Titanic: আটলান্টিকের জলের চাপে ভেঙে চুরমার টাইটান, মৃত পাঁচ অভিযাত্রী, টাইটানিক ছবির পরিচালক ক্যামেরনের দাবি ধন খুবই ভ্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক

0

Last Updated on June 24, 2023 7:55 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। বিখ্যাত সমুদ্র অভিযান ও গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞাপন ট্যাগলাইন ছিল, টাইটান উইল ফলো টাইটানিক। পৃথিবীর ইতিহাসে অভিযানের অসংখ্য ট্র্যাডিশন মেনেই যেন টাইটানিকের মতই সলিলসমাধি হল ছোট্ট সার্চ সাবমেরিন বা সাবমার্সিবল টাইটানের। সাড়ে চার দিনের রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা আর উদ্বেগের মর্মান্তিক অবসান ঘটিয়ে মার্কিন কোস্টগার্ড সার্চ অপারেশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল,ধবংস হয়েছে ডুবোজাহাজ টাইটানের। একই সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরের ১২ হাজার ফুট গভীরেই মৃত্যু হয়েছে পাঁচ অভিযাত্রীর।
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া গিয়েছে টাইটান সাবমেরিনের ধ্বংসস্তূপ।

চার দিন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ,ফ্রান্স ও আমেরিকার উদ্ধারকারীরা এবং তাদের সার্চ রোবট ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পেয়েছে। সমুদ্র গভীরে পর্যটনে এই সাবমেরিন পাঠিয়েছিল আমেরিকান বেসরকারি অভিযান সংস্থা ওশানগেট এক্সপিডিশনস । বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তারা জানায়,আমরা বিশ্বাস করে মেনে নিয়েছি যে,আমাদের সিইও স্টকটন রাশ,হামিশ হার্ডিং,পল হেনরি নাজুলে , শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান দাউদ আর জীবিত নেই। ব্যতিক্রমী এই পাঁচ অভিযাত্রী ছিলেন সাহসী এবং সমুদ্রকে বাঁচানোর লড়াইয়ের সৈনিক। এই ক্ষতির পূরণ হয় না। এই কঠিন সময়ে এদের পরিবারের সঙ্গে আমরাও একাত্মভাবে আছি।

১. কোথায় কিভাবে মিলল

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় যখন রাত ১২.৪৫ তখন তিন দেশের উদ্ধারকারী দলের পাঠানো জাহাজ আর্টিক হরাইজন থেকে সমুদ্রে নামানো আরওভি বা রিমোটলি অপারেটেড ভেইকেল রোবট যান টাইটানের টুকরো হয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। ঠিক টাইটানিক জাহাজের কাছেই খোঁজ মেলে ডেবরি ফিল্ড বা ধ্বংসের ক্ষেত্র।

২. কী ঘটেছিল টাইটানের সঙ্গে

গত রবিবার আটলান্টিকের গভীরে শায়িত টাইটানিক প্রত্যক্ষ করতে মাদার শিপ থেকে ডুব দিয়েছিল টাইটান। ৩০০ মিটার গভীরে পৌঁছতেই মাদার শিপ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটানের। ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন মজুত ছিল। ওশেনগেট সংস্থার এই সাবমেরিন এমন প্রযুক্তিতে তৈরি, ডুব দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা নিজে থেকে উপরে ভেসে উঠবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। এদিকে অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে। ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরেই সব অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইটান ওই গভীরতায় নামার পরেই বিস্ফোরণে চুর্নবিচূর্ণ হয়ে যায়। সম্ভবত প্রবল জলের চাপে এটি হয়েছে। সঙ্গে ওই প্রেশার আর শীতলতায় হটাৎ অতি শীতল ও ভারী স্রোত বইতে শুরু করলে যান্ত্রিক গোলযোগ হওয়া স্বাভাবিক। তাতেই ব্লাস্ট হয়।

৩. অভিযাত্রীরা

১১০ বছর আগে হিমশৈলের আঘাতে টাইটানিকের সলিল সমাধির সেই ঘটনা আজ এপিক হয়ে গিয়েছে। আকর্ষণ তো কমেই নি,বরং টাইটানিকের রহস্যভেদে অভিযাত্রীদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। ওশানগেট এক্সপিডিশনের সিইও ও মার্কিন ধনকুবের স্টকটন রাশ, তিনি নিজে একজন অভিযাত্রী। একাধিকবার ১২ হাজার ফুট সমুদ্রতলে ঘুরে এসেছেন। এই অভিযানের আর এক অভিযাত্রী হামিশ হার্ডিং তো স্বনামধন্য অভিযাত্রী। মহাকাশের স্পেস স্টেশন থেকে একাধিকবার কুমেরু অভিযান এবং বিশ্বের গভীরতম অঞ্চল প্রশান্ত মহাসাগরের চ্যালেঞ্জার ডিপ ঘুরে এসেছেন। যার গভীরতা দুটো মাউন্ট এভারেস্ট এর সমান। তৃতীয় অভিজ্ঞ অভিযাত্রী হিসাবে ছিলেন ফ্রান্স নৌসেনার প্রাক্তন সাবমেরিন কমান্ডার পল অঁরি নাজোলে। চতুর্থ এবং পঞ্চম অভিযাত্রীরা হলেন পাক বংশোদ্ভুত ধনকুবের ৪৮ বছরের শাহজাদা দাউদ ও তার সন্তান ১৯ বছরের সুলেমান দাউদ।

৪. বাবা ছেলের মৃত্যু এবং স্টকটন রাশের টাইটানিক অভিশাপ।

পাক ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ছোটো থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ছিলেন। একই নেশা তার ছেলে সুলেমানের মধ্যেও ঢুকে পড়েছিল। এর আগেও বাবা ছেলে বাহামা, আমাজন ,সাহারা কিংবা আল্পস অ্যাডভেঞ্চার করে এসেছে। টাইটানে চেপে টাইটানিক দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি তারা। অদম্য অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় একই সঙ্গে আটলান্টিকে মর্মান্তিক সলিলসমাধি হল বাবা ছেলের। অন্যদিকে টাইটানিকের অভিশাপ ফিরে এলো ওশেনগেট সংস্থার মালিক স্টকটন রাশের পরিবারে। টাইটানিকের যাত্রী বিখ্যাত ট্রাউস পরিবারের এই প্রজন্মের সন্তান তার স্ত্রী।

যারা জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত টাইটানিক ছবিটি দেখেছেন,তাদের নিশ্চই মনে আছে সেই মর্মান্তিক অথচ রোমান্টিক দৃশ্যটা। আর কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু আসন্ন জেনেই টাইটানিক জাহাজের যাত্রী মার্কিন ধনকুবের ইডিসর ট্রাউস এবং তার স্ত্রী ইভা ট্রাউস দুজন খুব ভালো দামী পোশাকে সজ্জিত হয়ে নিজদের পালঙ্কে একে অপরকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন মৃত্যুর অপেক্ষায়। আসল ঘটনাটি ছিল,তারা দুজনেই শেষ যাত্রী ছিলেন টাইটানিকের। ইভার জন্য নৌকার ব্যবস্থা হলেও তার স্বামীর জন্য হয়নি,তাই দুজনের ডেকে হাতে হাত ধরে দাড়িয়ে ছিলেন। যেন টাইটানিকের স্মৃতি আবার আমার পরিবারকে আঘাত করল,লিখেছেন স্টকটনের স্ত্রী ও টাইটানিকের যাত্রী ট্রাউস বংশের নাতনি ওয়েন্ডি রাশ।

ক্ষুব্ধ জেমস ক্যামেরন

টাইটানিক’ চলচ্চিত্রের পরিচালক জেমস ক্যামেরন বলেছেন, আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ‘টাইটান’ নিখোঁজের তথ্য জানার পরই তিনি সাবমেরিনটির পরিণতি বুঝতে পেরেছিলেন। এই প্রমোদ ভ্রমণ বন্ধ হাওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন,১৯৯৭ সালে ‘টাইটানিক’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করার আগে ১০০ মিনিটের ডকুমেন্টরি করেছিলেন। তিন বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩৩ বার ১২ হাজার ফুট সমুদ্র গভীরে গিয়েছি। প্রতিবারই ১০ মিনিট করে। এর বেশি সম্ভব নয়। সেখানে সাত ঘণ্টার ভ্রমণ মৃত্যুকে ডেকে আনা ছাড়া কিছুই নয়। ১৯১২ সালে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিক জাহাজটি ডুবে যায়। উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।