Last Updated on October 9, 2020 10:52 PM by Khabar365Din
পদার্থবিদ্যায় এবারের নবেলবিজয়ী রজার পেনরােজের ঘােষণা

সৌগত সরকার |এই নােবেল পুরস্কারের স্বীকৃতি কেবল আমার নয়, দা গ্রেট বেঙ্গলি স্যায়েন্টিস্টঅমল রায়চৌধুরীরও। তাঁর অনন্য গাণিতিক পদ্ধতি ছাড়া এ কাজ সম্ভব ছিল না। সাংবাদিক সম্মেলনে এটাই বললেন সদ্য পদার্থবিদ্যায় নােবেলজয়ী রজার পেনরােজ। যদিও গােটা বিশ্বের সংবাদমহলের কাছে অমল কুমার রায়চৌধুরী নামটা অজানা। এই সাংবাদিক সম্মেলনের ঠিক পর থেকেই বিশ্ব তােলপাড় তাঁকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই অমলবাবুর কলকাতার বাড়িতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তাঁর গবেষণা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। অক্সফোর্ড এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অমলবাবুর মূল গবেষনা রাখা আছে, যা পড়ানাে হয়।
কৃতিত্ব দ্য গ্রেট বেঙ্গলি সায়েন্টিস্ট অমল রায়চৌধুরীরও

স্টিফেন হকিং ও অমল রায়চৌধুরীর
৩৬৫ দিন। কৃষ্ণগহ্বরের গঠন সম্পর্ক ধারণা দিয়েছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। সেই সূত্র ধরেই বিজ্ঞানী রজার পেনরোজ আবিষ্কার করেন, কৃষ্ণগহ্বরের আসল রহস্য। ১৯৬৫ সালে তাঁর গবেষণায়প্রথম দেখানো হয়, ব্ল্যাক হল হল জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভির একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। স্টিফেন হকিংয়ের গবেষণা সেই সিঙ্গুলারিটি মডেল ধরেই এগিয়েছে। এরপর পেনরোজ সেই গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যান। কৃষ্ণগহ্বরের গবেষণায় রজার পেনরোজের দোসর ছিলেন কালজয়ী বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। আর এই দুই বিজ্ঞানীর পেনরোজ-হকিং সিঙ্গুলারিটি থিওরেম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী-গবেষক অধ্যাপক অমলকুমার রায়চৌধুরীও। রুশ বিজ্ঞানী লেভ লান্ডাউ-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি রায়চৌধুরী-লান্ডাউ ইক্যুয়েশনকে স্বীকৃতি জানান পেনরোজ স্বয়ং। এবছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল কৃতীদের পাশাপাশি নাম উঠে এসেছে এই বাঙালি বিজ্ঞানীর নামও। তাঁর করা সমীকরণ ব্যবহার করে পরবর্তীক্ষেত্রে পেনরোজ-হকিং-এর সিঙ্গালপারিটি থিয়োরেম-র কাজ অনেকটাই। যে অঙ্কের সূত্র ধরে এই গবেষণা এগিয়েছে তা বাঙলি বিজ্ঞানী অমল রায়চৌধুরীর ব্রেন চাইল্ড। উনি তখন কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সে কর্মরত। কসমিক ফিজিক্সের জটিলতম বিষয় মাথায় ঘুরছে। রুশ বিজ্ঞানী লেভ লান্ডাউ-এর সঙ্গে যৌথ উদ্দোগে অঙ্ক এগোয়। সিঙ্গুলারিটি মডেলের গাণিতিক রূপ সামনে আনলেন। এটিই রায়চৌধুরী লানডাউ মডেল বা রায়চৌধুরী ইকুয়েশন। আজ স্টিফেন হকিং এবং অমলবাবু বেঁচে থাকলে, দুজনেই নোবেল পেতেন। কারণ,পেনরোজই প্রথম ম্যাথমেটিক্যাল মডেলের মাধ্যমে তিনি সফল ভাবে প্রমাণ করেন ব্ল্যাক হোলের জন্মরহস্য কী? তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারকে স্বীকৃতি জানায় নোবেল কমিটি।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াতে আসতেন সাদা ধুতি আর খদ্দরের পাঞ্জাবি পরে। বুকপকেটে পেনের বদলে পেন্সিল। ছাত্রদের খাতায় নম্বর দেওয়া, কাটাকুটি করা অপছন্দ ছিল তাঁর। এর বদলে খাতার পাশে পেন্সিল দিয়ে সঠিক ইকুয়েশন লিখে দিতেন, সঙ্গে ব্যাখ্যা। এভাবেই পদার্থবিদ্যা আর অঙ্ককে দেখতেন অমল কুমার রায়চৌধুরী। অক্সফার্ড এবং কেমব্রিজ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেলজয়ীদের সঙ্গে অধ্যাপনা করার লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে তীর্থবতী ইনস্টিটিউট, প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর ও পরে আশুতোষ কলেজে ছাত্র পড়ানোতেই খুশি ছিলেন মাস্টারমশাই। এগিয়েছিল।বাংলাদেশের বরিশালে বৈদ্য পরিবারে জন্ম তাঁর। ১৯২৩ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সুরেশচন্দ্র ও মা সুরাবালা। খুব ছোটবেলাতেই বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে আসেন রায়চৌধুরী পরিবারটি। তারপর তীর্থপতি ইনস্টিউশন থেকে পড়াশোনা শেষ করে হিন্দু স্কুলে ভরতি হন। ১৯৪২ সলে প্রেসিডেন্সিতে বিএসসি ও ১৯৪৪ সলে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে এমএসসি পাশ করেন। ১৯৪৫ সলে রিসার্চ স্কলার হিসেবে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সে যোগদান করেন। কিন্তু এইভাবে চাকরিতে বেশিদিন মন টেঁকেনি তাঁর। আশুতোষ কলেজে অধ্যাপনার কাজও করেছেন তিনি। কিন্তু মন পড়ে থাকে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার দিকে। শিক্ষকতা ও গবেষণা করতে করতেই তিনি বিখ্যাত সমীকরণ আবিষ্কার করেন ও তাঁর করা সমীকরণটি ১৯৫৩ সলে আএসিএসের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেই সূত্র ধরেই তিনি পশ্চিমী দুনিয়ায় বেশ পরিচিত হতে থাকেন। আজও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সম্মানে চেয়ার রাখা আছে। ২০০৫ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় এই বিজ্ঞানীর। পেনরোজের স্বীকৃতির পর তো তিনি পদার্থবিজ্ঞানের দুনিয়ায় একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর সম্মান পান। নোবেল সম্মান না পেলেও ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁর সমীকরণ যে ব্যবহৃত হয়েছে, সে কথা নিজেই পেনরোজ জানিয়ে কার্যত স্বীকৃতি ও সম্মান দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানীকে।