেনের হকারের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

ট্রেলারে দেখা গেছে বুম্বার চরিত্রে নির্মল আগে অভিনয় করত।

হ্যাঁ আমার প্রথম টিজার ই ছিল বুম্বা আঙ্কেল, তোমার চরিত্র গুলো মনে আছে। বুম্বা আদেল একটা চরিত্র, নির্মল আরেকটা চরিত্র।

বাবা মেয়ের গল্পটাই কেন বেছে নিলেন? অবশ্য আগে অনেকগুলো

বাবার চরিত্রে ছবি করেছেন। আর সৌভিক এর সঙ্গেও প্রথম ছবি। হ্যাঁ, সৌভিক এর সাথে আমার প্রথম ছবি। জিৎ যখন আমাকে বলে, তারপর সৌভিক আমাকে স্ক্রিপ্টটা শোনায় তখনও পুরোপুরি স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়নি। কিন্তু গল্পের আইডিয়াটা ভীষণ মনকে টাচ করেছিল। আমার মনে হয়েছিল খুব মাটির কাছের মানুষগুলোকে রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ এসেছে। গ্রামের মানুষকে নিয়ে সচরাচর এখন আর কমার্শিয়াল ছবি হয় না। এই মানুষটি সাইকেলে করে ঘুরে, ট্রেনের ডেইলি প্যাসেঞ্জার এ করে হকারি করে, এই ধরনের চরিত্র সিনেমায় এখন দেখাই যায়না।

যদি দেখো, ট্রেলারে নিচে অনেক কমেন্ট আসছে, শুরু ইজ ব্যাক। সবাই বুঝতে পারছে এটার মধ্যে একটা মেনস্ট্রিম অ্যাঙ্গেল আছে। আমার মনে হয়, বাবা মেয়ে ভাই-বোন এই এক নম্বর সম্পর্কগুলো সারা পৃথিবীতে একই লেয়ার। এখনো বাঙালি পরিবারে মেয়েরা বড় হলে তাদের মা বলে ডাকা হয়। সৌভিক ছবির স্ক্রিপ্টে মধ্যবিত বাঙালিতে পরিবারে যে ভ্যালু দিয়েছে, সেটা আমাকে খুব টাচ করেছিল এই চরিত্রটি বেছে নিতে। আশাকরি মানুষ এই ছবিটিকে গ্রহণ করবে। যেমন মেয়েরা বড় হলে বাড়িতে মা হয়ে যায়। বাবার গার্জেন হয়ে যায়। ছেলেদের জন্যও হয়ে থাকে, কিন্তু মেয়ে বাবা-মায়ের একটু বেশি ভাবনা জড়িয়ে থাকে। মেয়েরা যত বড় হয় তত বন্ধু ভালোবাসা থাকে, ভয় আতঙ্ক থাকে। এই গুলোই আমাদের সিনেমার বিষয়বস্তু।

দিতিপ্রিয়ার সাথে কাজ করে কেমন লাগলো?

আমার সঙ্গে এর প্রথম ছবি (এর প্রথম ছবি) খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমরা কাজ করেছি। আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। দিতিপ্রিয়ার সাথে স্ক্রিপ্ট এর বহিরে অনেক সময় আমরা নিজেদের মতন করে অভিনয় করেছি। ভুল করলে বকাবকি করেছি। গ্রামের মেয়ে, বাবা কাজে বেরোনোর সময় রুটি তরকারি করে দিচ্ছে, যাতে বাবা বাইরের খাবার না খায়, বাবা বিছানা করবে, বাবা জামা কাপড় ধুয়ে দিয়ে যাবে এইযে বিষয়গুলো রয়েছে এই ছবিতে এগুলো মধ্যবিত্ত পরিবারে রোজকারের গল্প দেখা যাবে।

গ্রাম বাংলার লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর মনে যে সুপার হিরোর মতন জায়গা জুড়ে আছেন, সেখানে এ ধরনের চরিত্র করতে গিয়ে ভক্ত হারাবার ভয় থাকেনা?

একদমই ভয় পাচ্ছি না। বরং তারা ভীষণভাবে ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখাবে। মনের মানুষে আমি আমার প্রথম ইমেজটাকে ভাঙি। সেটা তখন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আমার তো কিছু পাওয়ার নেই, তাই আমার কোন ভাও নেই। আমাকে মানুষ নেতাজির লুকে দেখেছে, জাতিস্মর এ দেখেছে। আমি চাই আমি প্রত্যেকদিন প্রত্যেক বার আমার নিজের ইমেজকে ভেঙে আবার নতুন করে ইমেজ তৈরি করি। আমি আমার নিজের হাতে গড়া ইমেজকে ভেঙে আবার নতুন একটা ইমেজ তৈরি করি। আমি চেষ্টা করি বারবার নতুন লুকে নিজেকে দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে। অত ও কৌশিকের ছবিতে আমাকে দেখে দর্শক জাঁতকে উঠবে। আবার ঠিক আমারটা বিশাল গ্ল্যামারাস চরিত্র দেখবে অ্যামাজনে ‘জুলি’ ছবিটা আসবে। ১৯৩৮-৪০ এর গল্প নিয়ে। সেখানে একটা গডফাদারের চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে।

এখন বংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সকলেই রাজনীতিতে নেমে পড়েছে।

আপনার কি মনে হয় সিনেমা আর রাজনীতি একসাথে করা যায়? আমি রাজনীতিতে নেই। কিন্তু বলতে পারি, শুধু বাংলায় নয়, জাতীয় রাজনীতিতে, এমনকি একসময় দক্ষিণ ভারতের অনেক সিনেমা জগতের লোক সিনেমা থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, সফল হয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছেন। এখন বাংলাতেও হচ্ছে। এতে ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো প্রভাব পড়ে না। একজন মানুষ একটা রাজনৈতিক দলকে ভালোবেসে রাজনীতি করতে এসে নেতা হচ্ছে, এটা তাঁর ব্যাক্তিগত বিষয়। তবে আমি মনে করি, কিছু মানুষ তো থাকুক যাদের ভগবান যে কাজটা করতে পাঠিয়েছে সেই কাজটাই করবে। আমার মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য ভগবান পাঠিয়েছে। আমি কেমন করে কাজটা আরও ভালো করে করতে পারি, তার কথাই ভাবি।

দক্ষিণী সিনেমা বাংলায় ডাব করে চালানো হচ্ছে। এটা কি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকারক নয়

আমার মনে হয় না যে এটা খুব একটা ক্ষতিকারক। কারণ এটা গ্লোবালাইজেশনের যুগ। এটা হবেই। কিন্তু হল না রিলিজ করছে সেগুলো পরিকল্পনা নিয়েই হলে রিলিজ করছে। আসলে তারাও চায় প্যান ইন্ডিয়ায় তাদের সিনেমার রিলিজ করুক। আমাদের চোখের বালি’ সিনেমাও তো প্যান ইন্ডিয়া রিলিজ করেছিল। সারা ভারতজুড়ে বহু লোক দেখেছিল। এখন শুধু বাহুবলী, আরআরআর এসব নিয়ে বলা হচ্ছে। আমি বলব কত বছর আগে মণিরত্নম স্যারের ‘রোজা’ প্যান ইন্ডিয়া রিলিজ করেছিল। ওরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু আমরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারিনি। তবে অন্য ভাষার সিনেমা বাংলায় ডাব করে হলে রিলিজ করলে সত্যি ইন্ডাস্কির ক্ষতি হবে। যদি কখনো করে তখন আমরা একত্রে আবার লড়াই করব। এর আগে জিতেন্দ্রর লভকুশ বলে একটা সিনেমা বাংলায় ডাব করে রিলিজ করার কথা ছিল, আমরা করতে নিই। কিছু বছর আগেই ‘গুন্ডে’ নামে সিনেমাটা বাংলায় ডাব করে রিলিজ করতে চেয়েছিল, আমরা ২২-২৪ দিন ধরে আন্দোলন করে আটকে দিয়েছিলাম।

তুমি কি নেগেটিভ রোল করতে ভালোবাসো?

আমি নেগেটিভ রোল করতে চাই কেউ দিচ্ছে না। কৌশিকের সাথে কথা হয়েছে আমার। নেগেটিভ মানে ডিফারেন্ট ক্যারেক্টার। এখন নেগেটিভ রোল যারা করে তারাও সিনেমার হিরোর থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ওটিটি না হল? কে ভবিষ্যতে টিকে থাকবে বলে তোমার মনে হয়।

আমি মনে করি সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখন এই ম্যাজিকটা আরো ৫০ বছর বেঁচে থাকবে। এটিটি মানুষের একসময় আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু মানুষ এখন যে কোনো সিনেমা যেমন ভুলভুলিয়া, কিসমিস, শুধু বাংলা নয় হিন্দি তামিল সিনেমা আসলে হালে ছুটে গিয়ে দেখছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here