Last Updated on January 9, 2022 6:38 PM by Khabar365Din
বিধানসভার ৬০ আসনে প্রার্থীই দিতে পারবেনা ভাজপা, নাগাল্যান্ড গণহত্যা, আফস্পা ফ্যাক্টর, ভাজপা কোণঠাসা
৩৬৫ দিন। আগামী মাসেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে যেভাবে স্বাধীনোত্তর ভারতে প্রথম বার উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্যের সরকার গঠন করেছিল ভাজপা, সেই পরম্পরা রক্ষা করা কার্যত কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কারণ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সংগঠন নড়বড়ে হলেও এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভাজপার প্রধান বিরোধী হতে পারে মনিপুর সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা উত্তর-পূর্ব ভারতে ভাজপা মুখ্যমন্ত্রীদের সংগঠন নেডার প্রধান হিমন্ত বিশ্বশর্মা গতকাল দাবি করেছেন মনিপুরে নাকি প্রত্যেকটি আসনে একাই লড়াই করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে ভাজপা। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত মনিপুরের জোট সরকারের প্রধান শরিক ভাজপা মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে একাই ৬০ আসনে প্রার্থী ঠিক করা নিয়েই প্রাথমিক সমস্যায় পড়ে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে ৬০ আসনের মনিপুর বিধানসভায় ভাজপার ২৭ জন বিধায়ক রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগেই পড়শি নাগাল্যান্ডের মন জেলায় কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে ১৪ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হওয়ার প্রভাব মণিপুরের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ নাগাল্যান্ডের ঘটনার পর, ইতিমধ্যেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন অনেকে। সেই দাবি যে উত্তর পূর্বের রাজ্য মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উঠে আসতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। সেই দাবি ভাজপার জন্য তা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। সম্প্রতি নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সেনার গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর পর সেই দাবি আরও জোরাল হতে শুরু করেছে।
আফস্পা ইস্যুতে এককাট্টা বিরোধীরা
আফস্পা ইস্যুকে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার করে ২০১৭ সালে নির্বাচনের ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল ভাজপা। উত্তর পূর্বের বাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মতো মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংও আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। দেশের উত্তর পূর্বে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেই আফস্পা আইন বলবৎ হয়েছিল। এই আইনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনীর হাতে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ঘটনা সামনে আসার পরই উত্তর পূর্বের রাজনীতিতে এই আইন একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভা প্রধান লড়াই কংগ্রেস ও ভাজপার মধ্যে। এই রাজ্যে কংগ্রেসেরও দখলেও ১৫ আসন রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই আফস্পাকে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, তারা ক্ষমতায় এলেই সঙ্গে সঙ্গে মণিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহার করা হবে। কংগ্রেসে মুখপাত্র নিংওম্বাম বুপেনদা মেইতেই জানিয়ে দিয়েছেন, মণিপুরের মানুষ যদি কংগ্রেসের ওপর আস্থা রাখে তবে, প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিতর্কিত আইন প্রত্যাহার করা হবে। আফস্পা প্রত্যাহারের এই দাবি জোরদার করতে ইতিমধ্যেই পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নাগা পিপলস পার্টি এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি সহ আঞ্চলিক দল গুলি।
প্রসঙ্গত গত বিধানসভা নির্বাচনে ভাজপা নিয়ন্ত্রিত রাজ্যপাল নাজমা হেপটুল্লা কে দিয়ে সংখ্যালঘু সরকার গড়ার সুবিধা করে দিল এই আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন এবং কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করেছিল ভাজপা। ৬০ আসনের মনিপুর বিধানসভায় ভাজপা জিতেছিল মাত্র ২১ আসন। নাগা পিপলস পার্টির ৪ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ৪ বিধায়ক ভাজপাকে সমর্থন করেছিল। কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল যে ভাজপা একমাত্র নির্দল প্রার্থীকে অপহরণ করেছে এবং জোর করে তার সমর্থন নিয়েছে, লোক জনশক্তি পার্টির একমাত্র বিধায়কও ভাজপাকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু এবারে লোকজন শক্তি ছাড়া বাকি প্রত্যেকটি শরিক দল ভাজপা বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এককাট্টা হতে শুরু করেছে।