Last Updated on February 16, 2023 7:15 PM by Khabar365Din
গিল্ড কর্তা সুধাংশু এবং ত্রিদিবের মতে, সৌজন্য একতরফা হয় না

৩৬৫দিন।ইন্দ্রনীল সাহা। প্রতিবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিদেশের স্টলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জায়গা দেওয়া হয় বাংলাদেশের প্যাভেলিয়ানকে। এবছরও ৭১ জন ওপার বাংলার প্রকাশক বইমেলায় দেড় কোটি টাকার ওপরে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অমর একুশে বইমেলায় আমন্ত্রণই জানানো হয় না পশ্চিমবঙ্গের পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডকে।এমনকি বই বিক্রি তো দূর, পশ্চিমবঙ্গের কোন লেখকের বইকে বাংলাদেশের মেলায় রাখতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না। বছরের পর বছর ধরে এই দ্বিচারিতা কেন? বারবার কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানালেও ওপার বাংলায় পশ্চিমবঙ্গের লেখক, প্রকাশকরা ব্রাত্য কেন? এবার গিল্ডের তরফে সরাসরি এই প্রশ্নই তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সৌজন্য একতরফা হয় না। দুই বাংলার সংস্কৃতি, সম্পর্ক অটুট রাখতে গেলে দু তরফেই উদ্যোগী হতে হবে।
১৯৯৯ সালে কলকাতা বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেইসময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় এসেছিলেন। গিল্ড ও লেখকদের একটি প্রতিনিধি দল শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুনীল গাঙ্গুলী, সমরেশ মজুমদার, বাদল বসু ও তৎকালীন গিল্ড কর্তা অনিল আচার্য। ঠিক হয় বাংলাদেশে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বুকফেয়ার করা হবে। সেইমতো ২০০০ সালে ঢাকায় বইমেলার আয়োজন করে হাসিনা সরকার। ভারতীয় লেখকদের ব্যাপক বই বিক্রি হয় ।যদিও দু বছরের মধ্যেই ঢাকার আন্তর্জাতিক বইমেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা প্রতি জানিয়ে অমর একুশে বইমেলার আসর বসে হাসিনার দেশে। শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের শহীদদের নিয়ে লেখা বই রাখা হয়। অমর একুশে বইমেলা করলেও সেখানে ভারতীয় বাঙালি লেখক, প্রকাশকরা ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন। তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের লেখক, প্রকাশকরাও।
কারণ ,১৯৯৬ সাল থেকে কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ। ৬০০ বর্গফুট জায়গায় প্রথমে স্টল হতো এখন সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুট। এ প্রসঙ্গে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় সাফ জানালেন, আমাদের প্রকাশকদের আমন্ত্রণ ছেড়েই দিন, লেখকদের আমন্ত্রণ জানানো অব্দি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি ওদের অমর একুশে বইমেলায় ভারতীয় বাঙালি লেখকদের বই পর্যন্ত রাখতে দেয় না। বাংলাদেশের বাইরে ভারতীয় বাঙালি এত লেখক রয়েছে, সমরেশ, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সঞ্জীব কারোর বই ডিসপ্লে করে না। ২০০০ সালের পর থেকে আমাদের আমন্ত্রণ করা বন্ধ করে দিয়েছে, আমরা বারবার বলেছি আমাদের আমন্ত্রণ করুন। বাংলাদেশে ভারতীয় লেখকদের কোন রিপ্রেজেন্ট নেই। তিনি আরো বলেন,প্রতিবার কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করা হয়, এমনকি অন্য কোন দেশকে এত বড় জায়গা দেওয়া হয় না মেলায়। সব সম্পর্কই দুতরফা হয়। বড় ভাই বারবার কোল পেতে ডাকবে, আর ছোট ভাই ডাকবে না। আমাদের আমন্ত্রণ জানাবেন আর আমরা সম্মান দিয়ে সম্ভাষণ করে প্রতিবার আমন্ত্রণ জানাবো এটা হতে পারে না। ক্ষোভের সুর শোনা গেল গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দের গলাতেও। তিনি বলেন, প্রতিবছর ওরা কলকাতা বইমালে আসে ব্যবসা করে খুব ভালো কথা, করুক না। আমরাও চাই দুই বাংলা একসাথে কাজ করুক।কিন্তু এটা তো ঠিক না প্রতিবছর ওরা বইমেলায় আসবে আর একবারও বাংলাদেশ বইমেলায় আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবে না। ওরা বলছে, আন্তর্জাতিক বইমেলা করবে, করোনা মহামারীর কারণে এতদিন করতে পারেনি। কিন্তু করোনা কেটে গেছে তো দু’বছর হয়ে গেল। আমরা এত বড় বইমেলা করে ফেললাম। যদিও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই প্রশ্ন এখন কেন উঠছে জানি না। তবে বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক বইমেলা হয় না। আগে হত। এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার একটা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করার পরিকল্পনা হয়েছে। এই মেলা হলে সবার আগে পশ্চিমবঙ্গ কে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এখন আমাদের দেশে অমর একুশে বইমেলা করে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রনাধীন বাংলা আকাডেমি। অমর একুশে বইমেলায় শুধু ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে করা হয় যেখানে কোনো দেশেরই স্টল থাকেনা। আমার যেমন কলকাতায় বাংলাদেশের বইমেলা করেছি, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে কলকাতা বইমেলা করার জন্য গিল্ডকে আমরা আগেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্তু কি কারণে হয়নি সেটা জানি না।