Last Updated on July 1, 2022 4:43 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। দেশে যা ঘটেছে তার জন্য নূপুর শর্মা একাই দায়ী। উনি একটা দলের মুখপাত্র তো কী হয়েছে ! উনি ভাবছেন, ক্ষমতার ব্যাকআপ আছে ওঁর সঙ্গে, তাই দেশের কানুনকে সম্মান না জানিয়ে যে কোনও রকম মন্তব্য করতে পারেন। গোটা দেশের কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত। এভাবেই বাজপা নেত্রী নূপুর শর্মাকে তীব্র ভর্ৎসনা করলো সুপ্রিম কোর্ট।
হজরত মোহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে একটি টিভি চ্যানেলের ডিবেটের আসরে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ভাজপা নেত্রী নূপুর শর্মা। সেই মন্তব্যের পরেই রাষ্ট্রসংঘ থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশের পাশাপাশি আরব দুনিয়ার সমস্ত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়ে নিন্দা করা হয় ভারত সরকারের এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন শাসক দল ভাজপার মুখপাত্র নূপুর শর্মার এই মন্তব্যের। দেশে তারপর থেকে উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান এমনকি বাংলাতেও সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল।
বিশ্বের অন্তত ত্রিশটি দেশের পক্ষ থেকে নুপুর শর্মাকে গ্রেফতারের দাবি তোলার পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে নূপুর শর্মাকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন। দেশের একের পর এক রাজ্যে নুপুর শর্মাকে গ্রেফতারের দাবিতে দায়ের হয়েছে অসংখ্য এফআইআর। তারপরেও ভাজপা নেত্রীকে গ্রেফতার করেনি ভাজপাশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার অথবা অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ সুপ্রিমকোর্ট নূপুর শর্মার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার ব্যাকআপ থাকার যে প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন তা কার্যত ভাজপা শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা বলেই মনে করছে বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্ট আইনজীবীরা।
কি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট
নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই সব অভিযোগ একত্রিত করে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নূপুর শর্মা। তিনি আবেদন জানিয়ে দাবি করেন, তাঁর প্রাণ সংশয় রয়েছে। তবে নূপুরের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট নূপুর শর্মাকে তিরস্কার করে বলে, নূপুরের বেলাগাম মুখের কারণে দেশে আগুন লেগেছে। উদয়পুরের মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দায়ী তিনি।
শুনানি চলাকালীন সাসপেন্ডেড ভাজপা নেত্রীর আইনজীবী অভিযোগ জানান, উনি ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছেন। এপ্রসঙ্গে বিচারপতি জানতে চান, উনি হুমকি পাচ্ছেন ? নাকি, উনি নিরাপত্তায় হুমকির কারণ ? যেভাবে গোটা দেশে আবেগে সুড়সুড়ি দিয়েছেন। দেশে যা ঘটছে তার জন্য এই মহিলা একাই দায়ী।
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, আমরা ওই ডিবেট দেখেছিলাম, কীভাবে উনি জেদ ধরেছিলেন। যেভাবে উনি সবকিছু বলেছেন এবং পরে জানিয়েছেন যে তিনি একজন আইনজীবী, তা লজ্জাজনক। গোটা দেশের কাছে ওঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
প্রতিবাদ নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার
এর প্রেক্ষিতে নূপুর শর্মার আইনজীবী আদালতে জানান, টিভিতে বিতর্ক চলাকালীন উনি সঞ্চালকের একটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন শুধুমাত্র। তখন আদালত বলেন, তাহলে হোস্টের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত। আইনজীবী তখন মন্তব্য করেন, নাগরিকদের বলার কোনও অধিকার নেই। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, গণতন্ত্রে সবার বলার অধিকার আছে। গণতন্ত্রে, ঘাসেরও জন্মানোর অধিকার আছে। গাধার খাওয়ার অধিকার আছে। উনি একটা দলের মুখপাত্র তো কী হয়েছে ! উনি ভাবছেন, ক্ষমতার ব্যাকআপ আছে ওঁর সঙ্গে, তাই দেশের কানুনকে সম্মান না জানিয়ে যে কোনও রকম মন্তব্য করতে পারেন।