ইস্যু। ১৫ বছরের পুরনো সব গাড়ি বাতিল – গ্রিন বেঞ্চের অবাস্তব রায় জনবিরোধী, অমানবিক

0

Last Updated on July 27, 2022 5:19 PM by Khabar365Din

গড়িয়ার বাসিন্দা সোমনাথ ঘোষ। একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ২০০৭ সালে ১০ বছরের ইএমআইতে একটা মোটরবাইক কিনেছিলেন। এখন সেই বাইকে চড়েই বাজার ঘাট থেকে শুরু করে স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া আসা করেন সোমনাথ বাবু। বছর দেড়েক পরে অবসর নেবেন চাকরি থেকে। গাড়ির ইএমআই শোধ হয়েছে বছর চারেক আগে। আচমকাই গতকাল কেন্দ্রীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশিকা দেখার পরে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে। তার বাইকটি নাকি ফেলে দিতে হবে অথবা ভাঙ্গা লোহা লক্কড়ের দোকানে বেচে দেওয়ার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে পরিবহন দপ্তরের কাছে।

এমন সোমনাথ বাবু বাংলার প্রত্যেকটি প্রান্তে লক্ষ লক্ষ ছড়িয়ে রয়েছেন। যারা জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকা শোনার পরে রাতের ঘুম ভুলেছেন। পরিবেশ দূষণ রোধে গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কলকাতা হাওড়া সহ রাজ্যের সর্বত্র ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল।

নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী ছ মাসের মধ্যে ভারত স্টেজ ফোর এর নিচে রয়েছে এমন সমস্ত গণপরিবহন বাতিল করতে হবে। কলকাতা হাওড়া এবং রাজ্যের সর্বত্র ৬ মাস পরে যেন এই ধরনের গণপরিবহন আর না চলে তা নিশ্চিত করবে রাজ্য। অন্যদিকে সিএনজি এবং বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত বাসের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়াতে হবে।

অবাস্তব এবং অমানবিক সিদ্ধান্ত

কলকাতা এবং হাওড়া ছাড়াও বাংলার প্রত্যেকটি জেলায় অথবা গ্রামাঞ্চলে গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৮০ শতাংশ বাস, ট্রেকার, অটো – অধিকাংশই ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক। রাতারাতি যদি এই সমস্ত গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত গাড়ি, বাস, অটো আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিতে হয়, তাহলে কার্যত থমকে যাবে বাংলার জনজীবন। দৈনন্দিন কাজে বেরোতে পারবেন না বাংলার কয়েক কোটি সাধারন বাসিন্দা।

নরওয়ে ফিনল্যান্ডে বাস্তব হলেও বাংলায় অবাস্তব

নরওয়ে অথবা ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে যেখানে গোটা দেশের জনসংখ্যা উত্তর চব্বিশ পরগনা অথবা বর্ধমানের থেকে কম, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ চালিত মেট্রোরেল অথবা বিদ্যুৎ চালিত বাসে যাতায়াত করেন এবং যে সমস্ত দেশের কার্বন এমিশন রেট মাইনাসে, সেই সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশিকা বাস্তবায়িত করা সম্ভবপর হলেও ভারতের মতো জনঘনত্ব পূর্ণ দেশে অথবা কলকাতার মতো শহরে আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া সম্ভব নয়।

সরকারি ও বেসরকারি বাসের অধিকাংশ বাতিল হবে

বাংলার রাজ্য সরকার অথবা প্রাইভেট বাস মালিকদের আর্থিক পরিস্থিতি এমন নয় যে তারা ৬ মাসের মধ্যে বিপুল সংখ্যক অর্থাৎ প্রায় কুড়ি হাজার এর উপরে বাস এবং মিনিবাস বদলে ফেলতে পারবেন পুরনো বাস ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। বিভিন্ন ইলেকট্রিক গাড়ি ও বাইক নির্মাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে স্বঘোষিত কিছু পরিবেশবিদদের অশুভ আঁতাতের ফলস্বরূপ ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল যে অবাস্তব রায় দিয়েছে, তা বাস্তবায়িত করতে গেলে এই মুহূর্তে বাংলায় কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে।

যেখানে বাংলার ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে জিএসটি বকেয়া কেন্দ্রের কাছে পড়ে রয়েছে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি সেখানে বিপুল অংকের এই খরচ রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে করা সম্ভব নয়। আবার রাষ্ট্রীয় ব্যাংক গুলি যেখানে বিপুল পরিমাণ দেনার দায় ধুঁকছে সেখানে তারাও বাস মালিক অথবা গাড়ি মালিকদের রাতারাতি বিপুল অংকের এই ঋণ দিতে প্রস্তুত নয় বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here