Jadavpur University: স্বপ্নদ্বীপের রহস্য মৃত্যুতে খুনের এর মামলা দায়ের , ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের

0

Last Updated on August 11, 2023 6:29 PM by Khabar365Din

৩৬৫দিন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর রহস্যজনক মৃত্যুতে এবার খুনের মামলা দায়ের হল। ছেলের মৃত্যুতে হোস্টেল আবাসিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করলেন স্বপ্নদীপের বাবা রমাপ্রসাদ কুন্ডু। যদিও নির্দিষ্টভাবে কারোর নাম এফআইআর- এ উল্লেখ করা হয়নি। ইতিমধ্যেই ৩০২ ধারা অর্থাৎ খুন ও ৩৪ ধারা অর্থাৎ সংগঠিত অপরাধকে যুক্ত করে তদন্ত চালাচ্ছে যাদবপুর থানার পুলিশ ও হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। শনিবার রাতেই কলকাতা পুলিশের একটি টিম নদিয়ার বগুলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। খুনের লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসা হয়। তার আগে বৃহস্পতিবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশ এসে আমার বোন এবং ভগ্নিপতির কাছ থেকে বয়ানরেকর্ড করেছে। খুনের মামলা করেছি আমরা। আমার ভাগ্নেকে ব়্যাগিং করে মেরে ফেলা হয়েছে।আমরা এখন শুধু দোষীদের শাস্তি চাই। পুলিশ বলেছে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

রাতভর হোস্টেলের ১৫ জন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ
স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী? তার খোঁজে নেমে ইতিমধ্যেই যাদবপুর মেন হস্টেলের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।স্বপ্নদীপ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মেন হস্টেলের এ ২ ব্লক বিল্ডিং এর যে ৬৮ নম্বর ঘরে ছিল, সেই বিল্ডিং-ও ঘরে যান পুলিশ। হোস্টেলের বিল্ডিংয়ের ৩ তলা থেকে স্বপ্নদীপ পড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই ফ্লোরের সমস্ত আবাসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলে যাদবপুর থানায়। রাতভর প্রায়১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাতেই কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) ও ডিসি এসএসডি হোস্টেলে গিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। জয়েন্ট সিপি ক্রাইম শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করছি। তবে কী হয়েছিল এখনই বলতে পারছি না। প্রত্যেকের বয়ান একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিসি এসএসডি ( যাদবপুর ডিভিশন) বিদিশা কালিতা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে।

ডিন অফ স্টুডেন্ট ও হোস্টেল সুপারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

রহস্যের কিনারা করতে এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল সুপার এবং ডিন অফ স্টুডেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে যাদবপুর থানার পুলিশ ও হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা।পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনার দিন রাত ১০ টা নাগাদ ফোন করে ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়কে ফোন করেছিল এক ছাত্র।ফোনে বলা হয়, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ভয় দেখাছে কিছু সিনিয়র ছাত্র। হোস্টেলে থাকতে গেলে হোস্টেলের পাঁচিল দিয়ে হাঁটতে হবে বলছে। ডিন অব স্টুডেন্টস এই ফোন পাওয়ার পর হোস্টেল সুপারকে হোস্টেলে গিয়ে গোটা ঘটনা দেখার নির্দেশ দেন।হস্টেলের সুপার যিনি হস্টেল ক্যাম্পাসের মধ্যেই থাকেন, ঘটনাস্থল থেকে তাঁর কোয়ার্টার মাত্র ১০ মিটার দূরে। সুপার হস্টেলে গিয়ে দেখার পর নাকি ডিন অব স্টুডেন্টসকে রিপোর্ট দেন হস্টেলে কোনো সমস্যা নেই। হস্টেল ঠিক আছে। এমনকি যে ছাত্র ফোন করে ডিন অফ স্টুডেন্টসকে ব়্যাগিং এর কথা
জানিয়েছিল, সেই ছাত্রের নম্বরও
হস্টেল সুপারকে দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, হোস্টেল সুপার ওই
ছাত্রকে একবার ফোন করলেন না কেন? হোস্টেল সুপার ও ডিন অফ স্টুডেন্টের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।তাই এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জট খুলতে চাইছে তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে নোটিশ পাঠিয়েও থানায় ডাকা হতে পারে ডিন অফ স্টুডেন্ট ও হোস্টেল সুপারকে।

স্বপ্নদীপ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল কেন?

স্বপ্নদীপের রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তে পুলিশের কাছে এখনোও বেশ কিছু মিসিং লিংক রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হোস্টেলের এ ২ ব্লকের ৩ তলার বারান্দা থেকে মাটিতে পড়ে বছর। ঘটনার সময় একেবারে বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল স্বপ্নদীপ। যখন তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তখন তাকে গমাছা দিয়ে জড়ানো হয়। তারপর ট্যাক্সি ডেকে কেপিসি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু স্বপ্নদীপ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল কেন? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, র‌্যাগিং এমন মাত্রায় পৌঁছেছিল যে
ঘটনার আগে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় নাচতে বাধ্য করাই শুধু নয় তাকে ওই অবস্থায় বারান্দা দিয়ে হাঁটতে বলা হয়েছিল। শেষে স্বপ্নদীপকে সিনিয়ার ও কিছু বহিরাগতদের তরফে বলা হয়, যারা হোস্টেলে প্রথম আসে তাদের ৩ তলার থেকে ঝাঁপ দিতে হয়।

‘স্বপ্নদীপকে রড দিয়ে মেরে খুন করেছে’
বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর স্বপ্নদীপের দেহ তুলে দেওয়া হয় তাদের পরিবারের হাতে। দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বগুলায় তার বাড়িতে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টে নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। খুনের অভিযোগ দায়ের করার পর স্বপ্নদীপের বাবা রমাপ্রসাদ কুন্ড জানিয়েছেন,ছেলেটাকে রড দিয়ে মারা হয়েছে। ওর গোটা গায়ে দাগ। প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী ও সোসিওলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনোতোষ মন্ডল এদের মাধ্যমেই আমার ছেলে হোস্টেলের ৬৮ নম্বর রুমে ছিল। ওই রুমে রুপদাহ গ্রামের বিমান একটি ছেলে ছিল। রবিবার থেকেই হোস্টেলে থাকতে শুরু করেছিল। আমাদের সঙ্গে ফোনে কথা হতো। বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আমায় ফোন করে বলেছিল আমার খুব ভয় করছে, আমায় হোস্টেল থেকে নিয়ে যাও। এরপর অন্যদের ফোন থেকে ফোন করে ওর মাকে বলেছিল তোমার সাথে অনেক কথা আছে। তখনই খুব আতঙ্কিত ছিল, ওর গলা কাঁপছিল। রাত ১১:৩০ টা নাগাদ ফোন করে বলা হয় ও ঝাঁপ দিয়েছে।

ছাত্র মৃত্যু নিয়েও রাজ্যপালের রাজনীতি

আজ রাজভবনে ডেকে পাঠানো হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও অ্যান্টি ব়্যাগিং স্কোয়াডের সঙ্গেও রাজভবনে বৈঠক করেন রাজ্যপাল।