Last Updated on August 17, 2023 5:32 PM by Khabar365Din
৩৬৫দিন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হত্যা রহস্যে পুলিশের জালে আরো ৬ জন ছাত্র। যার মধ্যে ৩ জনই প্রাক্তন পড়ুয়া। মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সহ একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে মোট ৬ জন অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের টিম। দ্রুত ছয়জনকে আজকেই আদালতে তোলা হবে।ধৃতরা হল মহম্মদ আরিফ। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মহম্মদ আশিফ আফজল আনসারি । ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া। গ্রেফতার হয়েছে অঙ্কন সরদার। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সপ্তক কামিলা, সুমন নস্কর ও অসিত সর্দার নামে ৩ জন প্রাক্তন ছাত্র। এই ঘটনায় আগেই মূল অভিযুক্ত সৌরভ
চৌধুরী , মনোতোষ ঘোষ, দীপশেখর দত্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ফলে সব মিলিয়ে ধৃত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬।
ধৃত ৬ জন খুনে সহযোগী
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র খুনে হোস্টেলের ছাত্রদের জেরা করে রহস্যের সমাধানের পথে ক্রমশ এগোচ্ছে লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশ জেরায় জানতে পেরেছে, এই ৬ জনই ছাত্র মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। কেউ খুনের সঙ্গে সরাসরি সহযোগী আবার কেউ তথ্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যেককে জেরা করে ঘটনার দিন রাতে ঠিক কি হয়েছিল তা কার্যত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে পুলিশের কাছে।
কাশ্মীরের বাসিন্দা ধৃত মহম্মদ আরিফ পুলিশের জেরায় জানিয়েছিল, ঘটনার দিন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে সে নাকি বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাঁর হাত ছাড়িয়েই সে ঝাঁপ মারে হস্টেল থেকে। কিন্তু তার বয়ানে সন্তুষ্ট হয়নি গোয়েন্দারা। বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু আরিফই নয়, বাকি ধৃত ৫ জন তাদের বয়ানে নিজেদের অপরাধ কে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এদের বয়ানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায়নি বলেই পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে বিষয়টি সম্পর্কে আরো স্পষ্ট হতে চাইছে।
কাদের মদতে হোস্টেলের গেট বন্ধ ও জিবি হল?
এখনও গোয়েন্দারা কাছে কিছুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। যেমন ওইদিনের ঘটনার পর কেন জিবি মিটিং ডাকা হয়েছিল? খুনের ঘটনা যাতে বাইরে না যায় তার জন্যই কি জিবি করা হয়েছিল? কারা মেইন হোস্টেলের গেটে তালা বন্ধ করে পুলিশকে ঢুকতে আটকে দেয়? সেইসময় তথ্য প্রমান হিসেবে কি কি নষ্ট করা হয়েছে তাও জানতে চাইছে পুলিশ। তবে হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের অনুমান, একজন ছাত্রের মৃত্যুর পর হোস্টেলের পড়ুয়াদের পক্ষে নিজেরাই অ্যালিবাই তৈরি করা সম্ভব নয়। এর পিছনে হাত রয়েছে বড় কোনো রাজনৈতিক সক্রিয় সংগঠনের। যাদের নির্দেশে হোস্টেলের গেট বন্ধ থেকে আরম্ভ করে তথ্য-প্রমাণ লোপাট এবং জিবি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন উপস্থিত প্রত্যেক ছাত্রকে মুখ বন্ধ করার নির্দেশ এসেছিল ওই সংগঠনের তরফেই।
পুলিশের নজরে আরও ছাত্র, খোঁজ নেই একজনের
ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হলেও ছাত্র খুনে আরো কিছু পড়ুয়া রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রে খবর, পুলিশের কাছে আরও যেসব নাম সামনে এসেছে তারা হল অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু, গৌরব দাস, সৈকত সিট। এর মধ্যে অরিত্র ঘটনার পরের দিন থেকেই হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তার কোনো খোঁজ মিলছে না। এরা প্রত্যেকেই এক সময় ফেটসু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে অতিবাম কালেকটিভ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। এর মধ্যে সৈকত ফেসবুক পোস্ট করে লিখেছে, গত দশ পনেরো দিন যাবত আমি যেখানে থাকি,সেই মেসেই আছি।শুধু ঘটনার দিন নয় গত বেশ কয়েক মাসেই হোস্টেলে গিয়ে ওঠা হয়নি।
এই ঘটনার সঙ্গে আমাকে জোর করে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েই সমাজমাধ্যমে জানাতে দেরি হল।
ডিন অফ স্টুডেন্ট ও রেজিস্ট্রারকে তলব
এই ঘটনায় আরও বেশ কিছু তথ্যের সন্ধান পাচ্ছে না তদন্তকারীরা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় এবং রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু রায় তলব করা হয়েছে। বুধবার দুপুর ৩টের সময় লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছেন জয়েন্ট সিপি ক্রাইম শঙ্খ শুভ্র চক্রবর্তী। ঘটনার পর থেকে ডিন অফ স্টুডেন্টসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কেন তিনি খবর পাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়নি ? এই প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ নিহত ছাত্রের বাবা। যদিও আগে একবার ডিন অফ স্টুডেন্ট ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল যাদবপুর থানার পুলিশ। এবার গোটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি ভূমিকা ছিল তার সন্ধান পেতে চাইছে লালবাজার।
অবস্থান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের
১৭ বছর বয়সী ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বুধবার যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে দুপুর দুটো থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ করবে তারা।