অভিষেক যাক হেটে , লাল জিতবে নেটে, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই কার্যত স্বীকার করে সিপিএমের নতুন স্লোগান

0

Last Updated on April 27, 2023 6:57 PM by Khabar365Din

সৌগত মন্ডল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যখন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ, সংগঠন পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে, কর্মীরা প্রায় সকলেই যখন নামে বেনামে বিজেপিতে ঢুকে পড়েছে, যখন গোটা বাংলায় ৬০ হাজার প্রার্থী তো দূরের কথা, তার দশ ভাগের এক ভাগও জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব বলে বোঝা হয়ে গিয়েছে, তখন রাজ্য সিপিএম হার স্বীকারে নতুন পন্থা নিল। এক রঙবেরঙের বার্তা ছড়িয়েছে। সেখানে তারা বলছে, নেটের প্রচারে তারা নাকি সব দলকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মানুষ নাকি নেটে তাদের খবরাখবরই সবথেকে বেশি দেখতে চাইছে। যদিও এই দাবির পিছনে কোনও বিশ্বাসযোগ্য সূত্র নেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, নেটের ভিউয়ার নিয়ে এই নাচানাচি আসলে পঞ্চায়েতের আগেই পরাজয় স্বীকার। সিপিএম বলতে চাইছে, মানুষের কাছে পৌছোনোর ক্ষমতা, বিশ্বাসযোগ্য হবার যোগ্যতা, প্রশ্নের মুখোমুখি হবার সাহস না থাকলেও চিন্তা নেই। নেটই আমাদেরক সহায়। ভোট চেপে নয়, নেট চেপে তারা ক্ষমতায় ফিরছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণতান্ত্রিক পার্টি মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে এই ধরনের হাস্যকর খড়কুটো চেপে ধরবার চেষ্টা করে। গোটা দুনিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি ডুবে যাওয়ার সময় এরকম অজস্র লোক হাসানো কাজ করছে। মিথ্যে তথ্য পরিসংখ্যান চেপে ধরে অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখবার চেষ্টা। বাংলায় সিপিএমও এক পথ নিয়েছে। মানুষের কাছে পৌঁছানো ছেড়ে দিয়ে মহামান্য আদালতের দিকে এখন তাকিয়ে থাকে। সোশাল মিডিয়া নিয়ে অনেকদিন থেকেই সিপিএম ব্যস্ত। কিছুদিন আগে ‘‌টুম্পা সোনা’‌ নাচও করেছিল। তাতে সমর্থনে ভরাডুবি হয়েছিল। এবার তাই ভোট হওয়ার আগেই পরাজয় স্বীকার।

সিপিএমের ইলেকশান স্ট্র্যাটেজি

অভিষেক যাক হেঁটে, লাল জিতবে নেটে। এমন স্লোগান তুলেই দলের নেতা ও ক্যাডারদের উদ্দেশ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকনির্দেশ তৈরি করে দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সময় টানা দুমাস ধরে বাড়িতে না ফেরার পণ করে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং রাত কাটাচ্ছেন তাঁবুতে, সেই সময়ে বাংলার সিপিএম পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তৈরি করে ফেলল নতুন ইলেকশান স্ট্র্যাটেজি।

টুম্পা সোনার রিলস জিন্দাবাদ

মোহাম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তীদের মস্তিষ্কপ্রসূত নতুন এই ইলেকশান স্ট্র্যাটেজির মূল কথাই হল এই গরমে যেখানে মাঝে মধ্যেই হিটস্ট্রোক হয়ে যাচ্ছে, সেখানে সিনিয়র সিটিজেন নেতাদের রাস্তায় নামিয়ে জনসংযোগ করতে পাঠানোটা ভীষণ রকম অমানবিক কাজ হয়ে যাবে। স্কুল-কলেজের ছুটি দিতে হচ্ছে যেখানে, সেই পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমে কিসের জনসংযোগ? দলের সঙ্গে লোক আছে কিনা তা বোঝার জন্য ইন্টারনেট তো আছে। সোশ্যাল মিডিয়া আর কবে কাজে লাগবে? ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকে সিপিএমের লোগো লাগিয়ে টুম্পা সোনাদের নাচের রিলস ভিডিও – এগুলো কত লোক দেখছে সেটা বোঝা গেলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বাংলার কত মানুষের সমর্থন সিপিএমের সঙ্গে রয়েছে। ফেসবুক ওয়ালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে লেখা শুরু হচ্ছে – কমিউনিস্ট পার্টি অফ ফেসবুক (সিপিএফ)।

ব্যালট মূর্দাবাদ ফেসবুক জিন্দাবাদ

বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অথবা তারপর থেকে যে কটা ভোট হয়েছে বা উপনির্বাচন হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই শূন্য থেকে আরও মহাশূন্যের অন্ধকারে যেতে হয়েছে সিপিএমকে। সেইজন্যে দলের কমরেডদের সিদ্ধান্ত এইসব ব্যালট আর ইভিএম বহুত পুরনো হয়ে গিয়েছে। এবার একটু মোদিজীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সদ্ব্যবহার করে কমরেড জুকেরবার্গের দুনিয়ায় ভোটাভুটির লড়াইয়ে নামা যাক। দেখা যাবে কিস মে কিতনা হ্যায় দম!
অর্থাৎ এই পৃথিবী বা ইউনিভার্স নয়। বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিপিএমের ভরসা মেটা ভার্স – অর্থাৎ ইন্টারনেটের যে জগতে শুধুমাত্র ডিজিটাল দুনিয়ার লাইক, ভিউ আর ফেসবুক অ্যানালিটিক্স ঠিক করে দেয় মানুষের পরিচয়। সেই কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং তারপরে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় সিপিএমের নতুন স্লোগান – বয়কট ব্যালট, ভোট ফর ফেসবুক।

আসলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে শূন্যে পরিণত হয়ে মহাশূন্যের পথে যাত্রা করার সময় হঠাৎ করেই নাকি অ্যালেক্সা-র সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করে ফেলেন আলিমুদ্দিনের কমরেডরা। এলেকশন নাকি পরামর্শ দেয় অনলাইনেই তো ভোট নিলে স্পষ্ট হয়ে যাবে তার দিকে কত সমর্থন। বাংলার মানুষ ভোট বাক্সে সিপিএম প্রার্থীদের ভোট দেননি তো কি হয়েছে, আলিমুদ্দিনে বসেই যদি একটু বেশি সময় কয়েকজন ইউটিউবার আর সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্টকে বসিয়ে কিছু লাইক আর ভিউ বাড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলেই তো মেটাভার্স বা ডিজিটাল দুনিয়াতে ব্যাপক ভোট পেয়ে বাংলায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে ফেলতে পারবে সিপিএম।

তড়িঘড়ি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে আলিমুদ্দিনের কমরেডদের ফাঁকা পড়ে থাকা ঘরগুলোতে কয়েকটা কম্পিউটার বসিয়ে শিফটিং ডিউটিতে বসিয়ে দেওয়া হল কয়েকজন ইউটিউবার আর ফেসবুকের এসিও এক্সপার্টকে। জ্যোতি বাবু বা কাকাবাবু তো আর দেখতে যাচ্ছেন না যে আলিমুদ্দিনে কম্পিউটার কেন বসানো হচ্ছে! এমনকি সংগঠন বাড়ানোর থিওরিতে বিশ্বাস করতেন যে অনিল বিশ্বাস তাঁর ঘরটাও খালি পড়ে রয়েছে। এইসব ভাবনা চিন্তা করে ভোটের আগে বুথ স্তরে কর্মী বাড়ানো বা পঞ্চায়েতে সব গ্রাম সভায় প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পার্টি ক্যাডার বাড়ানোর থেকে ইউটিউবার ভাড়া করাতেই নাকি বেশি ভোট পড়েছে সিপিএমের ডিজিটাল স্টেট সেক্রেটারিয়েট মিটিং-এ।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফেসবুক সরকার সিপিএমের

এরপরেই আজ রীতিমত ফলাও করে ফেসবুকের শেয়ার করার রিলস তৃণমূল এবং ভাজপার তুলনায় সিপিএম কত বেশি করেছে এবং সেই রিলস কত লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেছেন তার স্ট্যাটিস্টিক প্রচারের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে কত লক্ষ ভিউ হয়েছে তার ভিত্তিতে পার্টি কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে দেখানো হয়েছে বাংলায় সোশ্যাল মিডিয়া ভোটে নিরঙ্কুশঙ্কাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেসবুক দুনিয়ায় সরকার গঠন করতে চলেছে সিপিএম।

সিপিএমের এই ডিজিটাল পোস্টার দেখে নেটিজেনরা এতটাই উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রত্যেকে নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসে নতুন নতুন স্লোগান লিখে পোস্ট করতে শুরু করেছেন।
যার মধ্যে রয়েছে – ব্যালট বয়কট, ফেসবুক জিন্দাবাদ। বয়কট ব্যালট, টুম্পা সোনা জিন্দাবাদ।
ব্যালট মুর্দাবাদ, ফেসবুক জিন্দাবাদ।