ভােটের আগে ভাজপার ব্লু প্রিন্ট ভিক্টোরিয়ার ঐতিহ্য ভেঙেমূর্তি সরিয়ে নেতাজি হল

0

Last Updated on January 22, 2021 12:45 AM by Khabar365Din

বিশ্বভারতীর পর মােদি সরকারের

টার্গেট ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়াল

১৯০৬ সালে বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ের (লেডি রানু মুখােপাধ্যায়ের শ্বশুর) পরিকল্পনায় ব্রিটিশ স্থপতি স্যার উইলিয়াম এমার্সনের ডিজাইনে মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোমানি ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়ালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। উদ্দেশ্য ভারতে ব্রিটিশরাজের ঢাক পেটানাে নয়, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যেরসঙ্গে ইতিহাসের শৈল্পিক সংরক্ষণ এবং সেটাও কলকাতায় যা শিল্পের পীঠস্থান। বাঙালি কখনও ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়াল হলকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রতীক হিসেবে দেখেনি। শিল্পপ্রেমী বাঙালি অবাগ বিস্ময়ে দেখেছে (১) রানী ভিক্টোরিয়া, (২)মার্কুইস কর্নওয়ালিস, (৩) লর্ড ক্লাইভ, (৪) লর্ড কার্জন, স্যার আউটট্রামের কালাতিক্রমী মূর্তি। ভিক্টোরিয়ার পরী ঘুরবে কি ঘুরবে না তা নিয়ে বাঙালির আগ্রহ চিরকালের।

ভােটের আগে ভাজপার ব্লু প্রিন্ট 

 ভিক্টোরিয়ার ঐতিহ্য ভেঙে 

 মূর্তি সরিয়ে নেতাজি হল

রানী ভিক্টরিয়ার স্মৃতিসৌধের নাম বদলে গিয়ে হয়ে যেতে পারে নেতাজি সুভাষ স্মৃতি সৌধ। এমন এক পরি কল্পনার কথা মাথায় আছে কেন্দ্রের।এমনও হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৩ জানুয়ারি নেতাজি জন্ম শতবর্ষ পালনের সময় এমন ঘোষণা করে দিতে পারেন। এমন খবর কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে পিএমও চারপাশে। ভোট বড় বালাই। হটাৎ নেতাজি প্রেমের কারণ কেবল ভোটের আগে বাঙালি সেন্টিমেন্ট। তবে শতাব্দী প্রাচীন এই হেরিটেজের নাম রাতারাতি বদলানো নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে। নেতাজির নামে হওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বাঙালির, কিন্তু ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এর সঙ্গে সুভাষ বসুর কি সম্পর্ক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কয়েকমাস আগেই যেখানে নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বন্দরের নাম বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামে করা হল, সেখানে ভিক্টরিয়া নেতাজি মেমোরিয়াল হওয়াটা রাজনীতি স্টান্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। এই সৌধের চৌহদ্দিতে যে বিপুল শিল্প ও স্থাপত্যর নিদর্শন আছে তা সরিয়ে ফেললে ভিক্টরিয়ার গুরুত্ব শেষ হয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এভাবে হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন ছাড়া সব বদলানো যায় কিনা তাও প্রশ্ন উঠছে।
১৯২১ সালে তৈরি এই মহান স্থাপত্যের কারিগর স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং স্যার এমার্সন। কলকাতার ফুসফুস সম সবুজ প্রান্তর গড়ের মাঠ এর বুকে ধপধপে সাদা মার্বেলের এই অনুপম স্থাপত্য শৈলী, সৌধের সর্বোচ্চ উচ্চতায় ঘূর্ণায়মান সাদা পরীর কল্পলোক, সব মিলিয়ে ভিক্টরিযাকে বাঙালি কখনও ব্রিটিশ ভাবেনি, বরং বাঙালির নস্টালজিয়ায় এই ব্রিটিশ স্থাপত্য অনেক বেশি বাঙালির কাছের। নেতাজির সঙ্গে ভিক্টরিয়ার স্মৃতি সৌধের কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে স্থাপত্য, শিল্প, দুর্দান্ত ঐতিহাসিক উপাদানের। নেতাজিকে সন্মান জানানোর অনেক উপায় ছিল, আছে। আরএসএস এর পরিকল্পনা ছিল ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এর নাম বদলে হোক বীর সাভারকর মেমোরিয়াল। ঠিক যেমন মুঘল সরাইযের নাম বদলে হল দীন দয়াল উপাধ্যায় জংশন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে ২০১৮ সালেই প্রস্তাব জমা পরে। তবে সে প্রস্তাব কাজে লাগার আগেই ঢুকে পড়ল নেতাজি সুভাষচন্দ্রর আবেগ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে ভোটের আগেই বাঙালি আবেগ উস্কে দিতে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালের নাম নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মেমোরিয়াল নামকরণ করতে চলেছেন। নেতাজির আদর্শের সম্পুর্ন বিপরীতে হাঁটা এই আরএসএস ও ভাজপা ক্ষমতায় এসেই জাতীয় স্তরের সব পাঠ্যক্রম থেকে ছেঁটে ফেলেছিল নেতাজিকে। পাঠ্যে সেখানে আজাদ হিন্দ ফৌজের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সভারকরের অখন্ড ভারত। হেরিটেজ সৌধের নাম বদলে তা সম্ভব নয়। জনসংঘ আদর্শগত ভাবে নেতাজির আদর্শের বিরুদ্ধে। ঢিল ছোড়া দূরত্বে এলগিন রোডের নেতাজি ভবনকে ব্রাত্য রেখে ভিক্টরিয়াকে পাকড়ানো ভাজপার নতুন নাটক। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here