Last Updated on September 3, 2021 4:47 PM by Khabar365Din
সুমন ভট্টাচার্য
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রকান্ত বোরদে নাগপুরে গিয়ে আরএসএস এর সদর দফতরে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন| স্বভাবতই এই খবর রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে| আরএসএস এর তরফে এই খবরের সত্যতা স্বীকার না করা হলেও স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রাক্তন প্রধানের এই আচরণের যৌক্তিকতা নিয়ে| গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে পলিটিকাল এগজিকিউটিভ অর্থাৎ রাজনৈতিক কারণে যিনি প্রশাসনের প্রধান আর বিচারব্যবস্থার মধ্যে যে দূরত্ব থাকার কথা, বিজেপি এবং সঙ্ঘপরিবার সেটাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে? এই প্রসঙ্গেই লোকে আবার বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগকে টেনে আনছে যে, বিজেপি দল হিসাবে বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রতায় বিশ্বাস করে না| এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতীক হিসাবে যে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আছে, সুপ্রিম কোর্ট যার মধ্যে অন্যতম, সেগুলিকে ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে|
বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার কারণ যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের আরেক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য হিসেবে সংসদে নিয়ে আসা হয়েছে বা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বলে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অরুণ মিশ্রকে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে| আমাদের মনে রাখতে হবে এই কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে| প্রাক্তন বিচারপতি অরুণ মিশ্র শুধু এর আগে সবাইকে বিস্মিত করে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেননি, এমন অনেক মামলার রায় দিয়েছেন যা বিতর্কিত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে গিয়েছে| যেমন সাহারা ডায়েরি মামলা| বিচারপতি এম আর শাহ ও পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকার সময় সবাইকে বিস্মিত করে নরেন্দ্র মোদীকে রোল মডেল বলেছিলেন, পরবর্তীকালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন|
ভারতের বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার এই চেষ্টা এতই বিপজ্জনক যে এই প্রবণতা নিয়ে ইউনিভার্সিটি পোর্টসমাউথ এর গবেষক শুভঙ্কর দাম গবেষণাপত্র তৈরি করেছেন, ২০২০ সালে রঞ্জন গগৈ সাংসদ হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর ওয়াশিংটন পোস্ট এর মতো বিশ্বখ্যাত পত্রিকা দীর্ঘ নিবন্ধ ছেপেছে| কিন্তু বিজেপি বা আরএসএস বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার বা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা ছাড়েনি| আমাদের মনে রাখতে অতীতে বিচারপতি পিএন ভগবতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা করে চিঠি লিখেছিলেন এবং তার বিনিময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও হয়েছিলেন| কিন্তু ৩০ বছরের ব্যবধানে সেই বিচারপতি ভগবতী নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন| ভারতবর্ষ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গণতন্ত্রের যে মডেল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চায়, সেখানে প্রশাসনের সঙ্গে বিচারব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্য থাকাটা জরুরি| না হলে আমাদের সঙ্গে আফ্রিকার বান্টু গণতন্ত্রের কোনো তফাৎ থাকবে না|
প্রশান্তভূষণের অভিযোগ ছিল এবং তিনি বিচারপতিদের নাম করে বলেছিলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কে বিচারপতি হতে পারে সেটা বুঝে নিয়ে তাঁর পিছনে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লেলিয়ে দেয়| এবং তারপরে সেই বিচারপতিকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে, যাতে তিনি সরকার বা দল হিসেবে বিজেপি র স্বার্থের বিরুদ্ধে রায় না দেন| প্রশান্তভূষণের অভিযোগের সঙ্গে আশ্চর্যজনক মিল রেখে দেখা গিয়েছে পেগাসাস এ ফোন হ্যাক করার তালিকার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সেই মহিলা কর্মীর ১১ জন আত্মীয়ের ফোন নম্বর রয়েছে, যিনি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনেছিলেন|