Last Updated on March 8, 2022 1:04 AM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন।সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে লজ্জার নয়া ইতিহাস তৈরি করল বাংলার ভাজপা বিধায়কেরা। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের (Assembly Budget session) উদ্বোধনের সময় সাংবিধানিক রীতি মেনে রাজ্যপালের ভাষণে বাধা দিতে অধিবেশন কক্ষের ওয়েলে নেমে চূড়ান্ত গুন্ডামি চালালেন ভাজপা বিধায়করা। যা দেখে চূড়ান্ত বিরক্ত রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankar) বেশ কয়েকবার উদ্বোধনী বক্তব্য না রেখেই বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মুখ্যমন্ত্রীর নিজে রীতিমতো হাতজোড় করে রাজ্যপালকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে উদ্বোধনী বক্তব্য পাঠ করে বাজেট অধিবেশনের শুরু করার আবেদন জানান। পরে ভাজপা বিধায়কদের বারেবারে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা অসাংবিধানিক গুন্ডামি থেকে বিরত না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে বাজেট অধিবেশন শুরু করার জন্য রাজ্যপাল নিজের বক্তব্যের প্রথম এবং শেষ লাইন পড়ে স্পিকারের টেবিলে নিজের বক্তব্যের কাগজে রেখে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার। এমনটা কোনও দিনও হয়নি। যেখানে রাজ্যপালকে ঠিকমতো কথাই বলতে দেওয়া হল না। শুধু বাংলায় কেন, এমন ঘটনা সারা ভারতেও ঘটেনি। আসলে হেরে গিয়ে নাটক শুরু করেছে বিজেপি।
কী ঘটেছিল
মমতার (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পরে চলতি মেয়াদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট অধিবেশন শুরুর জন্য আজ বেলা ২ নাগাদ বিধানসভায় (West Bengal Assembly) ভাষণ দেবার কথা ছিল রাজ্যপালের। কিন্তু রাজ্যপাল পৌঁছতেই প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ভাজপা (BJP)বিধায়করা। টানা এক ঘন্টা ধরে এদিন বিক্ষোভ চলেছে। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন রাজ্যপাল নিজেও। এরপর একাধিকবার বিধানসভা কক্ষ ছেড়ে উঠে যেতে উদ্যত হন ধনকড়। রাজ্যপাল বাজেট বক্তৃতা না করেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তাঁর চেয়ারের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের মহিলা বিধায়কেরা। শশী পাঁজা, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরে মমতার নির্দেশে তাঁরা সরে আসেন। হাতজোড় করে রাজ্যপালকে থেকে যেতে অনুরোধ করেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অরুপ বিশ্বাস। বারবার করজোড়ে রাজ্যপালকে কিছুক্ষণ থেকে বক্তব্য পাঠ করার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধেই ফিরে আসেন রাজ্যপাল। যদিও তা ক্ষণস্থায়ী মাঝে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ডেকেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এরপরেই বিধানসভা কক্ষ ত্যাগ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজ্যপালকে এগিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী এবং অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ
রাজ্যপালের গাড়ি বিধানসভা চত্ত্বর ছেড়ে যেতেই ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিধানসভার অন্দরে এর আগেও বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তারপরেও রাজ্যপাল ভাষ্যপাঠ করেছেন। এই বিরোধিতা মেনে নেওয়া যায় না। নিজের ওয়ার্ডে যারা জিততে না পারে, তাঁদের এটা মানায় না।বিজেপি গণতান্ত্রিক কোনও পদ্ধতি মানে না। আমরা যেখানে যেখানে আছি, সেখানে সেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে সম্মান দিই। এটা কোনও প্রতিবাদের পদ্ধতি হতে পারে না। দুটো দিক এক করলে চলবে না। আমাদের বিধায়করা কেউ কিন্তু কিছু বলেনি। আমরা এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। উনি তখন না পড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তারপর আমাদের বিধায়করা বাধ্য হয়েছেন ওঁর চেয়ারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে। আমাদের মহিলা বিধায়করা বলেছেন, প্লিজ আপনি বাজেট পড়ুন। আমরা অনুরোধ করছিলাম, উনি একটা লাইন পড়ুন। আপনারা সবাই নিজেদের মতো করে হিসেবে করে নিন। আপনারা সবাই জানেন, কী হয়েছে, কী হচ্ছে। আমি খুব দুঃখিত। মর্মাহত। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারকে এই ভাবে যদি ধারাবাহিক ভাবে কাজে বাধা দেওয়া হয়, তা হলে তা গণতান্ত্রিকভাবে সুখকর নয়।
তবে এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অবশেষে রাজ্যপাল নিজের বক্তৃতা করেছেন। পড়ার ইচ্ছে ছিল না বা কিছু একটা চাপ ছিল ওঁর উপর। আমি ঠিক জানি না। তিনি রাজ্যপাল বাজেট বক্তৃতা না দিলে বাজেট অধিবেশন শুরু হত না। রাজ্যপাল সমন ডেকে বাজেট অধিবেশন শুরু করার প্রক্রিয়া করেছেন। তাই তো উনি পড়তে এসেছেন। আমরা বলেছিলাম সবটা পড়ার দরকার নেই। আপনি একটা লাইন পড়ুন। রাজ্যপাল তাঁর ভাষণ না পড়ে চলে যাচ্ছিলেন। তা যদি হত তাহলে তা এক সাংবিধানিক সমস্যা হত। তা এড়ানোর জন্য আমাদের বিধায়করা রাজ্যপালকে বারবার ভাষণ পড়ার অনুরোধ জানান। তারপরেই উনি আমাকে বলেন, সবাইকে বসাও, আমি ভাষণ পড়ে দিচ্ছি। এরপর উনি ওঁর ভাষণ পড়েন। এর জন্য আমি এখন ওঁর কাছে যাচ্ছি ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। সব রাজ্যেই বিক্ষোভ হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে রাজ্যপাল তাঁর ভাষণ পড়তে পারবেন না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
ভাজপার আচরণে বিরক্ত রাজ্যপাল
বাংলায় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে প্রথমবারের জন্য আজ প্রকাশ্যে আজ প্রথমবারের জন্য ভাজপার বিরুদ্ধে নিজের বিরক্তি সংবাদমাধ্যমের সামনে উগরে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাজভবনে এসে তাঁকে ভাজপা বিধায়কদের নজিরবিহীন গুন্ডামির মধ্যেও অধিবেশন শুরু করার জন্য ধন্যবাদ জানানোয় অত্যন্ত খুশি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, বিরোধীদের উচিত নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা। এইভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের মন্দির বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে রাজ্যপালকে বাধা দেওয়া কতখানি সঠিক হয়েছে তা ভেবে দেখা উচিত।