Last Updated on November 21, 2023 7:06 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট ভাষায় যেখানে জানিয়ে দিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন, মুখ্যমন্ত্রী যখন সময় পাবেন তাঁকে কফি খেতে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানান। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেননি কেন? সুপ্রিম কোর্টের মৌখিক পর্যবেক্ষণকে কি আপনার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না? এরপরে আমরা কিন্তু লিখিতভাবে নির্দেশ দিতে বাধ্য হবো। এমন নজিরবিহীনভাবে বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট।
কোন মামলায় রাজ্যপালকে ভর্ৎসনা
বাংলায় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা করা তো দূরের কথা, কোনরকম সার্চ কমিটি গঠন না করেই ইউজিসি আইন সম্পূর্ণভাবে অমান্য করে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে ভাজপা নেতাদের পরামর্শে রাজ্যের একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় টেম্পোরারি উপাচার্য নিয়োগ করেছেন সিভি আনন্দ বোস। এমনকি রাজ্য বিধানসভায় উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিল পাস হলেও সেই বিলে সই না করে ফেলে রেখেছেন রাজভবনের ঠান্ডা ঘরে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বারে বারে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও বাংলার রাজ্যপাল তাতে কর্ণপাত পর্যন্ত করেননি। উল্টে গভীর রাতে হোয়াটসঅ্যাপে অথবা রাজভবনে চায়ের আসরে ডেকে একের পর এক ব্যক্তিকে টেম্পোরারি উপাচার্য পদে বসিয়ে গিয়েছেন। যাদের অধিকাংশের আবার শিক্ষা জগতের সঙ্গে কোন দিন কোন সম্পর্ক পর্যন্ত ছিল না। এমন অরাজক পদ্ধতিতে উপাচার্য নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে গত ৬ অক্টোবরের সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে রাজ্যপাল আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না।
এমনকী যে উপাচার্যদের রাজ্যপাল নিয়োগ করেছেন, তাঁরাও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেতন পাবেন না। একইসঙ্গে তিনপক্ষকে মুখোমুখি বসে সমস্যা মেটানোর পরামর্শও দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত রাজ্যপালকে পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সময়মতো তাকে রাজভবনে কফি পান করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অনেক বড় বড় সমস্যাও কফির আসরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু তারপরেও বাংলার রাজ্যপাল সেই পথে হাঁটেননি।
আজ সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পরেই বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানতে চান রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে ছিলেন কিনা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় গত ২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রাজভবনে গিয়েছিলেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গত ৭ নভেম্বর আবার রাজ্যপাল একটি চিঠি লেখেন। সেখানে রাজ্যপাল জানান, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে এমন কোনও বৈঠকের কথা বলা হয়নি।
রাজ্য সরকারের আইনজীবীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলার রাজ্যপালের আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্টকে জানান, আমাদের কাছে সুপ্রিমকোর্টের এমন কোন নির্দেশ নেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার।
রাজ্যপালের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরেই তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে বাংলার রাজ্যপালকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, আগের দিন শুনানি চলাকালীন সবার সামনে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেছিলেন আপনারা আলোচনা করে সমস্যা মেটান। অচলাবস্থা কাটাতে মুখ্যমন্ত্রী এবং আচার্যকে বৈঠকে বসার কথা প্রকাশ্য এজলাসেই বলা হয়। সেখানে রাজ্যপালের আইনজীবী নিজে উপস্থিত ছিলেন। তারপরও কেন এমন চিঠি রাজ্যপাল তথা আচার্য দিলেন? তারপরও আপনাদের লিখিত নির্দেশ প্রয়োজন? তার মানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণের কোনও গুরুত্ব নেই আপনার কাছে? তাহলে কি আমরা অর্ডার পাশ করব?
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সূর্যকান্তের ক্ষুব্ধ ভর্ৎসনা শুনে আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয় কয়েক দিন সময় দেওয়ার জন্য।
এরপরে ইউজিসি, রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপালের পক্ষ থেকে উপাচার্য নিয়োগের প্যানেল গঠনের জন্য জমা পড়েছে প্রস্তাবিত নামের তালিকা। সেখান থেকে সম্মিলিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনজীবীদের। সবপক্ষকে একসঙ্গে বসার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই তালিকা থেকে উপাচার্য নিয়োগের চূড়ান্ত প্যানেল গঠন করবে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।