তথাগতর রিপোর্ট পেশ –
ভাজপার হারের ৪ কারণ, ভাজপা নেতৃত্বে এবার আসল পরিবর্তন

0

Last Updated on June 18, 2021 12:58 AM by Khabar365Din

১। হিন্দিভাষী ৩ নেতার পরিকল্পনায় বহিরাগত হিন্দিভাষী বক্তরাই ছিলেন বাংলার মুখ। তারা না জানেন বাংলা, না জানেন বাংলার শিক্ষা,সংস্কৃতি ঐতিহ্য। মানুষ এদের গ্রহণ করেননি।

২। তৃণমূল ভাঙিয়ে নিজেদের বড় দেখানাের ফর্মুলা সুপারফ্লপ করেছে। মানুষ এইসব ‘ট্রোজান হর্স’ দের বিশ্বাসই করেনি।

৩। সংগঠনে গুরুত্ব না দিয়ে হিন্দিভাষী বহিরাগত নেতারা বেচাকেনায় বেশি ব্যস্ত ছিলেন। আর বেচাকেনা মানেই চরম দুর্নীতি। পার্টি তৈরি হয়নি, বাজার বসানোে হয়েছিল।

৪৷ কিচ্ছু মেরুদন্ডহীন, অশিক্ষিত, রুচিহীন গায়কনায়ককে মােটা টাকার বিনিময়ে জননেতা বানানাের চেষ্টা হয়েছিল। বাংলার মানুষ ব্যর্থ করে দিয়েছে৷


৩৬৫ দিন।

এবার আসল পরিবর্তন। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই স্লোগান তুলে মমতার বিরুদ্ধে প্রচার করলেও সরকার পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু ভোটের সময় একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং দলীয় কোন্দলের জেরে এবারে বাংলার ভাজপা সাংগঠনিক স্তরে বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। অন্তত প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বিস্ফোরক রিপোর্ট ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়ার পরে এমন সম্ভাবনাই তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভাজপা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে তথাগত রায় যে বিস্তারিত রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় সাংগঠনিক রদবদল করে বাংলায় পরাজয় পিছনে থাকার মূল কারণ গুলি সংশোধন করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গিয়েছে।
তথাগত রিপোর্টে প্রধান যে চারটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে তা হলো,
বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন জেতার জন্য ভাজপা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভরসাযোগ্য মনে করেছিল ভিন রাজ্য থেকে আসা আরো স্পষ্ঠ করে বলতে গেলে গোবলয়ের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি থেকে আসা ভাজপা নেতাদের উপরে। যারা বাংলার সংস্কৃতি জানেন না, যারা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিবেকানন্দের ঐতিহ্য জানেন না – তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল বাংলা বিজয়ের দায়িত্বভার। স্বাভাবিকভাবেই বাংলা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এই সমস্ত হিন্দিভাষী ভাজপা নেতারা কখনো বাংলার মনীষীদের নিয়ে ভুলভাল মন্তব্য করে লোক হাসিয়ে নিজেদের জোকার এ পরিণত করার পাশাপাশি ভাজপা সম্পর্কে বাংলার মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলার জন্য বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রসঙ্গত তথাকথিত গোপন রিপোর্টে না হলেও কয়েকদিন আগেই ভাজপা নেতা সব্যসাচী দত্ত সংবাদমাধ্যমের সামনে ঠিক একইভাবে বাংলায় পরাজয়ের জন্য হিন্দিভাষী নেতাদের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
দ্বিতীয়ত, যেভাবে বিধানসভা নির্বাচনে ঠিক আগে জেলায় জেলায়, পাড়ায়-পাড়ায়, কোথাও যোগদান মেলা, কোথাও মহা যোগদান মেলা আয়োজন করে
তৃণমূল থেকে হরে ধরে নেতা-নেত্রীদের ভাঙিয়ে ভাজপা শিবিরে শামিল করানোর যে হিড়িক পড়েছিল, তা ভালো ভাবে মেনে নেয়নি বাংলার মানুষ। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে যে সমস্ত নেতা-নেত্রীদের নেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অধিকাংশই ট্রোজান হর্স বা ভাজপাতে এসে তৃণমূলের হয়ে অন্তর্ঘাত করেছেন। অথচ বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন এবং শিবপ্রকাশ ভোটে জেতার জন্য এই দল ভাঙানোর নীতি সেরা বলে প্রচার করেছিলেন।
তৃতীয়ত, রাতারাতি বেশকিছু গায়ক, নায়ক এবং নায়িকাকে দলের প্রচারের মুখ করে তোলার পাশাপাশি এদের অনেককেই ভোটে লড়ার টিকিট দেওয়া হয়। যারা কোনদিন রাজনৈতিক শিক্ষা পাননি, যাদের কোন আদর্শ নেই, যাদের মেরুদন্ড অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয় – এই ধরনের কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটিকে রাতারাতি খাতির করে নিয়ে আসা বাংলায় ভরাডুবির আরেকটা বড় কারন।
পাশাপাশি আরও যে কারণ তুলে ধরেছেন, বাংলায় সংগঠন শক্তিশালী করার দায়িত্বে যে নেতারা ছিলেন তারা সংগঠন সাজানোর পরিবর্তে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিলেন। যার ফলে একদিকে যেমন দলের প্রকৃত সাংগঠনিক নেতা ও কর্মীদের অবহেলা করা হয়েছে, ঠিক তেমনভাবে ভাজপা টার্গেট ভোটব্যাঙ্ক অর্থাৎ বাংলার হিন্দু বাঙ্গালি ভোটারদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি ভাজপা। শুধু তাই নয় কলকাতা, হাওড়ার মত যে এলাকাগুলিতে প্রচুর সংখ্যক অবাঙালি হিন্দিভাষী ভোটার রয়েছেন তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে অসমর্থ হয়নি আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা বাংলার সাংগঠনিক নেতারা।
সম্প্রতি তথাগত রায় সংবাদমাধ্যমেও বলেন, বাংলায় বিজেপির দৈন্যদশা নিয়ে আমি ভাবনা-চিন্তা করেছি। কেন রাজ্য বিজেপির এই অবস্থা হয়েছে? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সেই প্রসঙ্গে একটা রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দিয়েছি। এই রিপোর্টের একটা অংশ টুইটে বলেছি। বাকিটা রিপোর্টে রয়েছে। রিপোর্টে সব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা রয়েছে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। পরে আমি যা মনে হবে করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here