Last Updated on May 22, 2023 9:07 PM by Khabar365Din
হিন্দু ধর্মের পুরোহিততন্ত্রের অনাচার, কুসংস্কার, নারীদের প্রতি অন্যায় অবিচার, কদাচারের মূলে যে মহামানব কুঠারাঘাত করেছেন যে ভারত প্রতীক ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে বাধ্য করেছেন সতীদাহের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নে সেই
যুগাবতারের আজ ২৫০তম জন্মবার্ষিকী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, তিনি ভারত প্রতীক যুগপুরুষ। ভারতবর্ষে আধুনিক ভাবনা চিন্তার জনক। একদিকে তিনি ভারতীয় রেনেশাঁর প্রবর্তক। অন্যদিকে ভারতীয় জাতীয়বাদের জনক। মহাত্মা গান্ধি বলেছেন, ‘তিনি নবজাগরণের অগ্রদূত’। পণ্ডিত নেহরুর মতে, ‘ইউরোপের রেনেশাঁর প্রতিকৃত পেট্রার্ক ও বোকাচ্চিও থেকে রাজা রামমোহন ভারতীয় রেনেশাঁ আরও উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন।
৩৬৫ দিন। সুমন ভট্টাচার্য। রামমোহন এবং ভাজপা? আরএসএস এবং সর্বধর্মসমন্বয় এর মতোই অবাস্তব। এ তো ভূতের মুখে রামনাম কারণ বাঙালির নবজাগরণের এই আইকনের সঙ্গে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধ ২৫০ বছর আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। স্বপন দাশগুপ্তের মতো ভাজপা র তাত্বিকরা যতোই রামমোহনকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করুন, তা সম্ভব নম্র। আমাদের মনে রাখতে হবে গৌরী লঙ্কেশ কিংবা কালবুর্গীকে হত্যার জন্য যেসব হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে, তারা নিয়ম করে রামমোহন এবং বিদ্যাসাগরকে আক্রমন করেন সনাতন হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করার জন্য, হিন্দুধর্মে সংস্কারের চেষ্টার জন্ম। আরএসএস এর প্রায় সব শাখা সংগঠনের তরফেই তাদের লেখ ায়, ডকুমেন্টশনে রামমোহন এবং বিদ্যাসাগরকে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
ভাজপা র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে রামমোহন যাবেন কি করে? রামমোহন তো হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রামমোহন তাই হিন্দু নন, ব্রাহ্ম। ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথও ব্রাহ্ম। আর রামমোহন হিন্দুধর্মের যেসব কুসংস্কারের বিরোধিতা করেছিলেন, সেইগুলোকেই তো ভাজপা বা আরএসএস আজও চ্যামপিয়ন কৰে। আমরা কি ভুলে যাব রূপ কানোয়ারের ঘটনার পরে আরএসএস বা ভাজপার নেতারা কি বলেছিলেন? যে ভাজপা আজ সমলিঙ্গের বিয়ের বিরোধিতা করছে, তারা বিধবা বিবাহ কিংবা সতীদাহ নিয়ে কি মতামত পোষন করে, তা তো কারও অজানা নয় !
রামমোহন রাজা উপাধি পেয়েছিলেন মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের কাছ থেক্সে। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের পেনশন বৃদ্ধির জন্য সওয়াল করতেই রামমোহনের বিলেত যাত্রা। সেই অর্থে তিনি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের প্রতিনিধি হিসেবেই ইংল্যান্ডে পৌছেছিলেন। তাহলে যে ভাজপা, কেন্দ্রের যে শাসক দল ইতিহাস থেকেই মুঘলদের পর্ব বাদ দিয়ে দেয়, তারা মুঘল সম্রাটের প্রতিনিধি রামমোহনকে ছোঁবে কি করে ? রামমোহন মুঘল সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে বিলাত যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন সতীদাহ নিবারণ আইনের বিরোধিতায় কট্টরপন্থী হিন্দুদের প্রিভি কাউন্সিলের কাছে পাঠানো প্রতিবাদপত্রের জবাব দিতে। শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকান্ত দেবের নেতৃত্বে কট্টরপন্থীরা যে ‘হিন্দুধর্ম রসাতলে গেল বলে শোরগোল তুলেছিলেন, বেন্টিঙ্কের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তার জবাব দেওয়ার জন্য, পাল্টা তথ্য পেশের জন্যই রামমোহন বিলেত গিয়েছিলেন। যিনি হিন্দুধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এতটা আক্রমনাত্মক ছিলেন, তাঁকে আরএসএস গ্রহণ করবে কি করে?