Last Updated on August 25, 2023 8:16 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে নবাগত ছাত্র-ছাত্রীরা হোস্টেলের সুযোগ পাবে কিনা অথবা সুযোগ পেলে কোন হোস্টেলে থাকবে – তার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতারাই। প্রসঙ্গত যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের যে ছাত্র রেগিংয়ের কারণে খুন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে, সেই ছাত্রকেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলে রাখার অনুমতি দিয়েছিল এই নেতারাই। অর্থাৎ যাদবপুরের ছাত্র হত্যার পিছনে সেখানকার মার্কসবাদীরাই দায়ী বলে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন তা ১০০ শতাংশ সঠিক। যাদবপুরের এসএফআই নেতারা অথবা আলিমুদ্দিনে বসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মোঃ সেলিম যতই ছাত্র খুনের রক্ত নিজেদের হাত থেকে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করুন না কেন, মুছে ফেলতে পারেননি খুনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তথ্য প্রমান। গোয়েন্দাদের হাতে ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেফাই ইউনিয়নের সেই সমস্ত নেতাদের নাম যারা ছাত্র হত্যার ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছে।
দীর্ঘকাল ধরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পেরনোর মুহূর্ত থেকেই নবাগত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের খপ্পরে। তবে রীতিমত সংগঠনিকভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলিমুদ্দিনের নির্দেশে যাদবপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুজন চক্রবর্তীর তৈরি করে দেওয়া ব্লু প্রিন্ট অনুযায়ী বিশাল একটা চক্র তৈরি করে ফেলেছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। রীতিমতো হেল্প ডেস্ক তৈরি করে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তৈরি হতো আলাদা ডেটাবেস। এসএফআইয়ের নেতা দাদা দিদিদের কাছে নাম লেখানোর পরেই। এবং অবশ্যই তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলে মিলতো ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণের সুযোগ। তাদের কথা না মানলেই পরিণতি হত যাদবপুরের নিহত ছাত্রের মতো।
চলতি বছরেও দীর্ঘকালের রীতি মেনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্রাজুয়েট আর্টস ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেকটি সাবজেক্ট অনুযায়ী আলাদা আলাদা হেল্প ডেস্ক তৈরি করেছিল এসএফআই। শুধু আজ ডিপার্টমেন্ট বলেই নয় সাইন্স ডিপার্টমেন্টে সিপিএমের ক্ষমতা কিছুটা কম থাকলেও দীর্ঘকালীন আধিপত্য বজায় রাখতে সেখানেও হেল্প ডেস্ক খুলেছিল তারা। তবে নিহত ছাত্র যেহেতু প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল সেই কারণে তাকেও হস্টেল পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক বিভাগের তরফে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত চলতি সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিত্রর মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে কারা থাকবে এবং কারা কারা সুযোগ পাবে সেই বিষয়টি কিভাবে নির্ধারিত হয়। সঠিকভাবে কোন উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে দেওয়া না হলেও এটি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হোস্টেলের আবাসিকদের থাকার বিষয়টি দেখে না। সেই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের মর্জির উপরে নির্ভরশীল। তারপরেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রয়োজনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখার বিষয় উত্থাপন করেন।
অর্থাৎ কোন অজ্ঞাত কারণে বা সিপিএম পন্থী অধ্যাপক সংগঠন জুটার নিয়ন্ত্রণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘকাল ধরে থাকার সুবাদে ছাত্র নেতাদের পকেট মানি জোগাড়ের পাশাপাশি পার্টি ফান্ডে নিয়মিত টাকা আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ভবিষ্যতের ক্যাডার জোগাড়ের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের আবাসিক আসন বিক্রির যাবতীয় ক্ষমতা এই নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র ছাত্র নেতাদের ভরসাতে নয় রীতিমতো আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নজরদারিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এসএফআই লোকাল কমিটি নিয়মিত সমস্ত কিছুর উপরে নজরদারির রাখত। কারণ এখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার যোগান ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এসএফআই লোকাল কমিটি এবং সিপিএমের যাদবপুর জোনাল কমিটির বলেই জানা গিয়েছে পার্টি সূত্রে।