Last Updated on March 16, 2023 7:03 PM by Khabar365Din
যে যত কম জানে, সে তত কম মানে, জ্ঞানচর্চায় ঘোর আপত্তি হীরক রাজার দরবারে
৩৬৫ দিন। জ্ঞান চর্চায় অরুচি মোদি সরকারের ! ৮ বছর অতিক্রান্ত, ফাঁকা পড়ে রয়েছে ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসর বা এন আর পি- র পদ। সর্বোচ্চ ১২ জন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথিতযশা ব্যক্তি এই পদে নিয়োগ করা যায় কিন্তু মোদি সরকারের আমলে গত আট বছরে একজন-ও এন আর পি নিয়োগ করা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা পিএমও-র সাফাই এন আর পি নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা ভাবনা চলছে। বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে, সেই সব বিচার বিশ্লেষণ করতে সময় লাগছে। প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলেই নতুন ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসর নিয়োগ করা হবে। যদিও শিক্ষাবিদদের প্রশ্ন, এন আর পি তো অত্যন্ত সম্মানজনক এবং দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদ যাঁরা বিভিন্ন সময় অর্জন করেছেন তাঁরা বিশ্ববরেণ্য, দেশের জন্য তাঁদের সীমাহীন অবদান, সেই পদে নিয়োগে কেন এত অনীহা কেন্দ্রের?
এনআরপি নিয়োগের নিয়ম
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালে প্রথম এন আর পি স্কিম চালু করা হয়। ঠিক হয় ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসার পদে এমন ব্যক্তিত্ব দের নিয়োগ করা হবে যাদের সমাজে অপরিসীম আবদান রয়েছে। বিজ্ঞান, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা পন্ডিত যাদের এই পদে নিয়ে আসা হবে। তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামত বিষয়ে যে কোনও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণা করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে একটি বার্ষিক রিপোর্ট পাঠাবেন। তাঁদের গবেষণা থেকে দেশ উপকৃত হবে। প্রাথমিক ভাবে পাঁচ বছরের জন্য এন আর পি নিয়োগ করা হবে পরবর্তীতে গবেষণার অগ্রগতি বিবেচনা করে আরও পাঁচ বছর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এন আর পি মাসিক ৭৫ হাজার টাকা সাম্মানিক এবং কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবার পর মাসিক ২৫ হাজার টাকা পেনসন পান। কাদের এন আর পি করা হবে তা ঠিক করেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে নি এ গঠিত বিশেষ কমিটি। মোদি জমানায় শেষ বার ২০১৫ তে এন আর পি পদে নিয়োগ হয় তার পর থেকে থমকে গোটা প্রক্রিয়া। ২০১৭ তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এন আর পি-তে কিছু বদল আনার সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন এই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়ঃসীমায় পরিবর্তন, সাম্মানিক এবং পেনসনে পরিবর্তন, কার্যকালের মেয়াদে পরিবর্তন প্রভৃতি। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নতুন সুপালিশ সহ রিপোর্ট-ও তৈরী করে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ২০২১ থেকে তা পিএমও দফতরের ঠাণ্ডাঘরে চলে গিয়েছে। গত ৮ বছরে এ ব্যাপারে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই মোদি সরকারের।
কারা এন আর পি হয়েছেন
১৯৪৯ এ এই স্কিম চালু হবার পর প্রথম এন আর পি বা ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসর পদে বসেন নোবেল জয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী সি ভি রমন, পরবর্তীতে বিশ্ব বিখ্যায চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, পদার্থ বিজ্ঞানী এস এন বোস, গোবর্ধন মেহেতা, এম এস ভালিয়াথান, সিএন আর রাও, আন্দ্রে বেতেল্লি প্রমুখ এই পদে আসেন। মোদি সরকারের আমলে শেষ বার ২০১৫ সালের জানুয়ারি এবং এপ্রিলে এন আর পি পদে নিয়োগ হয়। ওই বছর ১ জানুয়ারি এই পদে নিযুক্ত হন সূর্যকান্ত বালি, অশোক গজানন মোদক, এস এল বৈরাপ্পা এবং ১ এপ্রিল নিযুক্ত হন জয়ন্ত কুমার রায়।
কেন্দ্রের অনীহার কারণ
৮ বছর ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসর পদ শূন্য থাকার পিছনে ভাজপার রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে স্পষ্টতই অভিযোগ করছেন শিক্ষাবিদ এবং রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে, ২০১৪ তে মোদি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার গৈরিকীকরণ। দু’ভাবে এই গেরুয়াকরণ হচ্ছে। এক, যুগ্ম তালিকায় থাকা শিক্ষাকে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয়করণ করা। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়া। ইউজিসি-র মত সংস্থাকেও গুরুত্বহীন করে দেওয়া, বিভিন্ন সাম্মানিক পদ তুলে দেওয়া। অর্থাৎ , কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর যা বলবে তাই মানতে হবে। আর দ্বিতীয়ত হল কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিটি বা সাম্মানিক বিভিন্ন পদের মাথায় বিদ্যুৎ চক্রবর্তী গোছের লোক বসানো, যারা আর এস এস – এর প্রতি অনুরক্ত, যাদের কাজ হবে ভাজপাকে রাজনৈতিক মাইলেজ দেওয়া। এই দ্বিতীয় এই নীতিতেই ব্রাত্য হয়ে পড়েছে ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসরের পদ। এমন তো নয় যে দেশে স্কলারের সংখ্যা কমে গিয়েছে কিন্তু বিষয়টা হল এই স্কলাররা যে এন আর পি পদে বসে মোদি সরকারের গুণগান করবেন না তা পরিষ্কার। আর এখানেই গণ্ডোগোল। মোদি সরকারের নীতি হল জ্ঞান জগতেও গেরুয়াকরণ, আর সেই অ্যাজেন্ডাই যদি পূরণ না হয় তাহলে ন্যাশানাল রিসার্চ প্রফেসর করে লাভ কি ! দেশের সমাজ, শিক্ষা পিছিয়ে পড়লে কি যায় আসে আসল হল গেরুয়া শিক্ষা নীতি!