সংঘের অ্যাজেন্ডা মেনে হিন্দু রাষ্ট্রের পথে কেন্দ্র, মোদি সরকারের সংবিধানে বাদ পড়ল ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক শব্দ দুটি

0

Last Updated on September 20, 2023 9:19 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের অ্যাজেন্ডা মেনেই যেন চলছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। পৃথিবীর মধ্যে ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান রয়েছে ভারতীয় সংবিধানকেও সেভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ বলে সংশোধনী করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন সংসদ ভবনে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সমস্ত নির্বাচিত সাংসদদের হাতে সংবিধানের প্রস্তাবনার যে বই তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক শব্দ দুটি।

আরএসএসের অ্যাজেন্ডা

দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলি তুলে আসা হচ্ছে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে বদল করে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে গোটা দেশে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করতে হবে।

ইতিমধ্যেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে কেন্দ্রের মোদি সরকার দেশ জুড়ে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের তীব্র আপত্তি উড়িয়ে গঠন করেছে এক দেশ এক নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সপ্তাহেও জোরদার সওয়াল করেছেন দেশের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে। বাকি ছিল ভারতীয় সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ কথাটি ছেঁটে ফেলার। সেই প্রক্রিয়াও এবারে নতুন সংসদ ভবনে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভাজপা তথা মোদি সরকার শুরু করে দিল বলে অভিযোগ।

কি অভিযোগ বিরোধীদের

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবিধানের যে নতুন কপি আমাদের দেওয়া হয়েছিল, যেটি আমরা আমাদের হাতে ধরে নতুন সংসদ ভবনে প্রবেশ করেছিলাম, তাতেই বাদ পড়েছে একটি শব্দ। সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধানে নেই। আমরা জানি যে এই শব্দটি ১৯৭৬ সালে একটি সংশোধনীর পরে যুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু কেউ যদি আজ আমাদের সংবিধান দেয় এবং সেই শব্দগুলি না থাকে তবে এটি উদ্বেগের বিষয়। তাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই সন্দেহজনক। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। আমরা এই বিষয়টি উত্থাপন করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমাদের এই বিষয়টি উত্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হয় নি। তবে এই বিষয়টি আমরা উত্থাপন করব।

ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ ছাঁটাই প্রসঙ্গে ভাজপার সাফাই

আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বলেন, প্রথমে সংবিধানের যে খসড়া তৈরি হয়েছিল, সেখানে এই দুটি শব্দ ছিল না। সেই সংবিধানের কপিই দেওয়া হয়েছে সাংসদদের হাতে।
আরেক ভাজপা সাংসদ সুশীল মোদির সাফাই, আমরা তো একবারও বলিনি যে এটা সংবিধানের সংশোধিত কপি। প্রথম সংবিধানের কপিতে এই শব্দগুলো ছিল না। তাছাড়া বর্তমান সমাজে কি সোশালিস্ট শব্দটির কোনও গুরুত্ব রয়েছে? অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।

ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাস

১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। সভার ৩০৮ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হাতে লেখা কপিতে সই করেন। এর একটি ছিল ইংরেজিতে ও অন্যটি হিন্দিতে। ঠিক তার দুই দিন পরেই ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনীতে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জায়গায় সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গৃহীত হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা রয়েছে, আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে চাই।

মোহন ভাগবতের ব্যাখ্যা

সংবিধানের প্রস্তাবনাগুলো আদতে হিন্দুত্ব-এর প্রতিফলন। কিছুদিন আগেই এমন মত প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি বলেন, সর্ব-অন্তর্ভুক্ত এবং সর্বব্যাপী সত্যকে আমরা হিন্দুত্ব বলি। এটা আমাদের জাতীয় পরিচয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি, কিন্তু এটি আমাদের দেশে বছরের পর বছর ধরে এবং আমাদের সংবিধান তৈরির আগে থেকে ছিল এবং এটি হিন্দুত্বের কারণেই ছিল। হিন্দু হল সংস্কৃতির একটি নাম। মূলত আমাদের দেশের মানুষের জীবনধারা হল হিন্দুত্ববাদ। কেউই ধর্ম থেকে মুক্ত নয়। আমাদের পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করা উচিত।