Last Updated on August 12, 2023 7:12 PM by Khabar365Din
সাক্ষাৎকার- সায়ন্তী অধিকারী
৩৬৫ দিন। কথা ছিল, আজ ছেলের স্মরণে বাড়িতে ৩ দিনের কাজ হবে। কিন্তু স্বপ্নদীপের মা সন্তান হারানোর শোকে যেভাবে উন্মত্ত হয়ে পড়েছে, তারপর আর বাড়িতে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। স্বপ্নদীপের বাড়ি নদিয়ার বগুলাতে। বৃহস্পতিবারের ওই ভয়ংকর ঘটনার পর থেকে মা, বাবা ও ছোট ভাই রানাঘাটের মিল কলোনিতে মামাবাড়িতে এসে রয়েছেন। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১ টা বাজে। বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। উন্মত্তের মত অবস্থা স্বপ্নদ্বীপের মায়ের, সমানে কেঁদে চলেছেন,এঘর ওঘর করছেন,সকালেই একবার তাকে ডাক্তার এসে দেখে গিয়েছে, আবার ডাক্তার ডাকতে হতে পারে। একটাই কথা বলে চলেছেন, ‘আমার সন্তানকে যারা মারলো তাদের শাস্তি দাও। ফাঁসি চাই’। বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুও ছোট ছেলের রত্নদ্বীপের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছেন। আমরা মুখোমুখি হলাম স্বপ্নদ্বীপের বাবার সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি যা বললেন –

প্রশ্ন: পুলিশের সঙ্গে আপনাদের শেষ কি কথা হয়েছে?
উত্তর: পুলিশ কিছুক্ষণ আগেই আমাদের জানিয়েছে ছেলের একটা ডায়েরী পাওয়া গেছে। ওই ডায়েরিতে অনেক ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। ওর ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল ও প্রতিদিন ডায়েরি লিখত। কলকাতা পুলিশ এখানে আসছে। ওরা ছেলের হাতে লেখা পুরনো খাতা পত্র নিয়ে যাবে। হাতের লেখা মিলিয়ে দেখার জন্য। পুলিশ পরীক্ষা করে দেখবে কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ওখানে আছে।
প্রশ্ন: আপনারা সৌরভ ছাড়া কি অন্য কারোর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন? আপনাদের সন্দেহের তালিকায় আর কে কে আছে?
উত্তর: হ্যা করেছি। সৌরভের সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। তাদের কথাও পুলিশকে বলেছি। সৌরভ একা করেনি।পুলিশ সব জানে। এখন জানতে পারছি ডিন অব স্টুডেন্টও দায়ী। পুলিশের কাছে আমরা ডিন অফ স্টুডেন্টদের নামেও এফআইআর করব। তিনি সঠিক সময় ব্যবস্থা নিলে আমার ছেলেটা বেঁচে যেত। তিনি যদি ঘটনাস্থলে ছুটে যেত তাহলে আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না। কিন্তু তিনি কাদেরকে আলার করছেন? কার মদতে একাজ করছেন? কেনই বা করছেন? সবকিছুর পেছনে ওনার একটা প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে বলেই আমার সন্দেহ। পুলিশ ব্যবস্থা নিক। একে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।
প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রী তো আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
উত্তর: হ্যাঁ আমি কৃতজ্ঞ। দিদি জানার পরই এই ছোট ভাইকে ফোন করেছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌরভ গ্রেফতার হয়েছে। আমার বিশ্বাস ধর্মাবতার এই সৌরভকে জামিন দেবেন না। দিদি আমায় বলেছে ১৫ দিনের মধ্যে এই রেকেট এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আমার বিশ্বাস দিদি কেবল পারবে। দিদি মানুষের পাশে থাকে, আমরা দিদির পাশে আছি। দিদি সব পারে দিদিই পারেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কে এই দুষ্টু চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে। এই দুষ্টু চক্র কে ভেঙে ভবিষ্যতের একমাত্র বাঁচাতে পারে দিদি। এই কিশোর পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে পড়তে যেতে পারে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখন আতঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে রয়েছে। আর যেন আতঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে না থাকে। দিদি পারেন এই আতঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্রটাকে ভেঙে ফেলতে।
প্রশ্ন: পুলিশের তদন্ত নিয়ে কি বলবেন মূল অভিযুক্তকে তো গ্রেফতার করে নিয়েছে?
উত্তর: আমাকে কেউ কেউ সিবিআই তদন্তের দাবি করার কথা বলেছিল। আমাদের রাজ্য পুলিশ দুর্দান্ত কাজ করছে। একজন বড় অফিসার নিজে জেরা করছে। রাতভর জেরা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমার ছেলের মৃত্যুর ন্যায় বিচার হবে।
প্রশ্ন: সৌরভের ব্যাপারে আপনাদের কাছে কি কি তথ্য আছে?
উত্তর: ওই মেন কালপ্রিট ওর বিরুদ্ধে অজস্র তথ্য আছে। ছেলেটার হাত ধরে আমি বলে এসেছিলাম ছেলেটাকে একটু দেখো। আমার ছেলেটাকে দেখলেও বটে, ওকে মেরে ওর বডিটা আমার কাছে পাঠালো। ও আমায় একবার ফোন করে বলেছিল আপনার তো দুই ছেলে বড় ছেলেটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনার কাছে ফেরত পাঠাবো সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠালো মালা দিয়ে ডেড বডি বাড়িতে পাঠালো।
প্রশ্ন: এখানে কি কোন রাজনীতির প্রশ্ন উঠছে?
উত্তর: জানেন না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কি রাজনীতি হয়? ও ঢোকামাত্রই ওকে বলে গলায় কন্থির মালা কেন? ঠাকুর দেবতা তৃণমূল গিরি এখানে চলবে না। হাত থেকে মাদুলি টেনে ছিড়ে ফেলে দেয়। ওকে সিপিএম পার্টির কাগজপত্র দিয়ে যায়। বলে এবার থেকে সিপিএম পার্টি তোকে করতে হবে এখানে থাকতে গেলে। ওর সঙ্গে আমার যখন দেখা হয়েছিল বলেছিল ৩০০০ টাকা এক্সট্রা আমায় দিয়ে দেবেন। আমি সবটা দেখে নেব। কিসের তিন হাজার টাকা কেনই বা তিন হাজার টাকা দেব কিছুই জানি না। ঘটনার দিন রাতে আমায় ফোন করে বলছে ছেলে ঝাঁপ দিয়েছে। আমি কোনক্রমে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিয়েছি তখন আমায় ফোন করে বলছে আপনার আসতে হবেনা আমরা ১০০ ছেলে মিলে ওকে ঘিরে রেখেছি। আমরাই সব ব্যবস্থা করব। ততক্ষণ সব প্রমাণ লোপাট এর কাজ করছিল ওরা।
প্রশ্ন: স্বপ্নদদীপ ঘটনার দিন আপনাদেরকে কি বলতে চেয়েছিল বলে মন হয়?
উত্তর: ও ফোন করে বলেছিল ও ভালো নেই। ভেবেছিলাম নতুন হোস্টেলে গেছে। মানে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। পরে জানতে পেরেছি সেই দিন সন্ধে ছটা নাগাদ ও ফেসবুক লাইভ করতে গেছিল। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। বলা হয় ওকে জানে মেরে দেবে। আমার ধারণা ও ওখানকার একটা মারাত্মক চক্র সম্পর্কে বলতে চেয়েছিল। কিন্তু কি বলতে চেয়েছিল সেটা তো আর কখনো জানতে পারবো না।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি কিছু বলেছে আপনাদের?
উত্তর: হঠাৎ এখন ফোন করে বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধ্যাপক সহ কিছু লোক আলাদা করে কথা বলতে চায়। আমার সঙ্গে আলাদা আবার কি কথা যা বলার পুলিশ কে বলবে বাড়ির চৌখাট পেরতে দেব না খেদিয়ে দেবো। সবাই ইনভলব।