Jim Corbett: ভারতে বাঘ সংরক্ষণের পথিকৃৎ জিম করবেটের ১৪৮ তম জন্মদিন, জিম করবেট টাইগার রিজার্ভের নাম বদলে রামগঙ্গা রাখা হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না

0

Last Updated on July 26, 2023 6:59 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। বিশ্বখ্যাত অভয়ারণ্য জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের নাম এখন রামগঙ্গা রাখার প্রস্তাব জমা পড়েছে। সারা দেশ জুড়ে রামের নামের যে জয়জয়কার চলছে, প্রজেক্টকে সমে রেখেই এই পরিকল্পনা। যদিও রাম এবং গঙ্গার সঙ্গে কুমায়ুনের গারোয়াল পাহাড় জঙ্গল ঘেরা এশিয়ার প্রথম অভয়ারণ্যের কোনও সম্পর্ক নেই, তবুও কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম। কিন্তু করবেট ন্যাশনাল পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রামগঙ্গা নদী এবং শ্রী রামের কথা মাথায় রেখেই ঐতিহ্যশালী এই জাতীয় অভয়ারণ্যের নাম বদলের প্রস্তাব পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় বন দফতর। সম্ভবত হয়েও যাবে। যদিও গোটা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এশিয়ার প্রথম ন্যাশনাল পার্ক করবেট নামেই জনপ্রিয়। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, রাম ও গঙ্গা দুইই পবিত্র। বাঘের জঙ্গলের নাম বিদেশির নামে কেন হবে? কোনও নাম না পাওয়া গেলে, শ্রী রামের নামেই হোক। এটাই তাদের প্রস্তাব। আশ্চর্য। প্রতিটা নামের পিছনে তো একটা ইতিহাস,ঐতিহ্য কিংবা যুক্তি রয়েছে। কিন্তু রামের নামে সব একাকার।

এমনও হতে পারে কাল মাউন্ট এভারেস্টের নাম হয়ে গেল সভারকর চূড়া। কিংবা বে অফ বেঙ্গলের নাম শ্যামাপ্রসাদ সাগর।অস্বাভাবিক কিছুই নয়। গারোয়াল রাজাদের এই বিস্তীর্ণ পাহাড় জঙ্গল আঠারোশ শতকে ব্রিটিশ প্রভিনসের আওতায় আসে, এবং সেখানকার জঙ্গলে বসবাসকারী বুকাস আদিবাসীদের স্থানান্তর করে এই অরণ্যকে রক্ষা করার প্রথম উদ্যোগ নেন স্যার ম্যালকম হেলি। ১৯৩০ এ এটি এশিয়ার প্রথম অভয়ারণ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটির নামকরণ হয় হেলি ফরেস্ট। জিম করবেটই প্রথম মানুষ যিনি এই জঙ্গলের প্রতিটা ইঞ্চি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।সর্দার রানা, উদ্ভিদবিদ্যার গবেষক ডেভিড ফ্র্যাঙ্ক ও তিনি এই অরণ্যের বিপুল প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য সম্পর্কে ধারণা পান। ১২০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ,অর্কিড, ৭৫৭ প্রজাতির পাখি, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, উভচর এবং কয়েকশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীব বৈচিত্রে ভরা এই অরণ্যকে রক্ষা করাটা কতটা জরুরি তিনি বুঝেছিলেন।

কোনজার্ভেশনের জ্ঞানগর্ভ যে বক্তৃতা নরেন্দ্র মোদি ন্যাশনাল পার্কে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড শুটিং করার সময় ক্যামেরার সামনে দিয়েছিলেন,সেই ওয়াইল্ড লাইফ কোনজার্ভেশন বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রথম ধারণা এই জিম করবেটই দিয়ে গিয়েছিলেন। গোটা বিশ্বের কাছে করবেট ন্যাশনাল পার্কের পরিচয়, ও খ্যাতির অন্যতম কারণ যে মানুষটি তাঁকে বাদ রেখে এই অভয়ারণ্যর কোনই মূল্য নেই।করবেটের বাবার জন্ম কুমায়ুনে। তিনি ছিলেন নৈনিতালের পোস্টমাস্টার। করবেট কোনদিনও ইংল্যান্ড যাননি। হিন্দি, গারোয়াল, পাঞ্জাবি সহ ১১ টি দেশীয় ভাষায় কথা বলতে পারতেন। কুমায়ুনে তাঁর উদ্যোগেই প্রথম শিশুদের স্কুল খোলা হয়। যেখানে ইংরেজি পড়াতেন তাঁর বোন।

সম্ভবত এটিই পরাধীন ভারতের প্রথম স্কুল যেখানে মিড ডে মিল দেওয়া হত, এবং পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ে পড়ানো হত। জিম করবেট ব্রিটিশ হয়েও অনেক বেশি ভারতীয়। সিস্টার নিবেদিতা, মাদার টেরিজা, অনি বেসন্ত যদি ভারতীয় হন, করবেটও ভারতীয়। যোগ্য সন্মান তাঁর প্রাপ্য। পরাধীন ভারতে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের পথকৃত্ জিম করবেট ছিলেন এক বিরল শিকারি যিনি অকারণে একটি প্রাণীকেও হত্যা করেন নি। উলটে চেষ্টা করেছেন তাদের রক্ষা করার। সারা জীবনে ৪৫৬ টি বাঘ শিকার করেছেন,যেগুলো প্রতিটা ছিল ম্যানইটার। ব্রিটিশ সরকারের নথিতে পাওয়া যায়,এই ৪৫৬ টি বাঘের ও চিতাবাঘের হাতে প্রাণ গিয়েছিল মোট ১৭৮৯ জন মানুষের। ৯২ টি আহত বাঘকে সুস্থ করে আবার জঙ্গলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন করবেট। তখন রেডিও কলার ছিল না, নিজে বাঘকে অনুসরণ করে নজর রাখতেন। ভারতের সমস্ত জঙ্গল, এমন কি সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেখানে ঢোকার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হত, সেখানেও ছিল জিমের অবাধ প্রবেশাধিকার। পন্ডিত নেহরু তাঁকে সেই সন্মান দিয়েছিলেন।