সন্দীপ রায়, প্রসেনজিৎ, গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু সহ বাংলার শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে ৩৬৫ দিনের দপ্তর সত্যজিতের মূর্তি প্রতিষ্ঠা

0

Last Updated on February 27, 2022 9:16 PM by Khabar365Din

বাংলার শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের মত
গোটা বিশ্ব চেনে দুই বাঙালিকে রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ রায়, বাঙালির ঘরে ঘরে সত্যজিতের মূর্তি থাকা উচিৎ

৩৬৫ দিন। প্রসেনজিৎ বলেন তারা যখন আন্তর্জাতিক স্তরে যেমন কান, ভেনিস সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্তরের চলচ্চিত্র উৎসবে যান সেখানে বাংলা থেকে সংবাদপত্রের ইতিহাসে বিরল ও ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রবীন্দ্রনাথের পরেই সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray), আন্তর্জাতিক মঞ্চে শ্রেষ্ঠ দুই বাঙালি। ঊনবিংশ শতকের পর থেকে বাংলার রেনেসাঁর সেই মহিকান সত্যজিৎই। সেই সত্যজিতের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন হল সংবাদপত্রের দফতরে।একে নুঃসাহসিক কাজ বললেও কম বলা হয়। ফেটাই সঠিক। পরিচালক গৌতম ঘোষ এভাবেই ব করলেন বাংলা যুগান্তকারী শব্দটাই সংবাদপত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের। মুর্তি উন্মোচন করে অভিভূত প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) বললেন, বাংলার ঘরে ঘরে সত্যজিতের মতি থাকা প্রয়োজন। গোটা বিশ্ব ন দুই বাঙালিকে, রবিঠাকুর ও সত্যজিৎ রায়। চেনে সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তি, তাও আবার সংবাদপত্রের দফতরে। সংবাদপত্রের জগতে কেবল আপনাদেরই এই সাহস আছে, বললেন প্রসেনজিৎ। আবেগতাড়িত সন্দীপ রায় বললেন, রায় পরিবার গর্বিত। জব্বর হয়েছে, চেনা যাচ্ছে বাবাকে। প্রসঙ্গত, রূপকলা কেন্দ্র কিংবা বোড়ালে সত্যজিতের মূর্তি দেখলে কেউই বুঝে উঠতে পারবে না, যে এটা সত্যজিতের মূর্তি। অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও নাট্যবাহি ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বলেন, অনেক সংবাদপত্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষকে তুলে আনার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে সত্যজিৎ সর্বকালের ও সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি কমপ্লিট জিনিয়াস এবং রবীন্দ্রনাথের পরে শেষ রেনেসাঁম্যান। আগামী আরও

১০০ বছর তাঁর প্রভাব বাঙালির মধ্যে বাংলার সংস্কৃতির মধ্যে থেকে যাবে। তার সত্যজিৎ রায়ের দূরদৃষ্টি ও মানবিক চিন্তার সূত্র উল্লেখ করেন সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী । তিনি বলেন, আজ এই মূর্তি প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত খুবই প্রাসঙ্গিক, ৫০ বছর আগে সেই হল্লা রাজার আগ্রাসী যুদ্ধের মতোই পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে, যেন হপ্পা চলেছে যুদ্ধে। শুক্রবার পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে সংবাদপত্রের দফতরে স্থাপিত হল বাংলার শেষ রেনেসাঁ ম্যান সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তি। অভিজাত, সৃজনশীল ও মার্জিত রুচিসম্মত এক মননশীল অনুষ্ঠানে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইতিহাস রচিত হল। অনুষ্ঠানকে গৌরবান্বিত করতে সংবাদপত্রের দফতরে উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধিজীবী, গুণী ও খ্যাতনামা ব্যত্ত্বিরা। উপস্থিত ছিলেন বাংলা চলচিত্রের মহাতারকা ও বাংলা চলচিত্র ইন্ডাস্ট্রির গত সাড়ে চার দশকের লাইফলাইন প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায়, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক যাতিসম্পন্ন পরিচালক গৌতম ঘোষ (Goutam Ghose), সন্দীপ রায় (Sandip Ray), শিক্ষামন্ত্রী ও নাট্যব্যক্তি ব্রাত্য বসু ,বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম দুই শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা রজতাভ দত্ত (Rajatava Dutta) ,বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী (Biswajit Chakraborty) প্রমুখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী (Sabyasachi Basu Ray Chaudhury), প্রাবন্ধিক পাচু রায় (Panchu Ray), পরিচালক সুব্রত সেন (Subrata Sen), ই সময়ের অন্যতম সেরা সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দ্র বিকাশ চাকী (Premendra Bikash Chaki), প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সূচনায় সাড়ে সাত বছরের বর্ণিতার ভায়োলিনে সত্যজিৎ রায়ের দুর্দান্ত থিম মিউজিক, এক সাহসী প্রচেষ্টায় মুগ্ধ সবাই। সত্যজিতের আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করেন

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুশান্ত পালের তৈরি এই মূর্তির প্রশংসা করেন সকলেই। রূপকলা কেন্দ্রে কিংবা বোতালে স্থাপিত সত্যজিতের মুর্তি যাঁরা দেখেছেন, তারা বিস্মিত হন সত্যজিতের এই অবিকল অবয়ব দেখে। স্বয়ং সন্দীপ রায় বলেন, তদিনে কটা মূর্তি হল যেটা যথাযথ। সত্যজিতের মুখ মণ্ডলের খুঁটিনাটি, তাঁর অভিব্যক্তি চিবুকের খাঁজ, চিবুকের বীজ, এমনকি গালের সামান্য বসন্তের ক্ষত পর্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। আংশিল্পী শুভাপ্রসন্ন এসে প্রতিষ্ঠার আগেই দেখে গিয়েছেন এই মূর্তি। কোনও দায়সারা কাজ নয়, দীর্ঘ সাড়ে নয় মাসের পরিশ্রমে দাঁড়িয়েছে এই শিল্পকীর্তি। মূর্তিতে মাল্যদান করেন প্রসেনজিৎ, সন্দীপ রায়, গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, রা সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী সহ উপস্থিত অতিথিরা। সত্যজিৎ রায়ের মত আন্তর্জাতিক মহাতারকাকে সম্মান জানানোর এমন বিরল মুহুর্তের সাক্ষী সবাই থাকতে চেয়েছেন। একে একে সকলেই সংবাদমাধ্যমের দফতরে সত্যজিতের মূর্তি স্থাপনের বিষয়টাকে নিয়ে নিজেদের অভিমত দেন, নৈতিক সমর্থন ও এর অভিযাত ব্যাখ্যা করেন নিজের মত করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেক বিশিষ্টজনেরা, বিভিন্ন সংবাদপত্রে কাজ করে আসা বিশিষ্ট ও খ্যাতনামা প্রান সাংবাদিক ও স্থিরচিত্রগ্রাহকরাও এই অনন্য উদ্যোগকে স্বাগত জানান, সত্যজিতের মূর্তিতে মালাদান করেন, বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে এই বিরলতম অনুষ্ঠান ও উদ্যোগকে সব ধরণের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করার আহবান জানান।

প্রসেনজিৎ বললেন
ঐতিহাসিক, দুঃসাহসী

বাংলা সিনেমার এক নম্বর নায়ক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সত্যজিৎ রায়ের এই আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করতে গিয়ে বলেন সত্যজিৎ রায় যে ছবি করেছেন তা তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবি ও আর্ট ফিল্মের সীমারেখা ঘুচিয়ে দিয়েছে । তিনি বলেন পথের পাঁচালি কোথাও আর্ট ফিল্ম বলে প্রদর্শিত হচ্ছে তখন অন্য জায়গায় তা বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয়ে ভাল ব্যবসা করছে। এদিন সত্যজিৎ রায়কে একজন কমপ্লিট ফিল্ম পার্সোনালিটি বলে ব্যাখ্যা করে তিনি জানান তিনি বাংলাতে ছবি নিয়ে নানান বিতর্ক আছে তার মধ্যে না ঢুকে এটা বিশ্বাস করেন বাংলাতেই বিশ্বমানের ছবি তৈরী করা যায় তা সত্যজিৎ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন আন্তর্জাতিক স্তরে তারা যখন মিলিত হন তখন সত্যজিতের নাম উঠে আসবেই। তিনি বলেন খবর ৩৬৫ দিনের উদ্যোগে এই ধরণের মূর্তি বসানো হয়েছে তাতে তিনি গর্বিত। বাংলার ঘরে ঘরে সত্যজিতের মূর্তি বসানো উচিত।

সন্দীপ রায় বললেন
জব্বর হয়েছে, চেনা যাচ্ছে বাবাকে

বাবা সত্যজিৎ রায়ের শতবার্ষিকীতে একটি খবরের কাগজের অফিসে তার বাবার মূর্তি বসানোতে তিনি আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন এই ধরণের চিন্তাভাবনা খবর ৩৬৫ দিন-ই করতে পারে এদিন তিনি বলেন, এই ধরণের সম্মান সত্যজিৎকে দিয়ে আসলে তারা অনেক বড় একটি কাজ করেছেন। মূর্তির মান নিয়ে বিশেষ উল্লেখ করে তিনি জানান তিনি খুব খুশি যে এই মূর্তিটিতে তার বাবাকে চেনা যাচ্ছে এদিন তার সংক্ষপ্ত ভাষণে তিনি জানান তার বাবাকে এই সম্মান দেওয়াতে রায় পরিবার দারুন খুশি মূর্তির মান ও সমগ্র অনুষ্ঠানটি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সন্দীপ সত্যজিতের ভাষাতেই বলেন জব্বর হয়েছে।

সত্যজিৎ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু
বাংলার রেনেসাঁর শেষ প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু । তিনি জানান সংবাদপত্রের অফিসে এই ধরণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ এদিন তার ভাষণে তিনি বলেন বাংলার অধিকাংশ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরা হয় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নয়তো বাণিজ্যিক সিনেমা নির্ভর ছিল। কিন্তু এদের মধ্যে সত্যজিৎ এমন একজন পরিচালক যার অস্তিত্ব সমান ভাবে ২ জায়গাতেই ছিল। ব্রাত্য এদিন বলেন কিছু কিছু ব্যক্তিত্বকে ঠেকনা দিয়ে কিছু বৃহৎ সংবাদপত্র গোষ্ঠী উপরে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তাদের মধ্যে সেই মেরিট ছিল না ফলে চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি ঊ এদিন তিনি জানান বহু পরিচালক ফ্লোররে অসভ্যতা করেন কিন্তু সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ কিন্তু সেখ ানেই ব্যতিক্রমী। এই বলে তিনি তার সঙ্গে সন্দীপের একটি শুটিং ফ্লোরে তার ইতিবাচক সম্পর্কের স্মৃতিচারণা করেন।

সত্যজিৎ প্রসঙ্গে গৌতম ঘোষ
গণশত্ৰু, দেবী ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আজও প্রাসঙ্গিক

মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য পরিচালক গৌতম ঘোষ

বিশিষ্ট পরিচালক গৌতম ঘোষ প্রথমেই ধন্যবাদ জানান সংবাদপত্র অফিসে চিত্রপরিচালকের মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা ও সত্যজিৎ রায়ের মতো একজনের মূর্তি বসানোর মতো চিন্তা করাকে ঊ তিনি বলেন সত্যজিৎ একটি চিন্তাধারা ঊ গণশত্রু থেকে বাণিজ্যিক ছবি দুই ধরণের ভিন্ন চিন্তাধারা দিয়ে একেরপর এক ছবি করে সফল পরিচালক তিনি ঊ তার চিন্তাধারাকে চিনে তাকে সম্মান জানানো তার মতবাদকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সামিল উ সংবাদপত্রে এই কাজ হয়ে থাকে নিয়মিত ঊ তাই সেখানে এই মূর্তি বসিয়ে সরাসরি কয়েকটি মতবাদকে সামনে নিয়ে আসার এই পদ্ধতিকে তিনি সাধুবাদ জানান।

মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও দে’জ পাবলিশিঙের কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে’র।

সত্যজিৎ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য ‘তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল’ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভীষণ প্রাসঙ্গিক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরি

আমি ঠিক এই জগতের লোক নয়। তাই ঠিক এই নিয়ে বিস্তারে কিছু বলাটা দুঃসাহসিক বিশেষত যখন সামনে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা বসে আছেন। তবে এটুকু বলতে পারি সত্যজিৎ রায় যুদ্ধ নিয়ে যে চিন্তা ভাবনা করেছিলেন তা যে আজও প্রাসঙ্গিক তা নিশ্চয় বলতে হবে না। তার চিন্তাধারা সময়ের থেকে যে অনেকটা এগিয়ে ছিল তা পরিষ্কার সম্প্রতি যুদ্ধের দামানা থেকেই।

মূর্তিতে মাল্যদান অভিনেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর।

সত্যজিৎ প্রসঙ্গে
রজতাভ দত্ত

সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তি বসানোতে একটা গর্বের বিষয় যেমন আছে তেমনি একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে আসলে এটা শুধু একটা মূর্তি নয় সত্যজিৎ একটা চিন্তাধারা যা বাংলা সিনেমাকে একটি স্তরে নিয়ে গেছে। আমরা বাংলা সিনেমাতে অভিনয় করি কিন্তু এর উচ্চতাটা মেপে দিয়েছেন সত্যজিতের মতো কিছু হাতে গোনা মানুষ। সেই রকমের একজনের এই সম্মান জানানোতে আমি উপস্থিত থাকতে পেরে আমি গর্বিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here