Last Updated on September 23, 2023 6:44 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার জমির পাশেই ৩০০০ একর জমির উপরে আন্তর্জাতিক মানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করতে চলেছে জিন্দাল গোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেন সফরে গিয়ে মাদ্রিদের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের শিল্পপতি পরিচয় প্রকাশ প্রকাশে এনে ঘোষণা করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে প্রায় ৬০০ একর জায়গার উপরে ২৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি করছেন ইস্পাত কারখানা। যেখানে কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের। আর সৌরভের এই ঘোষণার পরেই একদিকে যেমন নির্মাণ শিল্পে ইউরোপ তথা গোটা পৃথিবীর মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা স্পেনের শিল্পপতিরাও বাংলায় বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। এমনকি রাজ্য শিল্প উন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে শালবনিতে ইস্পাত কারখানা সহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য বেশ কয়েক হাজার একর জমি ল্যান্ড ব্যাংকে নির্দিষ্ট করা রয়েছে জানার পরেই স্পেনের বহু শিল্পপতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।
এই পরিস্থিতিতে নিজেদের পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসে এবারে শালবনিতে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া জমি ফেরত না দিয়ে বিপুল অংকের বিনিয়োগ করে আন্তর্জাতিক মানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিল জিন্দাল গোষ্ঠী। যদিও চলতি বছরেই রাজ্য শিল্প উন্নয়ন দপ্তরের কাছে লিখিতভাবে জিন্দাল গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল শালবনির জমিতে তারা কোন প্রকল্প না করে জমি ফিরিয়ে দিতে চান রাজ্য সরকারের হাতে। কিন্তু স্পেনে গিয়ে মাদ্রিদের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে সৌরভের ঘোষণা এবং মমতার স্পেন সফর রাতারাতি বদলে দিল জিন্দাল গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে বিগত বাম সরকারের আমলে শালবনিতে প্রায় ৪১০০ একর জমি শিল্প স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ছিল জিন্দাল গোষ্ঠী। কিন্তু সিপিএম জমানায় একদিকে যখন তখন ধর্মঘট ও কর্মবিরতির পাশাপাশি গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদী কার্যকলাপ জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধারদের নিজেদের জমিতে যেতেই আতঙ্কিত করে তুলেছিল বছরের পর বছর। কিন্তু এখন মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে জঙ্গলমহল যেমন মাওবাদী আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে এসেছে, ঠিক তেমনভাবে জঙ্গলমহলের পরিকাঠামো বদলে গিয়েছে অনেকটাই। আর ধর্মঘট অথবা কর্মবিরতি তো বাংলায় প্রাগৈতিহাসিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর পাশাপাশি মমতার নির্দেশে বাংলায় বিনিয়োগকারীদের জন্য রাজ্যের শিল্পনীতি এবং জমি নীতি আরো সহজ করে তোলার জন্য কিছুদিন আগেই জমি নীতিতে সংশোধন করে ফ্রি হোল্ড জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। স্বাভাবিকভাবেই জিন্দাল গোষ্ঠী বাংলায় সিপিএম জমানার দুরবস্থা দেখে বিনিয়োগ না করে ফিরে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা পরিবর্তন করেছেন বাংলার বর্তমান শিল্প বান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প গোষ্ঠী জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল জানিয়েছেন, বদলে গিয়েছে বাংলা। এখন বাংলায় বিনিয়োগ করা অত্যন্ত সহজ এবং লাভজনক। বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল হয়েছে। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বহু বিনিয়োগকারীও শালবনিতে আমাদের প্রস্তাবিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবেন।
জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই বাংলার একাধিক শিল্প গোষ্ঠী এবং ভিন রাজ্যের বেশ কয়েকটি শিল্প গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জিন্দাল গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তাদের প্রস্তাবিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে শিল্প স্থাপনের জন্য জমি নির্দিষ্ট করার আবেদন জানিয়ে। তবে গোটা বিষয়টি রাজ্য শিল্প উন্নয়ন দপ্তর এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরেই জিন্দাল গোষ্ঠী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত সিপিএম জমানায় বাংলার কর্মসংস্কৃতি এতটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল যে মাওবাদী আতঙ্কে জঙ্গলমহলের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের যাবতীয় পরিকল্পনা ঝেড়ে ফেলতে হয়েছিল দেশের অন্যতম বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা সংস্থাকে। তবে মমতাম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সজ্জন জিন্দালের ছেলে পার্থ জিন্দালের তত্ত্বাবধানে তাদের লিজ নেওয়া জমির একটা অংশে তৈরি হয় সিমেন্ট কারখানা।