প্রয়াত হলেন সুব্রত মুখার্জি, হৃদযন্ত্রে ২ স্টেন্ট বসানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি

0

Last Updated on November 5, 2021 12:16 AM by Khabar365Din

● সত্তর দশকে বাংলায় কংগ্রেস রাজনীতির দুই তরুণ তুর্কি প্রিয়রঞ্জন ও সুব্রত ছিলেন একাধারে ইন্দিরা গান্ধি ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের ব্লু আইড বয়। এই দুজনের পাশাপাশি সোমেন মিত্রকে ধরেই বাংলায় বামফ্রন্টের আমলেও কংগ্রেসি রাজনীতি টিমটিমে প্রদীপ জ্বালিয়ে টিঁকে থাকে।

● ২৫ বছর বয়সে সুব্রত সিদ্ধার্থ মন্ত্রিসভার তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী, পরে পুলিশমন্ত্রীও। দুর্ভাগ্যবশত দেশের কালা ইমার্জেন্সি পিরিয়ডে রাজ্যে মিডিয়া সেন্সরশিপের পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন সুব্রত।

● পরবর্তীকালে কলকাতা পুরসভার মেয়র থেকে শুরু করে মমতা’র নেতৃত্বে তৃণমূল সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান, বাংলায় কংগ্রেসি রাজনীতির এক অধ্যায়ের অবসান।

৩৬৫ দিন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুধু এই নামটুকু বললেই বাংলা রাজনৈতিক জগতে এক বর্ণময় চরিত্রের মুখ ভেসে ওঠে বাঙালির কাছে। আদ্যপ্রান্ত কংগ্রেসী, বাংলার সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে মন্ত্রী এবং একাধিক বার দল বদল করা পরেও বাংলার মানুষ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে আরেক ভাবে চিনে এসেছে, একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে। জন্ম : সারেঙ্গাবাদ, বজবজ, দক্ষিণ 24 পরগনা। তারপর কলকাতাতেই পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনা: বঙ্গবাসী কলেজে বিএসসি এনথ্রপলজি , পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা মিউজিয়াম স্টাডিজ। কলেজে থাকতে থাকতেই কংগ্রেসী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে একাত্ত ভাবে জড়িয়ে নেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এবং ক্রমেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির খুব কাছে চলে আসেন। ১৯৭১ সাল, ২৫ বছর বয়সে বালিগঞ্জ থেকে প্রথমবার ভোটে দাড়িয়ে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সভাপতি হয়েছিলেন সেবার। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে রাজনীতি করার সুবাদে ‘প্রিয় সুব্রত’ এই শব্দবন্ধ ক্রমেই বাংলার রাজনীতির ময়দানে পরিচিত হয়ে ওঠে। ‌ প্রিয়দা বলেই বরাবর ডেকে এসেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।১৯৭২ সাল বালিগঞ্জের দ্বিতীয়বার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব এবং বাংলার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র অর্থাৎ পুলিশ মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৫ সালে এমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় কংগ্রেসের হয়ে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এর এক কালো অধ্যায় সেটি। ১৯৮২ সালে বিধানসভা ভোটে আসন বদল করে চলে যান উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানে। সেখান থেকে পরপর তিনবার জয়ী হন। ১৯৯৬ সালে ভোটে দাঁড়ান চৌরঙ্গী বিধানসভা থেকে এবং জয়লাভ করেন। ২০০২ কংগ্রেস ছেড়ে যোগদান তৃণমূলে যোগদান করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ওই বছরই কলকাতার পুরভোটের সময় কংগ্রেসের বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূলের ভোটে দাঁড়ান এবং কলকাতার মেয়র হন। তার মেয়ের থাকাকালীন সময়কে স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যা করেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। ২০০১ কলকাতার মেয়র পদে থেকতেই চৌরঙ্গী থেকেই তৃণমূলের বিধায়ক হন তিনি। ২০০৫ তৃণমূল ছেড়ে পৃথক মঞ্চ করেন। চিহ্ন ঘড়ি, কিন্তু নির্বাচনে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে ফিরে যান। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের হয়ে হাত প্রতীকে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হন। কিন্তু পরাজিত হন। ২০১০ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন, ২০১১ তৃণমূলের প্রতীকেই বালিগঞ্জের বিধায়ক হন। মন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায়। আমৃত্যু মন্ত্রিসভায় ছিলেন তিনি। শেষ জীবনে থাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাড়া হেনস্থা হতে হয়। নারোদা কাণ্ডে তার নাম ওঠে এবং সম্প্রতি তার তদন্তের ভিত্তিতে তাকে জেল পর্যন্ত খাটতে হয়। এরপরই অসুস্থতা বোধ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের পূজো অন্তপ্রাণ রাজনৈতিকভাবে চূড়ান্ত রঙিন রাজের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। তার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন দেশের সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এক যুগের অবসান ঘটল তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here