যোগী সরকারের পাঠক্রমে মোগো ইতিহাস নিষিদ্ধ

0

Last Updated on April 4, 2023 6:51 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, হেথায় আর্য, হেথা অনার্য/হেথায় দ্রাবিড়, চীন–/শক-হুন-দল পাঠান মোগল/এক দেহে হল লীন।… দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/যাবে না ফিরে,/এই ভারতের মহামানবের/সাগরতীরে। কারণ ভারতবর্ষের চিরকাল পৃথিবী থেকে বিভিন্ন জাতি এবং বিভিন্ন সভ্যতার মানুষ এসেছে রাজত্ব করেছে এবং সবশেষে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের সাংস্কৃতিকে মিলিয়ে আরো সমৃদ্ধ করেছে ভারতীয় সংস্কৃতিকে। কিন্তু এবারে বদলে যাচ্ছে ইতিহাস। বদলে যাচ্ছে ইতিহাস বই পড়ে জানা আমাদের চেনা ভারত বর্ষের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে জোর করে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে মুসলিম শাসকদের যাবতীয় অস্তিত্বের উল্লেখ। মুছে ফেলা হচ্ছে বাবর আকবর শাহজাহান আওরঙ্গজেবের ইতিহাস। শুধুমাত্র ইতিহাস থেকে তাদের নাম মুছে ফেলাই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুঘল আমলে তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য এবং মুঘল শাসকদের নামানুসারে নামাঙ্কিত জায়গার নাম বদলে ফেলার জন্য বুলেট ট্রেনের থেকেও দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাজপা সরকার।

পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়ল মুঘল ইতিহাস

ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘল সাম্রাজ্য তথা মুসলিম শাসকদের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য ভাজপা ড় ল্যাবরেটরি যোগীয় আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য ইউপি বোর্ড এবং সিবিএসই বোর্ডের পাঠ্যক্রম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলের ছাত্রদের আর মুঘল ইতিহাস পড়ানো হবে না। ২০২২ সালের জুনে এন সি ই আর টি-র পাঠ্যক্রম মুঘল ইতিহাস, ঠান্ডা যুদ্ধের মতো অধ্যায়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল। ইউপি বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যে এনসিইআরটি বই এবং সিলেবাস মেনে চলবে। এর আগে উত্তর প্রদেশ সরকার ইতিহাসের বই ভারতীয় ইতিহাসের কিছু বিষয় থেকে শাসক এবং মুঘল দরবারের অধ্যায়গুলি সরিয়ে দিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আকবরনামা বা আকবরের রাজত্বের ইতিহাস এবং বাদশাহনামা বা মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ইতিহাস।
শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশ নয়, কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত বিদ্যালয়, আর্মি স্কুল, সেন্ট্রাল স্কুল-সহ সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলগুলির দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে আর এই অধ্যায় থাকবে না। ইতিহাস বই থেকেই সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে এই নয়া সিলেবাস।

সংস্কৃত আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হলেও গোটা বিষয়টি নিয়ে অদ্ভুত ধরনের সাফাই দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের উপ মুখ্যমন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠক। তাঁর দাবি, সংস্কৃত আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আগে আমাদের সংস্কৃতি থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। জানতে দেওয়া হত না। দেশের প্রকৃত সংস্কৃতি এবার তুলে ধরা হবে।
তবে এর তীব্র প্রতিবাদ করে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি বিধায়ক নবাব ইকবাল মাহমুদ বলেন, উত্তর প্রদেশ এবং সিবিএসই বোর্ড ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস থেকে মুঘল দরবারের ইতিহাস সরিয়ে দিয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ইসলামের উত্থান, সংস্কৃতির সংঘর্ষ এবং শিল্প বিপ্লবের মতো পাঠগুলিও। ভাজপা সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যা কিছু করতে পারে, সব চেষ্টা করে চলেছে। এই সরকারের কাছ থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করি না। তাজমহল, লালকেল্লা এবং কুতুব মিনারের ইতিহাস কেবল ভারতে সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বে রয়েছে। কারণ সারা বিশ্ব থেকে যে কোনও পর্যটক যখন ভারতে আসেন, তিনি তাজমহল, লালকেল্লা এবং আগ্রা সম্পর্কে জানতে চান।

মোদিকে তীব্র আক্রমণ বাবুলের

ভাজপা সরকার যেভাবে গোটা দেশ থেকে মোঘলদের যাবতীয় চিহ্ন মুছে ফেলার পাশাপাশি ইতিহাস বইকে নতুন করে লিখে মুঘল ইতিহাস ছেঁটে ফেলার অপারেশন শুরু করেছে তার জন্য এবারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ করলেন বাংলার পর্যটন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল আজ টুইট করেন, কি লজ্জার ব্যাপার! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন অথচ স্কুলের পাঠ্য পুস্তক থেকে মুঘল ইতিহাস হয় ছেঁটে ফেলা না হলে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবে এনসিইআরটি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ করার পরে বিজেপি কিভাবে সেই একই অপরাধ করে চলেছে দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে?