Last Updated on September 30, 2023 7:01 PM by Khabar365Din
অভিষেকের হুংকার, বৈঠকে বসতেই হবে মোদিবাবু, বকেয়া টাকা দিতেই হবে মোদিবাবু, রাস্তায় কোথাও বাস আটকালে সেখানেই ধরনায় বাসের জনতা
৩৬৫ দিন। বাংলার ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীন আবাস যোজনার কাজ সহ একাধিক প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার বকেয়া অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের ভাজপা সরকার থেকে সেই বকেয়া অর্থ ছিনিয়ে আনতে, নিজেদের অধিকারের দাবিতে বাংলার জব কার্ড হোল্ডাররা শনিবার সকালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের শুভেচ্ছা ও লড়াই করার বার্তা নিয়েই রওনা দিলেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচি ঘোষণা করে এদিন ভার্চুয়ালি অভিষেক নিজের বক্তব্য রাখেন যা সকল যাত্রীদের দেখানোর ব্যবস্থা করে তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিষেক বলেন, ‘বাংলার বকেয়া অর্থ আটকে রেখে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওদের মন্ত্রী বলছে বৈঠক করব না। বৈঠক আপনাকে করতে হবে মোদি বাবু, বাংলার বকেয়া টাকা আপনাকে ছাড়তে হবে মোদি বাবু। আগামীদিনের তমসাচ্ছন্ন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।’ তৃণমূল নেতৃত্ব আশঙ্কা করছে ৫০টিরও বেশি বাস যখন বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশ পার করে দিল্লিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে তখনই তাদের পথ আটকাবে ভাজপা সরকারের পুলিশ। এদিকে অভিষেক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,’ একজন গরিব মানুষের গায়েও যদি হাত পড়ে, তাহলে বাংলার মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইট কা জবাব পাত্থর সে দেঙ্গে।
এটা মানুষের কর্মসূচি। আমি বিজেপি নেতা সহ সকল অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্বদের বলছি, মানুষের জন্য রাস্তায় নামুন।’দলীয় কর্মীদের অভিষেকের নির্দেশ,’আগামী ২ অক্টোবর গান্ধী ঘাটে ঘন্টা দুয়েক আমরা প্রার্থনা সভায় যোগ দেব। সেই দিন বাংলার প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘গান্ধীগ্রাম সভা’র আয়োজন করবে তৃণমূল। মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান করে বিকেলে বাংলার সর্বত্র মোমবাতি মিছিল করা হবে। পরেরদিন ৩ অক্টোবর যন্তর মন্তরে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি করব। সেই প্রতিবাদ কর্মসূচি জায়েন্ট স্ক্রিন লাগিয়ে বাংলার সর্বত্র দেখানো হবে।’ এদিন অভিষেক কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বাংলার মানুষের আন্দোলন করার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র। আমরা সেটা হতে দেব না। লড়াই আরো দৃঢ় হবে। মনোবল জুড়ে রাখুন বাংলার অধিকার ছিনিয়ে আনবই। চোখে চোখ রেখে কথা বলার ক্ষমতা নেই ওদের। শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি হবে আর গরিব মানুষের বাড়ি হবে না এটা হতে পারে না। বাংলার মানুষ এর জবাব দেবে। কারোর ক্ষমতা থাকলে আমাদের আটকে দেখাক। যতদিন না বাংলার মানুষের একাউন্টে টাকা ঢুকছে ততদিন আমাদের লড়াই জারি থাকবে। এই স্বৈরাচারী সরকারের বিসর্জন হবেই।’
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে বাস ছাড়ল
গতকাল গভীর রাত থেকেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জড়ো হতে থাকে অসংখ্য বাস। 50টির ওপর বেসরকারি বাস এদিন সকালবেলা পুরোপুরি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল। বাংলার দাবিদাররা এক এক করে সেই বাস গুলিতে গিয়ে ওঠেন। একটিও সরকারি বাস ছিল না, দিল্লি চলো কর্মসূচিতে সবকটি বেসরকারি বাস ব্যবহার করা হয়েছে। প্রত্যেক জব কার্ড হোল্ডারদের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব যথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন, তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারেরা প্রত্যেক বাসযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেক বাসে একজন করে কোঅর্ডিনেটর উপস্থিত রয়েছেন। যদি কোথাও কোনো কারোর অসুবিধা হয়, কিংবা যদি বিজেপি শাসিত রাজ্যে পুলিশ তাদের পথ আটকায় তবে সরাসরি কোঅর্ডিনেটররা অভিষেকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। নদীয়ার কো-অর্ডিনেটর বিশ্বজিৎ দাস জানান, প্রত্যেক বাসে ৫২ জন করে দাবিদার রয়েছেন। এদিন সকালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধি দলসহ অন্যান্য নেতৃত্বরা বিমানে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। অন্যদিকে শনিবার বিকেলের বিমানে দিল্লি যাবেন শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা। উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর থেকে এদিন ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি টিম দিল্লির উদ্দেশ্যে ট্রেনে করে রওনা দিয়েছে। ৫০টির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও বাস দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর আজ সন্ধ্যে সাড়ে ছটা পর্যন্ত এই বাস গুলি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে পুরোপুরি ছেড়ে বেরিয়ে যাবে দিল্লির উদ্দেশ্যে। এই দাবিদারদের মধ্যেই ক্যানিংয়ের মহম্মদ নস্কর ও তার তিন ছেলে পরিবারের মোট চারজন জব কার্ড হোল্ডার একযোগে জানালেন, তৃণমূলের এই আন্দোলনের জন্যেই তাদের মনে আশা রয়েছে তারা তাদের বকেয়া টাকা পাবেন। প্রত্যেক বাস যাত্রীর বুকে দিল্লি চলো ব্যাচ লাগানো হয়েছে।
বাসের রুট ও দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা
কলকাতা থেকে যে বেসরকারি বাসগুলি করে বাংলার দাবিদারদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিল্লিতে, তার প্রধানত রুট হল আসানসোল হয়ে তারপর ঝাড়খন্ড বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের কানপুর হয়ে অবশেষে দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছানো। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশে এই বাসগুলির পথ আটকানো হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই বিকল্প কর্ম পন্থাও ভেবে রেখেছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রের খবর, দিল্লির পাহাড়্গঞ্জ রোড, চিত্তরঞ্জন পার্ক, কালিবাড়ি এলাকা সংলগ্ন অতিথি শালা এবং পান্থনিবাস গুলিতে বাস-যাত্রীদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দলের কিছু শীর্ষ পদাধিকারী রবিবার সকালেই দিল্লী পৌঁছে যাচ্ছেন। সব বাস পৌঁছে গেলে দলের কর্মী সমর্থক এবং জব কার্ড হোল্ডারদের নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা আলোচনা করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
আগামীকাল অভিষেকের বৈঠক তৃণমূল সূত্রের খবর আগামীকাল অর্থাৎ রবিবার দলীয় নেতৃত্ব যারা ইতিমধ্যেই দিল্লিতে পৌঁছেছেন বা আজ বিকেলে কিংবা কাল সকালে পৌঁছবেন তাদের সঙ্গে এবং দলের সকল সাংসদ তথা মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অভিষেক। দিল্লির পুলিশ তৃণমূলের আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালাবে, তাই স্ট্রাটিজি ঠিক করতেই এই বৈঠকে বসবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। বেশ কিছু তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী সোমবার সকালে অর্থাৎ ১ অক্টোবর দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছবেন বলেও জানা গিয়েছে।